ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

পরিচয় দিতেন ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে, পৈতৃক ভিটাতে চার তলা বাড়ি
নেতাকর্মীদের পানি খাওয়ানোর কাজ করা জাহাঙ্গীর ৪০০ কোটির পিয়ন!
প্রকাশ: রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০২৪, ১১:৩২ পিএম  (ভিজিট : ১১৭৮)
 জাহাঙ্গীর আলম। ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীর আলম। ফাইল ছবি

সরকারি বাসভবন গণভবনে রোববার বিকাল ৪টায় চীন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এমন উদাহরণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ বাসার সাবেক এক কর্মীর দুর্নীতি সম্পর্কে দেন চাঞ্চল্যকর তথ্য। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাসায় কাজ করে গেছে, পিয়ন, যে এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। হ্যাঁ, এটা বাস্তব কথা। তো কী করে বানাল এই টাকা! যখনই আমি জেনেছি তাকে বাদ দিয়ে কার্ড-টার্ড সব সিজ করে আমার ব্যবস্থা আমি নিয়েছি। এটা তো হয়, এটা করে। ধরা পড়লে তো চোখে আসে। তা ছাড়া তো হয় না। যখন ধরা পড়ে তখন ব্যবস্থা নিই।

প্রধানমন্ত্রীর এই তথ্যের পরই শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা। কে এই ৪০০ কোটির পিয়ন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তার পরিচয় নিয়ে কোনো ইঙ্গিত দেওয়া না হলেও বিভিন্ন অনুসন্ধানে মিলেছে সেই পিয়নের তথ্য। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, সেই পিয়নের নাম জাহাঙ্গীর আলম। যার বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার নাহারখিল গ্রামে। তার বাবার নাম রহমত উল্যা ও মায়ের নাম অজিফা খাতুন। 

সূত্র জানায়, বর্তমান সরকারের টানা চার মেয়াদের প্রথম দুই টার্মের পুরোটা এবং তৃতীয় টার্মের প্রথম কিছু দিন প্রধানমন্ত্রীর পারসোনাল এইড হিসেবে কর্মরত ছিলেন জাহাঙ্গীর। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সরকারের তৃতীয় টার্মের প্রথম দিকে চাকরিচ্যুত হন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চাকরি না থাকলেও ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরে এলে ২০২৩ সালের ২৩ ডিসেম্বর গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তির দিয়ে জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। তার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল।

সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে সময়ের আলোর করা অনুসন্ধানে উঠে আসে একের পর এক চমক জাগানিয়া তথ্য। জানা যায়, ৯০ দশকে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়ি সুধাসদনে আসা দলীয় নেতাকর্মীকে পানি খাওয়ানোর কাজ করতেন জাহাঙ্গীর আলম। নোয়াখালী থেকে আসা এই জাহাঙ্গীরকে নেতাকর্মীরা তখন থেকে ‘পানি জাহাঙ্গীর’ নামে চিনতেন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রীর গণভবনে যাতায়াতের সুযোগ পান জাহাঙ্গীর। এরপরই যেন আলাদীনের চেরাগ হাতে পান তিনি। 

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারীর চাকরি পাওয়া জাঙ্গাঙ্গীর নিজেকে পরিচয় দিতে ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে। এই পরিচয়ে করতেন বিভিন্ন তদবির বাণিজ্য। এমনকি ক্ষমতার দাপট দেখাতে শুরু করেন দলীয় নেতাকর্মীদের কাছেও। ভুয়া পরিচয়ে একসময় বাগিয়ে নেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির পদও। গত কমিটিতে সহ-সভাপতির পদে ছিলেন তিনি।

রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তার পরিবারের একাধিক সদস্যকেও। জাহাঙ্গীর আলমের ভাই দীর্ঘ দিন ধরে খিলপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান। তার ভাগিনা মাকসুদুর রহমান শিপন জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান। দুটি পদই জাহাঙ্গীর আলমের ক্ষমতার জোরে বাগিয়ে নেন বলে জানিয়ে একাধিক দলীয় সূত্র। জাহাঙ্গীরের দাপটে তাদের বিরুদ্ধে কেউ নির্বাচনে পর্যন্ত দাঁড়ায়নি।

এলাকায় এসে চলতেন পুলিশ প্রটোকলে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত বিশ্বস্ত হিসেবে তুলে ধরতেন। আর সাধারণ জনগণ তা বিশ্বাস করতেন। তিনি তার বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কোথায় যেতেন, কী করতেন, প্রধানমন্ত্রী কোন সময় কী করতেন তার তুলে ধরতেন। জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতেও চেয়েছিলেন। মসজিদ, মাদরাসা, স্কুল-কলেজ, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে দান করতেন দেদার। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার অনেককে জানান, একসময় তাদের পরিবার ছিল খুবই দরিদ্র। বর্তমানে জাহাঙ্গীর আলম অঢেল সম্পদ ও টাকার মালিক। এসবই হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়ে। এলাকার অনেকে জানান, জাহাঙ্গীর বলতেন তার সাথে অনেক মন্ত্রী ও দলীয় অনেক নেতার সখ্য রয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখার করার জন্য অনেক মন্ত্রী বা দলীয় নেতা তার দ্বারস্থ হতেন বলে তিনি বলতেন। 

তার বাবা রহমত উল্যাহ ইউনিয়ন পরিষদের কেরানী হিসেবে চাকরি করতেন। সংসারে ছিল টানাপোড়ন। দল ক্ষমতায় আসার পর জাহাঙ্গীর আলমের উত্থান অনেকের কাছে আলাদীনের চেরাগের মতো। চাটখিলে পৈতৃক ভিটাতে করেছেন চার তলা বাড়ি। বাড়ির পাশে রয়েছে সাতশত শতকের জমি। উপজেলা খিলপাড়া পূর্ব বাজারে রয়েছে প্রায় কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ। জেলা শহরে রয়েছে আট তলা ভবন।

জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে হোয়াটসঅ্যাপে তিনবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য লিখে পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  ৪০০ কোটির পিয়ন-জাহাঙ্গীর আলম   নোয়াখালী   




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close