ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বন্যায় পাঠদান ব্যাহত, ক্ষতিগ্রস্ত লক্ষাধিক শিক্ষার্থী
ঈদের ছুটির পরও খোলেনি মৌলভীবাজারের ৩৪৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
প্রকাশ: শনিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৪, ৫:২৫ পিএম  (ভিজিট : ৩৭৪)
চলমান দীর্ঘস্থায়ী দু’দফা বন্যায় পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে মৌলভীবাজার জেলার ৩৪৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। এতে পাঠগ্রহণ কার্যক্রম থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। গত ১৬ জুন থেকে বন্যা শুরু হয় জেলার ৭টি উপজেলায়। জেলার ৫টি উপজেলায় দুই দফা বন্যা এখন চলমান। বানের পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার নদী ও হাওর তীরের ঘরবাড়ি, ক্ষেত-কৃষি, মৎস্য খামার, রাস্তাঘাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। জেলার নদী এলাকায় বানের পানি অনেকটা কমলেও এখন উল্টো চিত্র হাওর এলাকায়। হাওর তীরের এলাকায় চলমান বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে জলাবদ্ধতায় রূপ নিচ্ছে। খুব শিগগিরই যে বন্যা দুর্ভোগ মুক্ত হবেন বানভাসিরা এমনটিও নয়। বরং বৃষ্টি কিংবা উজানের ঢল নামলে আবারও তৃতীয় দফা বন্যার ভয় ও দুশ্চিন্তা তাদের। 

বন্যা কবলিত স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তারা এখন পানিবাহিত নানা রোগ-বালাই, রান্না করা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, স্যানিটেশন সমস্যায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এছাড়া আফাল (ঢেউ) তোড়ে হাওর এলাকায় নিজেদের ঘরবাড়ি রক্ষা নিয়েও তাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। সেই সঙ্গে রয়েছে বিষাক্ত সাপের ভয়ও। 

চলমান বন্যায় জেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সড়ক, মাঠ, অফিস কক্ষ, শ্রেণিকক্ষ সবই এখনো পানিবন্দি। তাছাড়া বিদ্যালয় কাম বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রসহ অনেক বিদ্যালয়েও বন্যার্তরা আশ্রয় নিয়েছেন। তাই এমন পরিস্থিতিতে এখনো বন্ধ রয়েছে এসব বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম। ঈদের ছুটির পর স্কুল খোলার কথা থাকলেও বন্যার কারণে এখনো বন্ধ রয়েছে জেলার ৭টি উপজেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুল ও মাদ্রাসাসহ ৩৪৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্ধ থেকে খোলার পর পাঠদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই বিদ্যালয়গুলো বন্যাকবলিত হয়। এ ছাড়া বানের পানিতে তলিয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের ঘরবাড়িও। বন্যার কারণে বিদ্যালয়গুলো বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি বাড়িতেও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারছেন না এ জেলার অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। ফলে এ বছর চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের শিক্ষাজীবন। বন্যার পানি দ্রুতগতিতে না কমায় এ সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। এ নিয়ে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় শিক্ষক ও অভিভাবকরা। বিশেষ করে এ বছরের পিএসসি, জেএসসি, জেডিসি, দাখিল ও এসএসসি পরীক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। 

এদিকে, নানা দুর্ভোগ মাড়িয়ে চলমান এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দিচ্ছেন এ জেলার বন্যাকবলিত অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। বন্যার কারণে দীর্ঘদিন থেকে বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের সিলেবাস অনুযায়ী কোর্স শেষ হবে কি না এ নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। তাই চলমান বছরের চূড়ান্ত পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল নিয়েও তাদের ভাবনার শেষ নেই। তাদের মত ফলাফল বিপর্যয়ের এমন দুশ্চিন্তা বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক, পরিচালনা কমিটির সদস্য ও অভিভাবকদের। প্রায় ৪ সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও চলমান বন্যার পানি না কমে উল্টো তা দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নেয়ায় তাদের এ দুশ্চিন্তা। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের দাবি- বন্যা কাটিয়ে উঠলে বিদ্যালয়গুলো খোলার পর বাড়তি পাঠদানের মাধ্যমে এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠা সম্ভব বলে তারা আশাবাদী। 

জানা যায়, চলমান এ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জেলার হাকালুকি, কাউয়াদিঘী হাওর এবং মনু ও কুশিয়ারা নদী তীরের কুলাউড়া, জুড়ী, বড়লেখা, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাসিন্দারা। দুই দফা বন্যায় তাদের কৃষি ফসল ও মৎস্য খামার ক্ষতির পাশাপাশি বন্যায় ডুবিয়ে দিয়েছে ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট, বাজার, ধর্মীয় উপসনালয় আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 

বন্যাকবলিত সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেন, বন্যায় পানিতে তলিয়ে যাওয়া বিদ্যালগুলোর ভবন ও অফিস কক্ষের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আসবাবপত্রের ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া অনেক বিদ্যালয় এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে আর পানি বাড়লে এগুলোও বন্যাকবলিত হবে। এছাড়া অনেক বিদ্যালয়ের রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় সেখানে পাঠদান কার্যক্রম চালু হলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি রয়েছে কম। 

জেলার (প্রাথমিক ও মাধ্যমিক) শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ৭টি উপজেলায় ৩৪৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যাকবলিত হওয়ায় ও আশ্রয়কেন্দ্র থাকায় তা বন্ধ রয়েছে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় পাঠদান কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত রয়েছেন প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। 

জেলা সহকারী (প্রাথমিক) শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানান, জেলায় ১০৫০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল ছাড়া ২৯৩টি বিদ্যালয় বন্যাকবলিত ও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই বিদ্যালয়গুলো বন্যার কারণে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।  

জেলা (মাধ্যমিক) শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুর রহমান জানান, বন্যায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক (স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৩৬টি ও মাদ্রাসা ১৫টি) পর্যায়ের ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্যাকবলিত হওয়ায় ও আশ্রয়কেন্দ্র থাকায় এখন পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। 
  
সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ   বন্যায় পাঠদান ব্যাহত   মৌলভীবাজা  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close