কুড়িগ্রামে ভারী বর্ষণ আর উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমতে শুরু করলেও জেলাজুড়ে ১৬টি নদ-নদীতে মৃদু ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, ধরলাসহ বেশ কয়েকটি নদ নদীর তীরবর্তী মানুষজন বসতভিটা ফসলি জমি নিয়ে পড়েছে আতঙ্কে। নদী ভাঙনে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না স্কুল, মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাগুলো।
সরজমিনে দেখা যায়, গত দুই সপ্তাহে জেলার উলিপুর, চিলমারী ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদে ভাঙনের বসতভিটা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদী ভাঙনে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। অনেককেই দেখা গেছে তড়িঘড়ি করে বসতভিটার ঘর সরিয়ে অন্যত্র নিচ্ছে।
উলিপুরউপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের হকের চর ও হাতিয়া ইউনিয়নের চর জুগিমা্রীতে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে হকের চরের একটি মসজিদ ও একটিমাত্র মডেল স্কুল সেটিও নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকসহ আশপাশের ৩টি গ্রাম। স্থানীয়রা জানান, নদীর পানি বন্যায় পরিণত হওয়ার আগেই যে হারে ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। আসন্ন বন্যায় এ অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে নদী শাসন ব্যবস্থা চান এলাকাবাসী। কথা হয় হকের চরের ষাটোর্ধ ছক্কু মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, এই বয়সে আমি নদীর ভাঙনে ১৩ বার বাড়ি সরিয়েছি। আর পারছিনা বাবা। এখন ক্লান্ত হয়ে গেছি। গত দুই সপ্তাহে আমার দুই বিঘা আবাদি জমি নদীতে চলে গেছে। এখনো বন্যা আসে নাই এতেই যে ভাঙনের অবস্থা। জানি না আমার কপালে কি কষ্ট আছে। জন প্রতিনিধিরা কেউ খোঁজ খবর নেয় না।
হকের চরের আছিয়া, মেহেরজান, মরিয়ম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে অনেক জমি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। আমরা গুলা সবাই মিলে বাড়িঘর সরাইতেছি। বাপের ভিটায় যাইতেছে। কি করমো বুদ্ধি নাই। একই কথা জানালেন নদী ভাঙ্গনের স্বীকার হাতিয়া ইউনিয়নের চর জুগিমারী এলাকার বাসিন্দা সহিরন, দেলজন ও আম্মিয়ার পরিবারের সদস্যরা।
সাহেবের আলগা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, নদী ভাঙনে হকের চরের প্রায় ৬০টি পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। আমরা বসতভিটা হারানো পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করছি। কাল পরশুর মধ্যে উপজেলা প্রশাসন বরাবর তালিকা জমা দেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, এ চরে স্থানীয় উদ্যোগে নির্মাণ করা একটি মডেল স্কুল ইতিমধ্যেই নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। একটি কমিউনিটি ক্লিনিক সেটাও নদীর মুখে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিয়া ইউনিয়নের সাবেক দুবারের চেয়ারম্যান আবুল হাশেম বলেন, গত দুই সপ্তাহে এ চরে দুই শতাধিক পরিবারের ঘর বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীর ভাঙনে সব কিছু হারিয়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এখন পর্যন্ত এ ভাঙন কবলিত এলাকায় কোন সহায়তা আসেনি। যে টুকু এসেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় এবারেই অপ্রতুল।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘উজানের ঢলে ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়ার কারণে চরাঞ্চলে কিছু ভাঙন রয়েছে। চরাঞ্চলে কয়েকটি চরের ভাঙন প্রতিরোধে অস্থায়ী কার্যক্রমের জন্য প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে সেখানে ওই মূল্যমানের স্থাপনা ও সম্পদ নেই। তারপরও আমরা ভাঙন রোধে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সময়ের আলো/আরআই