ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

‘আমি আল্লাহর কাছে বিচার চাই’
প্রকাশ: রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪, ৩:৫৭ এএম  (ভিজিট : ৮০৪)
‘দুনিয়ায় কারও কাছে বিচার চাই না। আমি আল্লাহর কাছে বিচার চাই।’ কথাগুলো বললেন কোটাবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত একমাত্র সন্তান রিদওয়ান হোসেন সাগরের বাবা ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান। বললেন, ‘ছেলের রক্তের বিনিময়ে দেশে শান্তি বিরাজ করুক।’ সাগরের বাবা শোকে পাথর হয়ে গেছেন। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। কাঁদতেও পারেন না। যেন কিছুই হয়নি। তিনি বলেন, ‘সব বাবা-মা সন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন। ভালো চাকরি করবে। ভালোভাবে জীবনযাপন করবে। কিন্তু সবকিছুই তো এলোমেলো হয়ে গেল।’ তিনি বলেন, মামলা করে কী হবে! মামলা করলে কী ছেলেকে দেখতে পাব! আমি দুনিয়ার আদালতে ছেলে হত্যার বিচার চাইব না। তাই মামলা করিনি। পবিত্র জুমার দিনে আল্লাহর ইচ্ছায় আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে। আমি আল্লাহর কাছেই বিচার চাই।

ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রিদওয়ান হোসেন সাগর (২৪) বাংলাদেশ আওয়ামী বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি লীগ ময়মনসিংহ মহানগর শাখার অন্তর্গত ৬ নং ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্নাতক তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষে চতুর্থ বর্ষে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সাগর হিসাববিজ্ঞানের ছাত্র হলেও তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষতা থাকায় লেখাপড়ার পাশাপাশি নগরীর এম এম কম্পিউটারে খণ্ডকালীন চাকরি করতেন। সাগরের বাবা বললেন, ‘ও তো (সাগর) খুবই নম্রভদ্র স্বভাবের ছিল। কারও সঙ্গে বেয়াদবি করেনি। কারও দিকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলেনি। তার এমন মৃত্যুতে কষ্ট পাই, দুঃখ করি না।’ ‘সাগর হিসাব বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করলেও আইটিতে তার খুব দক্ষতা ছিল। ছেলেটা এভাবে চলে যাবে বুঝতে পারিনি। এক বছর আগে নতুন বাড়ি বানিয়েছি। যার জন্য বাড়ি করেছি সে-ই তো আজ নেই। মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে দিলে কে থাকবে এ বাসায়!’ ক্ষীণস্বরে আনমনে কথাগুলো বললেন সাগরের হতভাগ্য বাবা।

গত ১৯ জুলাই ময়মনসিংহ নগরীতে কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমর্থক ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। মিন্টু কলেজ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন সাগর। সংঘর্ষে চারজন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ৩৫ জন আহত হন। ওইদিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. জাকিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সাগরের শরীরে বুলেটের আঘাত ছিল। তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। সাগরের বাবা জানান, সাগরের বুকের বাম পাজরে একটি ছিদ্র ছিল। আর ডান দিকের নিচে পেটে বড় গর্ত ছিল। তার ধারণা এটা গুলির আঘাতেই হয়েছে। 

সাগর ও আফিয়া ভাইবোন। ছোট বোন আফিয়া তাবাসসুম সরকারি আনন্দ মোহন কলেজে ম্যানেজমেন্ট অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের মা রহিমা খাতুন গত আট বছর ধরে ক্যানসারে ভুগছেন। মৃত্যুপথযাত্রী সেই মা ছেলের মৃত্যুতে এখন বাকরুদ্ধ। গত রোববার চেকআপ করতে যাওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার ছেলের মৃত্যুতে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া হয়নি। গতকাল শনিবার শারীরিক অবস্থা কিছুটা খারাপ হলে চেকআপ করতে নিয়ে যান স্বজনরা। ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর দুপুরের খাবার খেয়ে সাগর মাকে বলে যান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছেন। বিকালে সাগরের বাবা এক বন্ধুকে নিয়ে সাহেব কোয়ার্টার পার্কে যান। সন্ধ্যার পর প্রতিবেশী এক ছেলে সাগরের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর দেন। বাসা থেকে ফোন করে তাকে দ্রুত বাসায় আসতে বললে তিনি (সাগরের বাবা) জানতে চান, কী হয়েছে। বলা হয়, সাগর গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close