ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

৬ ঘণ্টা লোডশেডিং, ভয়াবহ গ্যাস সংকট
প্রকাশ: শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪, ৪:০৬ এএম  (ভিজিট : ৪১৪)
গ্যাস সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। মফস্বলে লোডশেডিং হচ্ছে ৬ ঘণ্টারও বেশি। প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ না পাওয়ায় শিল্প কারখানার উৎপাদন কমেছে। সিএনজি স্টেশনগুলোতে গ্যাস নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে, চাপ কম থাকায় সেটিও পূর্ণমাত্রায় সম্ভব হচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিকের গ্রাহকরা। পুরোনোর সঙ্গে নতুন নতুন এলাকায় গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে, কোথাও কোথাও একেবারেই চুলা জ্বলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সবকিছুর নেপথ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়া। যেখানে প্রতিদিন ১১০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হতো সেখানে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ২৪ কোটি ঘনফুট। সব মিলিয়ে প্রায় ২০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সংকটে পড়েছে দেশ।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৪০০ কোটি ঘনফুটের বেশি। দেশে দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে দৈনিক ১১০ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস সরবরাহ করা হয়। আর স্থানীয় উৎপাদন মিলিয়ে ৩০০ ঘনফুটের মতো গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ঘাটতি থাকে ১০০ কোটির মতো। ঘূর্ণিঝড় রিমালে একটি এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেটি থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সেটি সিঙ্গাপুরে মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে। এতে ৫০ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস সরবরাহ কমে যায়। অন্য এলএনজি টার্মিনালটি দিয়ে ৬০ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছিল। গত মঙ্গলবার জাতীয় গ্যাস গ্রিডের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট ৪২ ইঞ্চি পাইপলাইন দুর্ঘটনায় ছিদ্র হয়ে যায়। ফলে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংকট সামাল দিতে জরুরি ভিত্তিতে কেজিডিসিএলের চট্টগ্রাম ১২ ইঞ্চি রিং মেইন পাইপলাইনে (কাফকো, শিকলবাহা বিদুৎকেন্দ্রসহ) এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে জাতীয় গ্যাস গ্রিডের মাধ্যমে টিজিটিডিসিএল ও বিজিডিসিএল অঞ্চলে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।

পিজিসিবি ও পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী, বুধবার এলএনজি সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ২৪০ কোটি ঘনফুট। বৃহস্পতিবারও একই পরিমাণ সরবরাহ করা হয়েছে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে গ্যাসের সংকট দেখা দিয়েছে। সার কারখানায় ৩২ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১১ কোটি ঘনফুট। আর বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২৩০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ৭৬ কোটি ঘনফুট।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ করার সময় ৭ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছিল। একটি টার্মিনাল মেরামতে যাওয়ায় গত এক মাস ধরে ৫ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছিল। এখন পাইপলাইনে ছিদ্র হওয়ায় গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৪ হাজারের ঘরে নেমে এসেছে। গ্যাসের অভাবে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে রাখা হয়েছে। গ্যাস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় দেশজুড়ে ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। মফস্বল এলাকায় মাত্রা ছাড়িয়েছে লোডশেডিং। রাজধানীর সিএনজি স্টেশনগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও প্রয়োজনীয় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। শিল্প কারখানায় উৎপাদন তলানিতে নেমেছে বলে দাবি করেছেন মালিকরা।
আবাসিকে গ্যাস ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, আগে তবুও কোনো রকম গ্যাস পাওয়া যেত। এখন যা পাওয়া যাচ্ছে তা দিয়ে সময়মতো রান্না করা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এলপিজি সিলিন্ডার বা হোটেল থেকে কিনে খেতে হচ্ছে।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মঙ্গলবারই সংকটে পড়তে হয়। দ্রুত মেরামতের কাজ চলমান রয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেরামতের কথা বলা হলেও আসলে কত সময় লাগবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময়ের আলোকে বলেন, কোনো কারণে পাইপলাইন ফেটে গেলে পুরো লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঠিক কোন জায়গায় ফেটেছে সেটি চিহ্নিত করে পুরো গ্যাস বের করে ফেলতে হয়। তারপর মেরামত কাজ চালাতে হয়। না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এ পাইপলাইনটি দ্রুত মেরামতের জন্য কাজ চলছে।

তিনি জানান, অন্য যে ভাসমান টার্মিনালটি সিঙ্গাপুরের মেরামতে জন্য আছে সেটি ১৩ জুলাই সেখান থেকে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। আশা করছি, আগামী সপ্তাহে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ততদিন সংকটেই থাকতে হবে।

পিজিসিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বৃহস্পতিবার ডে পিক আওয়ার দুপুর ১২টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৮৭০ মেগাওয়াট, উৎপাদিত হয়েছে ১২ হাজার ৮৭০ মেগাওয়াট। গ্যাস দিয়ে উৎপাদিত হয়েছে ৪ হাজার ২৪৮ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল প্রায় ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। বৃহস্পতিবার সারা দিনই গড়ে এক থেকে দেড় হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে।

তিতাস গ্যাস জানিয়েছে, এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ কমার পাশাপাশি চাপও কমেছে। সরবরাহ না বাড়া পর্যন্ত পরিস্থিতি এমনই থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইন্স) মো. কামরুজ্জামান খান সময়ের আলোকে বলেন, আশা করছি দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত জাতীয় গ্যাস গ্রিডের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট ৪২ ইঞ্চি পাইপলাইনটি শুক্রবারের মধ্যে মেরামত হয়ে যাবে। তখন গ্যাস সরবরাহ বাড়বে। চলতি সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে মেরামতে থাকা এলএনজি টার্মিনালটি চলে আসবে। সেটি থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close