ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ড্রেজারের থাবায় স্রোতহীন নদীতেও থামে না ভাঙন
প্রকাশ: রবিবার, ২৮ জুলাই, ২০২৪, ২:৩৮ এএম  (ভিজিট : ১৮৮)
বংশী নদীর পানকাত্তা অংশ। নদীতে স্রোত নেই, পানির গতিও স্বল্প। তবুও পাড় ভাঙছে। শামসুল ইসলাম নামে এক কৃষক এই নদীতে হারিয়েছেন তার ২০ শতাংশ চাষের জমি। কিন্তু কেন শান্ত এই নদীতে পাড় ভাঙন? সরেজমিন কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, নদীতে বসেছে তিনটি ড্রেজার। বছরজুড়ে এখানে নির্জন এলাকায় অবৈধভাবে চলে খনন। আর এর প্রভাবে নিয়মিত ভাঙছে নদীর পাড়।

শুধু পানকাত্তা নয়, ঢাকার ধামরাইয়ের বিভিন্ন ইউনিয়নে বংশী নদীর একাধিক পয়েন্টে এভাবেই লোকচক্ষুর অন্তরালে ড্রেজার দিয়ে চলে নদী খনন। অবৈধ এই খননে ক্ষতিগ্রস্ত নদীর আশপাশের জমির মালিকরা। তথ্য বলছে, রাজনৈতিক যোগসাজশে ও গোপনে এসব ড্রেজার পরিচালনা করা হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের নিয়মিত নজরদারির অভাব ও শাস্তির অভাবে এই অবৈধ ব্যবসা ঠেকানো যাচ্ছে না। যদিও প্রশাসন বলছে, নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ধামরাইজুড়ে বাড়ি নির্মাণ, নিচু জমি ভরাটসহ বিভিন্ন কারণে বালুর চাহিদা রয়েছে। আর এই চাহিদার একটি বড় অংশ পূরণ করা হয় নদী খনন করে অবৈধভাবে তোলা বালু থেকে। কোথাও কোথাও ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে স্তূপ করে রাখা হয়। সেখান থেকে ট্রাকে বিক্রি করা হয় বালু। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলাজুড়ে পরিচালিত ড্রেজারগুলো পরিচালনার সঙ্গে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জড়িত রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা।

স্থানীয় পর্যায়ে গত ছয় মাসে কতগুলো ড্রেজার পরিচালনা করা হয়েছে এমন তথ্যের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চৌহাট ইউনিয়নের পাড়াগ্রাম মোড়ে একটি, ভাকুলিয়ায় একটি, চৌহাট ব্রিজের নিচে একটি, বালিয়া হাইস্কুলের পেছনে তিনটি, যাদবপুর ইউনিয়নের টেটাইল এলাকায় দুটি, বাস্তা ব্রিজের নিচে দুটি, আমছিমুর এলাকায় দুটি, নরসিংহপুর কুশুরা ব্রিজের পাশে একটি, পানকাত্তায় তিনটি, কুশুরা নবযুগ কলেজের পাশে একটি, যাদবপুর ইউনিয়নের আমরাইল এলাকায় অন্তত দুটি ড্রেজার পরিচালনা করা হয়েছে। তবে বন্যার মৌসুম চলে আসায় বেশিরভাগ ড্রেজারই বর্তমানে বন্ধ। যদিও চৌহাট ইউনিয়নের পাড়াগ্রাম মোড়ে একটি, ভাকুলিয়া ও কুশুরা ইউনিয়নের পানকাত্তায় তিনটি ড্রেজার এখনও চলমান বলে জানা যায়।

সরেজমিন পানকাত্তায় গিয়ে দেখা যায়, আশপাশের কয়েকটি জমির অংশ বিলীন হয়েছে নদীতে। নদীর পাশে একটি বহুতল ভবনও রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক সামসুল হক জানান, আমার ২০ শতাংশ জমি এর মধ্যে নদীতে চলে গেছে। আশপাশের আরও জমি ভাঙছে। হাবিব মেম্বার ড্রেজার চালাচ্ছে। আগে অন্য একজন চালাত। অভিযোগ দেওয়ার পর সেটি বন্ধ হয়। এখন আবার মেম্বার চালাচ্ছে। এতে আমার কলাক্ষেত, লেবুক্ষেত ভেঙেছে। মেম্বারকে বলেছি তবে সে সরায়নি।

চৌহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পারভীন হাসান প্রীতি বলেন, ড্রেজার পরিচালনা করার খবর পেলে গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভাকুলিয়ার ড্রেজারও বন্ধ করতে বলা হয়েছে। ড্রেজারে ক্ষতি হয় বলে আমরা এটি পরিচালনা করতে দেই না।

গেল ছয় মাসে ঠিক কতগুলো ড্রেজারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে ও কী ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন। এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যের জন্য জেলা প্রশাসনে যোগাযোগের পরামর্শ ও লিখিতভাবে তথ্য চাওয়ার পরামর্শ দেয় তারা।

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খান মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ড্রেজারের বিষয়ে আমরা কঠোর। এই বিষয়ে কোনো তথ্য কিংবা অভিযোগ পাওয়া গেলে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

ঢাকা জেলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও জেলা নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য সচিব মো. শিবলী সাদিক বলেন, এখানে কোনো বালু মহাল নেই। ফলে ড্রেজিং করার কোনো সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্ট ইউএনওকে জানানো হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, এভাবে ড্রেজিং করা হলে নদীর পাড় ভেঙে পড়বে। ভূমি ক্ষয় হবে। যার প্রভাব সামগ্রিকভাবে পরিবেশের ওপর পড়ে। পরিবেশ রক্ষায় তাই প্রশাসন আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ন ম ফখরুদ্দিন বলেন, কোনটি ড্রেজিংয়ের উপযোগী, কোনটি অনুপযোগী সেটি পরীক্ষা না করে বালু উত্তোলন করা হলে সেটি নদীর জন্য ক্ষতিকর। আর সেই ক্ষতির শিকার অনেকেই হতে পারেন। ইদানীং বালু বিক্রি ও ইটভাটায় নেওয়ার জন্য যে ড্রেজিং করা হচ্ছে সেটি নেতিবাচক। এ জন্য বিআইডব্লিউটিএসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে অবশ্যই তৎপর হতে হবে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close