কুড়িগ্রামের উলিপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যায় ডুবে গেছে গো-চারণ ভূমি। দেখা দিয়েছে কাঁচা ঘাসের অভাব। বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে কৃষকের গচ্ছিত খড়। বেশিরভাগ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে থাকার কারণে ফসলসহ তৃণজাতীয় খাদ্য নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে বন্যাদুর্গত এলাকায় গবাদিপশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এতে এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার গবাদিপশুর খাদ্যাভাব তীব্র আকার ধারণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় সহস্রাধিক গো-খামার। চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিত খামারিরা।
শনিবার সকালে উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের চর গুজিমারী, বাবুরচর, দাগারকুঠি, বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের দেলদারগঞ্জ, চর জলংগারকুঠি, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চর, সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চর বগুয়া হকের চরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে এই পরিস্থিতি দেখা যায়।
উপজেলার বাবুরচর গ্রামের গোলজার হোসেনের ছেলে তাজুল ইসলাম জানান, ১৭টি গরুর খাবার নিয়ে বিপাকে পড়েছি। বাজারে এক বস্তা (৫০ কেজি) খড়ের দাম ৫৬০ টাকা। কাঁচা ঘাস তো পাওয়া যায় না। কাঁচা ঘাস না পাওয়ায় অনেক খামারি খাল-বিল, ডোবা-নালা থেকে কচুরিপানা কেটে গবাদি পশুকে খাওয়াতে বাধ্য হচ্ছে।
হাতিয়া ইউনিয়নের অনন্তপুর গ্রামে সুমাইয়া এগ্রো ফার্মের মালিক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রামে শতাধিক খামারি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গরু পালন করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। আমার নিজেরও একটি বিদেশি গরুর খামার রয়েছে। খৈল, ভুসি ও খড়ের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং দুধের দাম কম থাকায় খামারিরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। বন্যার কারণে চারণ ভূমির ঘাস নষ্ট হওয়ায় গো-খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। অন্তত ১৫ দিনের গো-খাদ্য সরকারি অথবা বেসরকারিভাবে সহযোগিতা পাওয়া গেলে এই সংকট থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যাবে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পশু খাদ্যের সহায়তা কামনা করেন তিনি।
হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও গরু ব্যবসায়ী মো. বারেক মিয়া জানান, অনেকে সংসার খরচের পাশাপাশি খড় কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে অনেক খামারি গরু, মহিষ ও ছাগল-ভেড়াকে অনাহারে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এ কারণে অনেক খামারি তাদের গৃহপালিত পশু বাধ্য হয়েই বিক্রি করে দিচ্ছেন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সিরাজদৌলা জানান, এবার গো-খামারিদের জন্য কোনো ত্রাণ সহযোগিতা আসেনি। সহযোগিতা এলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের সঙ্গে সমন্বয় করে বিতরণ করা হবে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ানুল হক জানান, এ উপজেলায় ৩২ একর গো-চারণ ভূমি বন্যায় ডুবে যাওয়ায় কাঁচা ঘাসের অভাব দেখা দিয়েছে। বন্যা আসার আগে খামারিদের নিয়ে উঠান বৈঠক করা হয়েছে। বন্যায় কীভাবে খাদ্য সংরক্ষণ করা যায় তা বৈঠকে জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গে খামারিদের খড়, ফিট, সাইলেস, টিএমআরহে ও শুকনো খাদ্য সংগ্রহ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়াকে বিনামূল্যে ৯০০ টিকা প্রদান করা হয়েছে।
সময়ের আলো/আরএস/