ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

উলিপুরে ঐতিহ্যবাহী কাজীর মসজিদ
প্রকাশ: সোমবার, ১৫ জুলাই, ২০২৪, ১১:৫৮ এএম  (ভিজিট : ৩৮০)
কালের স্রোতে চাপা পড়া বর্ণাঢ্য ইতিকথার মুক্ত মানিক কুড়িগ্রামের উলিপুরে ঐতিহ্যবাহী 'কাজীর মসজিদ। এটি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে দলদলিয়া ইউনিয়নের দলবাড়ী গ্রামে অবস্থিত। মুঘল আমলের এই মসজিদটি বালু সিমেন্ট ব্যবহার না করে সুরকি ও চুন ব্যবহার করে তৈরি করেছেন কারুশিল্পীরা। আকারে মসজিদের দৈর্ঘ্য ৩২ ফুট ও প্রস্থ ১৩ ফুট। দেয়ালের পুরত্ব প্রায় আড়াই ফুট। মসজিদের পুরাতন ভবনটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট শক্ত ভিত্তির উপর দন্ডায়মান। বর্তমানে মসজিদটির ছাদে পাঁচটি গম্বুজ ও ছোট ছোট চারটি মিনার সম্প্রসারিত করেছে। অতি পুরাতন হওয়ায় মসজিদটির কিছু অংশ মাটিতে দেবে গেছে। মূল মসজিদের মধ্যে একটি ছোট মেহরাব রয়েছে। জুমার দিন খতিব ওই মেহরাব থেকে বয়ান পেশ করেন। মসজিদটির ভেতরে ১৪ থেকে ১৫ জন মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। ভেতরে সাদামাটা থাকলেও বাইরে খচিত অলংকরণ বেশি হওয়ায় আরও সৌন্দর্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

বর্তমানে এই মসজিদটি সম্প্রসারিত করে অত্যাধুনিক ও নিপুণ কারুকাজে সৌন্দর্য বর্ধনে প্রসারিত করা হচ্ছে। বর্ধিত মসজিদে ১১ টি কাতারে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। প্রায় দুই একর জমির ওপর গড়ে উঠেছে এ নিদর্শন। মসজিদের পূর্ব দিকে প্রাচীনকালের সান বাঁধানো একটি পুকুর ও নতুন একটি কবরস্থান। মসজিদের উত্তরে ঈদগাহ মাঠ, হাফিজিয়া মাদ্রাসা, লিল্লাহ বোর্ডিং। দক্ষিণে নূরানী মাদ্রাসা, পশ্চিমে কবরস্থান। মসজিদের ভিতরে একটি লোহার দানবক্স আছে যা ছয় মাস পর খোলা হয়। এছাড়াও বাহিরে দুটি দানবক্স আছে।  মসজিদের উত্তরে একটি দক্ষিনে একটি। এ দু'টি দান বক্স প্রতি সপ্তাহে খোলা হয়।

উলিপুরের ইতিহাস ও লোকসাহিত্য গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১২১৪ হিজরি সনে পারস্য (ইরান দেশ) থেকে কাজী কুতুব উদ্দিন নামের একজন ধর্মযাজক ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য এ অঞ্চলে আসেন। তিনি এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। বিভিন্ন এলাকায় ধর্ম প্রচার করে মুসল্লিদের নিয়ে এই মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন তিনি। কাজী কুতুব উদ্দিন এ এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর এলাকার মুসল্লীরা দীর্ঘ সময় সেখানে নামাজ আদায় করেন। কালের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে সেখানকার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঝাড় জঙ্গলে ঢেকে যায় মসজিদের চারদেয়াল। একসময় এলাকার লোকজন মসজিদটি পুনঃসংস্কার করে নামাজ আদায় শুরু করেন।

মূল মসজিদ প্রবেশ পথে একটি ফার্সি ভাষার শিলালিপি আছে। যার বঙ্গানুবাদ থেকে জানা যায়, মসজিদটির নির্মাতা কাজী কুতুব উদ্দিন। তার নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় কাজীর মসজিদ। ২০০৩ খ্রিস্টাব্দে প্রত্মতত্ত্ব বিভাগ কাজীর মসজিদটি অধিগ্রহণ করে।

দুর্গাপুর ইউনিয়নের সিট দুর্গাপুর গ্রাম থেকে আসা মানতকারী আব্দুর রহিম জানান, এই মসজিদে কেউ কিছু মানত করে দান করলে তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়। তাই তিনি আলো উষা চাল, নগদ অর্থ দান করতে এসেছেন। সেই সাথে হুজুরের কাছ থেকে পানি পড়া নেয়ার জন্য বোতল ভর্তি পানির সাথে এনেছেন।

কাজী মসজিদের মোয়াজ্জিন আব্দুর রহমান বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে এ মসজিদে আছি। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসে মসজিদটি দেখার জন্য। জুমার নামাজ আদায়ের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারও ধর্মপ্রাণ মুসলমানের সমাগম ঘটে। মসজিদটিকে কেন্দ্র করে প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও অন্য ধর্মাবলী মানুষজনও বিভিন্ন মানত (নগদ টাকা, গুড়, চিনি, খোরমা, জিলাপি পায়েস, খিচুড়ি, হাঁস-মুরগি, চাল, ডাল ও ধর্মীয় বই) নিয়ে এসে মসজিদ কমিটির হাতে তুলে দেন। এসব মানত ও দান থেকে প্রতিমাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা উপার্জিত হয়।

কাজীর মসজিদের খতিব মাওলানা আতাউর রহমান জানান, আমি দীর্ঘ এক বছর ধরে এই মসজিদের প্রধান খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এর আগে আমার পিতা মাওলানা আব্দুর সবুর প্রায় পঞ্চাশ বছর খতিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। তার কাছ থেকে শুনেছি, মসজিদটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল।এলাকার লোকজন মসজিদটি পুনঃসংস্কার করে নামাজ আদায় শুরু করেন। তখন থেকে মূল মসজিদটিতে ১৪ থেকে ১৫ জন মুসুল্লি নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। বর্তমানে মসজিদটি সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

কাজীর মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ ইমদাদুল হক মাস্টার জানান, এক একর ৩৫ শতক জমিতে মসজিদ, ঈদগাহ মাঠ ও পুকুর, ৫০ শতক জমিতে কবরস্থান, ১৫ থেকে ২০ শতক জমিতে হাফিজিয়া ও নূরানী মাদ্রাসা রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে দান ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মূল মসজিদটি ঠিক রেখে চারতলা ভবনের ভিত্তি দিয়ে দোতলা সমাপ্ত করে তিনতলার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। পর্যায়ক্রমে  মসজিদ, মাদ্রাসা ও কবরস্থান সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা নিয়েছেন বলে জানান তিনি।


সময়ের আলো/এএ/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close