ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

পালিয়ে যাওয়া কয়েদিদের লোমহর্ষক বর্ণনা
‘না পালালে প্রাণে মরতে হতো’
প্রকাশ: বুধবার, ২৪ জুলাই, ২০২৪, ৪:২০ পিএম  (ভিজিট : ২০৬)
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে তাণ্ডব চালানো হয় নরসিংদী জেলা কারাগারে। গত শুক্রবার কারাগার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বের হয়ে যায় ৮২৬ কয়েদি। এ ছাড়াও লুট করা হয় অস্ত্রাগার। তবে প্রশাসনের নির্দেশে এরই মধ্যে আত্মসমর্পণ করেছে পালিয়ে যাওয়া বেশ কিছু কয়েদি। তবে জঙ্গিসহ দাগি আসামিরা এখনও প্রশাসনের ডাকে সাড়া দেয়নি। আত্মসমর্পণ করা কয়েদিদের সঙ্গে কথা বললে বেরিয়ে আসে লোমহর্ষক নানা তথ্য। তাদের কণ্ঠে ফুটে ওঠে সেদিনের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির বর্ণনা। 

বেশিরভাগ কয়েদিদের দাবি, তারা বাধ্য হয়ে কারাগার থেকে পালিয়েছে। বরং সেখানে থাকলে প্রাণে মরতে হতো। নরসিংদী জেলা দায়রা জজ আদালত সূত্রে জানা যায়, আদালতে মঙ্গলবার ১০৭ জন কয়েদি ও হাজতি আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেছে। এর মধ্যে ২ জন নারী। বাকি সবাই পুরুষ বলে জানিয়েছেন নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম। পরে আত্মসমর্পণ করা এসব আসামিদের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

আদালতে গিয়ে কথা হয় কয়েকজন কয়েদির সঙ্গে। তাদের মুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ। সেদিনের ঘটনা মনে হলে তাদের গা শিউরে ওঠে বারবার। এমনই জানিয়েছেন তারা।

রায়পুরা উপজেলার মাদক মামলার আসামি সুরুজ মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কারাগারের ভেতরে কাঁদানে গ্যাস মারে কে বা কারা। এতে আমাদের সবার চোখ ঝলসে যায়। পরে কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের চোখে পানি দিয়ে সুস্থ করে তোলেন। ঠিক তার এক দিন পর শুক্রবার বিকালে জেলে আগুনসহ হামলা করে দুর্বৃত্তরা। আমি জেল থেকে পালাতে চাইনি। আমাকে মেরে জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমি ২৩ দিন ধরে কারাগারে ছিলাম। রোববার জামিন হওয়ার কথা ছিল।

এদিকে আরেক হত্যা মামলার আসামি মাধবদী আলগী এলাকার ইব্রাহিম বলেন, ওইদিন যে পরিস্থিতি ছিল, ভেতরে থেকে বের না হলে আমাদের মেরে ফেলত। আরেক হত্যা মামলার আসামি শিবপুর উপজেলার বেলায়েত মোল্লা বলেন, জীবন বাঁচাতে ছাদের ওপর যাই। সেখানেও আমাকে মেরে বের করে দেওয়ায় বাইরে অবস্থান করছিলাম। কিন্তু ভেতরে কোনো থাকার পরিবেশ না থাকায় বাড়িতে চলে যাই।

এ বিষয়ে নরসিংদী জেলা আইনজীবী সমিতির কাজী নাজমুল ইসলাম বলেন, সবাই নিজের ইচ্ছায় আদালতে আত্মসমর্পণ করতে এসেছে। সরকার যেন তাদের বিষয়ে সুবিবেচনা করেন সে অনুরোধ করছি। এ বিষয়ে নরসিংদী জেলা প্রশাসক ড. বদিউল আলম জানান, জেল থেকে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সোমবার থেকে পলাতক আসামিদের আত্মসমর্পণ করতে জেলাজুড়ে মাইকিং করছে জেলা প্রশাসন। মাইকিং শুনে তারা আত্মসমর্পণ করেছেন।

এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মঙ্গলবার নরসিংদী জেলা কারাগার ও লুট হওয়া অস্ত্রাগার পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, নরসিংদীর জেলখানাসহ সারা দেশে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতাবিরোধীরাই ঘটিয়েছে। দেশে চিরুনি তল্লাশি চলছে, যারাই এ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। জনগণের কিছু ভোগান্তি হলেও দেশের দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরলেই কারফিউ তুলে নেওয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত ১০৭ জন পলাতক আসামি আদালতে আত্মসমর্পণের পাশাপাশি ৩৩টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মশিউর রহমান, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম আনিসুল হক, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি নুরুল ইসলামসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close