ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

‘আমার বেটা আর নাইরে, এখন কিডা চালাবিনি আমাদের সংসার’
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই, ২০২৪, ৭:৫৪ পিএম  (ভিজিট : ৩২০)
মায়ের পাশেই বিছানার ওপর খেলছেন দেড় বছর বয়সী একমাত্র সন্তান মাহিম। ইনসেটে নিহত আব্দুস সালাম। ছবি: কোলাজ

মায়ের পাশেই বিছানার ওপর খেলছেন দেড় বছর বয়সী একমাত্র সন্তান মাহিম। ইনসেটে নিহত আব্দুস সালাম। ছবি: কোলাজ

মায়ের আহাজারি আড়াই মাস আগে ওর বাবা মরে গেছে। আমার বেটার টাকায় চলত বড় ছেলের পড়াশোনাসহ চার জনের সংসার। আমার বেটা আর নাইরে। এখন কিডা চালাবিনি আমাদের সংসার। বুধবার (২৪ জুলাই) রাত্রিতে বিলাপ করতে করতে কাঁন্নাজড়িত ভাঙা কণ্ঠে কথা গুলো বলছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ নারী বুলজান খাতুন। তিনি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চর ভবানীপুর গ্রামের মৃত সাবের আলীর স্ত্রী।

তার ছোট ছেলে আব্দুস সালাম (২৪) নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় একটি দশতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ডাচ বাংলা ব্যাংকের একটি শাখায় সাজসজ্জার কাজ করছিলেন। কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন সময়ে গত শনিবার (২০ জুলাই) বিকেলে ওই ভবনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে পুড়ে ঘটনাস্থলে মারা যান তিনি। ঘটনার চারদিন পর গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়িতে আনা হয় তার লাশ। রাতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। তার পরিবারে স্ত্রী মারিয়া খাতুন (২০) দেড় বছর বয়সী সন্তান মাহিম, বড় ভাই আলামিন (২৫) ও মা বুলজান খাতুন। আলামিন রাজবাড়ী জেলার পাংশা সরকারি কলেজের অনার্স বাংলা তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এ তথ্য জানিয়েছেন স্বজনরা।

বুলজান খাতুনের দাবি, সরকার তার ছেলে হত্যার সঠিক বিচার করুক। পাশাপাশি যোগ্যতা অনুযায়ী বড় ছেলের চাকরিসহ ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবি জানাই বুলজান খাতুন।  

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টিনশেডে আধাপাকা ঘরের একটি সালামের মাকে ঘিরে বসে আছেন স্বজন ও উৎসুক জনতা। তার মা বিলাপ করছেন। আরেকটি কক্ষে শুয়ে আছেন শোকে মাতম স্ত্রী মারিয়া খাতুন। তিনি অসুস্থ। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। পাশেই বিছানার ওপর খেলা করছেন প্রায় দেড় বছর বয়সী একমাত্র সন্তান মাহিম। সে জানেনা যে, তার বাবা আর এই পৃথিবীতে নেই।

এসময় সালামের শাশুড়ি শিল্পী খাতুন জানান, জামাইয়ের শোকে অসুস্থ মেয়ে। নাতি জানেনা যে তার বাবা আর নেই। এখন কে দেখবে ওদের। এনিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভাই আলামিন বলেন। শনিবার বিকেলে হঠাৎ ফোন দিয়ে সালাম আমাকে বলল ভবনে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। ধোঁয়ায় কিছু দেখা যাচ্ছেনা। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমি (সালাম) মনে হয় আর বাঁচবনানে। তুই আমার স্ত্রী, সন্তান ও মাকে দেখে রাখিস। এরপর ফোন বন্ধ হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও আর ওর সন্ধান পাইনি। পরে গত রোববার জানা যায় ভাই আর নেই।

" align=


তিনি আরও বলেন, ভাইয়ের টাকায় চলতো আমার পড়াশোনাসহ সংসারের যাবতীয় খরচ। এখন কিভাবে কি করব তা বুঝতে পারছিনা। আমি ঘাতকদের বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানায়। 

জানা গেছে, সেদিন ডাচ বাংলা ব্যাংকে সাজসজ্জাকরণের কাজ করছিলেন একই গ্রামের ওহাব মন্ডলের ছেলে সেলিম মন্ডল (২৮), তার ভাতিজা ওয়াজেদ আলীর ছেলে মো. ফয়সাল মন্ডল (১৮), মো. কাদেরের ছেলে মো. পারভেজ, আবুল মাস্টারের ছেলে আব্দুল হামিদ ও আক্কাস বিশ্বাসের ছেলে মাহবুব বিশ্বাস। দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে সেদিন তাদের মধ্যে নিহত হয়েছেন সেলিম মন্ডল। তার লাশও গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আনা হয়েছে গ্রামে। রাতে একই কবরস্থানে মরদেহটি দাফন করা হয়। আর অন্যান্যরা আহত হয়েছেন আগুনে পুড়ে। 

আহতদের মধ্যে হামিদ ঢাকায় একটি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আর ফয়সাল, পারভেজ ও মাহবুব বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আহত ফয়সাল মন্ডল বলেন, তারা ১৪ জন ব্যাংকে কাজ করছিলেন। সেদিন দুপুরেই ভবনের বাইরে থেকে শুধু গুলির আওয়াজ আসছিল। পুলিশের গুলিতে একজন ছাত্র মারা গেছিল। আর বিকেলে ব্যাংকের গেটে আগুন দিয়েছিল আন্দোলনকারী। আগুনের কারণে প্রচুর ধোঁয়া ছিল। অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছিল না। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। তখন আমার কাকুরা, সেলিম, সালাম, তিনতলায় চলে গেছিল। আর অনেকক্ষণ প্রাণপণ চেষ্টা করে আমরা কয়েকজন নিচে চলে আসছিলাম।

তিনি আরও বলেন, আগুনে আমার দুই পা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। 

নিহত সেলিম মন্ডলের স্ত্রী শোভা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, শনিবার বিকেলে ফোনে শেষ কথা হয়েছিল। ফোনে বারবার বলছিল প্রচুর ধোঁয়া। নিশ্বাস নেওয়া যাচ্ছেনা। হয়তো আর বাঁচবা না। বাবা, মা, মেয়েকে দেখে রাখিস। তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের দেখবে কে? তিন বছরের মেয়ে হুমাইরাকে নিয়ে কোথায় যাব? তিনি স্বামী হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মিকাইল ইসলাম জানান, এখন পর্যন্ত কুমারখালী বাড়ি এমন একজন ছাত্রসহ ৪ জন মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পরিবার থেকে লিখিত আবেদন করলে সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ আসলে তা প্রদান করা হবে।

সময়ের আলো/আরআই



আরও সংবাদ   বিষয়:  কোটা আন্দোলন   আগুনে পুড়ে মৃত্যু   কুষ্টিয়া   




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close