ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

খাবার কিনতে যাচ্ছি বলে ফিরল শুভর নিথর দেহ
প্রকাশ: রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪, ৭:৩০ এএম  (ভিজিট : ২২০)
ছেলে চাকরি করত, তার ওপর আমরা নির্ভর ছিলাম। আমি চাইনি এমন দিন আসুক। এখন বউমা আর এই শিশুসন্তানের দায়িত্ব নেবে সরকার? সব দায়িত্ব ওর মাথায় ছিল। এখন আর কিছু বলার নেই। এত কষ্ট করে ছেলে মানুষ করার পর, সেই ছেলে আমি বলি দিয়ে আসলাম। ছেলে হত্যার বিচার আল্লাহর কাছে দিয়েছি। ঘটনা শোনার পর আমি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছি। আমি কিছুই চাই না, সরকার যেন মাসুম বাচ্চাটা আর বউমার জন্য কিছু করে। শুক্রবার দুপুরে আমার সঙ্গে শেষকথা হয় মোবাইল ফোনে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন ঢাকায় গুলিতে নিহত শাহরিয়ার শুভর মা চম্পা খাতুন। শাহরিয়ার শুভ (২৬) চাকরির সূত্রে দীর্ঘদিন বসবাস করছেন ঢাকায়। স্ত্রী আর একমাত্র শিশুসন্তান নিয়ে সুখেই ছিলেন। ঢাকাতে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিভে গেছে একটি প্রাণ। শোকে পাথর পরিবারের সব সদস্য। শিশুসন্তান অপলক দৃষ্টিতে বারবার তার বাবাকে খুঁজছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় এ দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। 

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শঙ্করচন্দ্র গ্রামের মণ্ডলপাড়ার আবু সাঈদের দ্বিতীয় সন্তান শাহরিয়ার শুভ। তিনি এসএসসি পাস করার পর যশোরে বিসিএমসি পলিটেকনিক থেকে ইলেকট্রিক্যালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে চাকরির জন্য ঢাকায় চলে যান। সেই থেকে তিনি ঢাকায় বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করছেন। তিন বছর ধরে তিনি কোহিনূর লিফট কোম্পানিতে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঢাকার মিরপুর এলাকার বসির উদ্দিন স্কুল অ্যঅন্ড কলেজের সামনে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলন চলমান ছিল। আন্দোলন ঘিরে জন্ম নেয় সহিংসতার। ১২ জুলাই শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে শিশুসন্তানের জন্য খাবার কিনতে বাসাবাড়ি থেকে বের হন শাহরিয়ার শুভ। বাসা থেকে রেব হওয়ার পর মিরপুর ২-১০ নম্বরের মাঝামাঝি এলাকায় পৌঁছান। এ সময় তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে আগারগাঁও নিওরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ জুলাই মঙ্গলবার রাতে মারা যান। রাতেই তার মরদেহ চুয়াডাঙ্গায় গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হয়। গ্রামের কবরস্থানে বুধবার সকালে তার মরদেহ দাফন করা হয়।

মা-বাবা, স্ত্রী, ভাইবোন, আত্মীয়স্বাজনসহ গ্রামবাসী শাহরিয়ার শুভকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ। তিন ভাই আর এক বোনের মধ্য তিনি ছিলেন মেজ। ৬ বছর আগে মাগুরা জেলার আড়পাড়া এলাকার রিজিয়া সুলতানার সঙ্গে ৬ বছর আগে বিয়ে হয়। শুভ-রিজিয়ার সংসারে ৭ মাস বয়সের মোস্তাফিজ নামে এক সন্তান রয়েছে।
নিহত শাহরিয়ার শুভর স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা বলেন, বলার মতো কোনো ভাষা নেই। অসহায় অবস্থায় পড়ে গেছে। এতটুকু ছেলে নিয়ে কী করব। স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিল। এক ঝড়েই সব তছনছ হয়ে গেছে। কোন দিকে যাব, কী করব কিছুই জানি না। বাচ্চা নিয়ে কী করব তাও জানি না। সরকার চাকরির ব্যবস্থা করলে সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকতে পারব। সন্তান মানুষের মতো সুন্দর পরিবেশ দরকার, এখন সব হারিয়েছি। ঘটনার আগে যখন বাসা থেকে বের হয় তখন বলে যায়, তোমাদের জন্য খাবার কিনতে যাচ্ছি। বলে গিয়েছিল আধা ঘণ্টা পর বাসায় ফিরে আসব। কিন্তু ফিরে এলো নিথর হয়ে। আমাকে বিধবা করে চলে গেল, সন্তান হলো এতিম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা পেলে শতকষ্টের মাঝে শিশুসন্তান নিয়ে বেঁচে থাকতে পারব। আর একমাত্র সন্তানকে মানুষ করতে পারব। আমার মতো কোনো মেয়েকে যেন এমন ঘটনার শিকার না হতে হয়।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close