ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্নের আগে কি থামবেন না নেতানিয়াহু
প্রকাশ: শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪, ৩:৪৭ এএম  (ভিজিট : ২৯৩)
যুদ্ধ কিংবা আগ্রাসনে থামে না নিত্যদিনকার জীবন। ক্ষুধা-মৃত্যু-বোমার মাঝেও মানুষ খুঁজে ফেরে যাপনের উল্লাস আর আনন্দ। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকাও সেই বাস্তবতার বাইরে নয়। গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) গাজার খান ইউনিসে শরণার্থী শিবির হিসেবে ব্যবহৃত আল আওলাদ স্কুলে ফুটবল খেলছিল ঘরহারা ফিলিস্তিনি শিশুরা। সে সময়ই সেখানে আছড়ে পড়ে ইসরাইলি বোমা। প্রাণ হারায় কমপক্ষে ৩০ জন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানাচ্ছে, শনিবার (৬ জুলাই) থেকে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) ৪ দিনে ৪টি স্কুলে বোমা ফেলেছে ইসরাইলি বাহিনী।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলমান অবস্থাতেই উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য গাজায় আগ্রাসন জোরদার করেছে ইসরাইল। বুধবার কাতারের দোহায় যখন যুদ্ধবিরতির আলোচনা চলছে, তখন বিমান থেকে লিফলেট ফেলে গাজা নগরীতে থাকা সব ফিলিস্তিনিকে শহর ছাড়তে বলা হয়। তাদের নিরাপদে দক্ষিণের দেইর আল-বালাহ ও আজ-জাওয়াইদায় যেতে বলা হয়। তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা আলজাজিরাকে বলেছেন, আইডিএফের নির্দেশ মতো পালাতে থাকা ফিলিস্তিনিদেরও লক্ষ্যবস্তু করেছে ইসরাইলি স্নাইপার। এদিকে বিকল্প ধারার সংবাদমাধ্যম ডেমোক্র্যাসি নাউ প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানাচ্ছে, গাজার আকাশে উড়ছে বিমান থেকে ফেলা বোমায় ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন মরদেহের টুকরা। 

ইসরাইলি অবরোধে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ভূমিতে চলতে ক্ষুধার মাতম। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উপত্যকাজুড়ে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে ইউনিসেফ বলে আসছে, ৫০ হাজার শিশু মৃত্যুর মুখোমুখি। বিশ্লেষকরা বলছেন, আসলে নেতানিয়াহু মনে মনে ফিলিস্তিনি জাতিসত্তাকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার যে বাসনা পোষণ করেন, পশ্চিমা মদদে তারই বাস্তবায়ন ঘটাচ্ছেন তিনি। বস্তুত জাতিগত নিধন সম্পন্নের আগে তিনি থামতে চাইছেন না। 

উপত্যকায় দুর্ভিক্ষ, মৃত্যুর মুখে অর্ধলাখ শিশু : বিগত ৯ মাস ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসন ও সীমান্ত অবরোধের কারণে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় খাদ্যসামগ্রীর প্রবেশ ও সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইতিমধ্যে সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। সময় যত গড়াচ্ছে, দুর্ভিক্ষও তত ছড়িয়ে পড়ছে। শিগগির সীমান্ত অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া মঙ্গলবারের বিবৃতিকে উদ্ধত করে রয়টার্স বলছে, খাদ্যের দুষ্প্রাপ্যতা এবং তার ফলে সৃষ্ট অপুষ্টি ও এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় এ পর্যন্ত গাজায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৩ জন শিশুর। মৃত এই শিশুদের অধিকাংশই গাজার উত্তরাঞ্চলীয় বিভিন্ন এলাকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই তথ্যকে সমর্থন করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের প্যানেলও। 

এদিকে জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) সেই জুনের মাঝামাঝি থেকে বলে আসছে, উপত্যকার ৫০ হাজার শিশু চূড়ান্ত অপুষ্টিতে ভুগছে। সেই সময় ইউএনআরডব্লিউএর এক বিবৃতিতে বলা হয়, মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকারে ক্রমাগত বিধিনিষেধের কারণে গাজার মানুষ ক্রমাগত ক্ষুধার চূড়ান্ত পর্যায়ের মুখোমুখি হচ্ছে। একে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি আখ্যা দেওয়া হয়। 

ফুটবল খেলতে থাকা শিশুদের ওপর বোমাবর্ষণ : আল আওদা স্কুলের শিশুদের মঙ্গলবার স্পষ্টতই ইসরাইলি দখলদার বাহিনী লক্ষ্যবস্তু করেছিল। আলজাজিরার ক্যামেরায় ফুটবল খেলতে থাকা শিশুদের ওপর বোমা ফেলার দৃশ্য ধরা পড়েছে। গাজাভিত্তিক সাংবাদিক আকরাম আল-সাতাররি ডেমোক্র্যাসি নাউকে বলেছেন, এমন অনেক ঘটনায় ঘটেছে, যা ক্যামেরায় ধরা যায়নি।

তীব্র বোমায় উড়ছে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন মরদেহ : খান ইউনিসের স্কুলে চালানো মঙ্গলবারের হামলায় ৩০ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ৫৩ জন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী ডেমোক্র্যাসি নাউকে বলেছেন, ইসরাইলি হামলার পর মরদেহের ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন অংশ আকাশে উড়তে দেখেছেন তিনি। জানিয়েছেন, মারা যাওয়াদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ আল-আসালি ডেমোক্র্যাসি নাউকে বলেন, কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই অকস্মাৎ ইন্টারনেট হটস্পটের সঙ্গে সংযোগ নেওয়া অনেক মানুষকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে রকেট ছোড়া হয়েছিল। তারা কেউ যোদ্ধা নন। তাদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না এবং তারা কোনো প্রতিরোধ অভিযানে সংশ্লিষ্ট ছিল না। তারা ছিল বেসামরিক নাগরিক এবং বেশিরভাগই শিশু। আমি সেখানে ছিলাম এবং বেশিরভাগ মানুষ নিহত বা গুরুতর আহত হয়েছিল। আমাদের কারও কাছে কোনো অস্ত্র বা প্রতিরোধ করার মতো কিছু ছিল না।’ 

পালাতে থাকা মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ : গাজা নগরীর অংশবিশেষ থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে ইসরাইল প্রথম আনুষ্ঠানিক নির্দেশ দেয় গত ২৭ জুন। পরে আরও দুটি নির্দেশ দেওয়া হয়। বুধবার কাতার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতির জন্য দোহায় ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করছে। অথচ এদিন পুরো হাজা নগরী ফাঁকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

দেইর আল-বালাহতে থাকা আলজাজিরা প্রতিবেদক বলেন, ইসরাইলি হামলা জোরদার হওয়ায় গাজা নগরীতে থাকা বাসিন্দাদের মনে হচ্ছে, তারা আটকা পড়েছে। তারা কোথায় যাবে, তা জানেন না। এখানে কোনো বেসামরিক প্রতিরক্ষা দল নেই। নেই রেডক্রসও। ফিলিস্তিনিদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার কেউ এখনে নেই। পালাতে গিয়ে তারা ইসরাইলি স্নাইপারের (দূরবর্তী অবস্থান থেকে লুকিয়ে থেকে লক্ষ্যবস্তুতে গুলি করা ব্যক্তি) লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন। বেশ কয়েকজন বেসামরিক আলজাজিরার কাছে এই অভিযোগ করেছেন। 

আলজাজিরা জানিয়েছে, বুধবার গাজা নগরী ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার পর ফিলিস্তিনিরা স্নাইপারের লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন। একজন ব্যক্তি আলজাজিরাকে বলেছিলেন যে, তিনি ইয়ারমুক স্টেডিয়ামের কাছে বসে ছিলেন যখন তিনি দেখেন একজন ইসরাইলি স্নাইপার টিনজাত খাবার বহনকারী একটি সাইকেলে একজন ব্যক্তিকে গুলি করছে। ‘স্নাইপার তাকে সরাসরি গুলি করেছে,’ তিনি বলেছিলেন। ‘আমরা তার দেহ নড়াচড়া করতে পারিনি। এমনকি প্যারামেডিকরাও রাস্তায় প্রবেশ করতে পারেনি। তারা এই ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার বা সরিয়ে নিতে পারেনি।’

একজন নারী আলজাজিরাকে বলেছিলেন যে তিনি ইয়ারমুক স্টেডিয়ামের মধ্য দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাকে বলা হয়েছিল যে রাস্তায় ফিলিস্তিনিদের মৃতদেহ রয়েছে, যারা ইসরাইলি স্নাইপারদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়েছিল।

যুদ্ধবিরতির ধোঁয়া আর নেতানিয়াহুর জীবন-মরণ প্রশ্ন : ক’দিন ধরে গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা জোরালো হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আশা দিয়েছিল, দ্রুতই কার্যকর একটি বিরতি হতে পারে। তবে তা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপে হামাস কিংবা ইসরাইলের পক্ষ থেকে যা বলা হয়েছিল, জনপরিসরে তার উল্টো কথা বলা হয়েছে। 

ফিলিস্তিনি চিকিৎসক ও অ্যাক্টিভিস্ট মোস্তফা বারঘৌতি ডেমোক্র্যাসি নাউকে বলেছেন, বাস্তবতা হলো নেতানিয়াহু ক্রমাগত একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনাকে খর্ব করে চলেছেন। তিনি ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার গেম খেলেছেন। কয়েক মাস আগে হামাসের কাছে একটি প্রস্তাব পেশ করার কথা বলা হয়েছিল। 
আমেরিকানরা বলেছিল যে ইসরাইল সেই প্রস্তাব গ্রহণ করছে, হামাস তা মেনে নিয়েছে। তবে পরে নেতানিয়াহু পিছিয়ে যান এবং চুক্তির সম্ভাবনাকে দুর্বল করেন। বাইডেন যখন তার উদ্যোগের কথা ঘোষণা করেন, তখন তিনি বলেছিলেন যে এটি একটি ইসরাইলি প্রস্তাব। তবে নেতানিয়াহু কখনই তা নিশ্চিত করেননি। এবং যখন প্রস্তাব নিয়ে গুরুতর আলোচনা শুরু হয়েছে এবং হামাস বলেছে যে তারা প্রস্তাব গ্রহণ করছে এবং অত্যন্ত নমনীয়তা দেখিয়েছে, নেতানিয়াহু তখন গাজায় হামলা আরও বাড়িয়ে তুলছেন। এই প্রথম তিনি এমন করেননি। তিনি যখন গাজা শহর থেকে ৪ লাখ মানুষকে জাতিগতভাবে নির্মূল করার চেষ্টা করছেন, তখন আলোচনা কীভাবে কাজ করতে পারে? সুতরাং, এটা স্পষ্ট যে নেতানিয়াহু চুক্তির যেকোনো সম্ভাবনাকে ক্ষুণ্ন করতে তার খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বারঘৌতি আরও বলেন, ‘এই লোকটি (নেতানিয়াহু) ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্ত করার ব্যাপার্রে চিন্তা করে না। তিনি তাদের সবাইকে হত্যা করতে চান। তাদের কারও জীবনের কথা চিন্তা করেন না তিনি। ইসরাইলি বন্দিদের পরিবার এটা ভালো করেই জানে। নেতানিয়াহুর সমস্ত চিন্তা তার ব্যক্তিগত স্বার্থে। এটা শুধু আমার মতামত নয়; এটা অনেক ইসরাইলি নেতার মতামত। এবং আমি মনে করি নেতানিয়াহু শুধু এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান যতক্ষণ তার দরকার। কারণ তিনি খুব ভালো করেই জানেন যে, এই যুদ্ধের সমাপ্তি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারেরও সমাপ্তি ডেকে আনবে। ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার দিনের গোয়েন্দা ব্যর্থতার জন্য তার বিরুদ্ধে তদন্ত করা হবে। এই যুদ্ধ পরিচালনায় তার ব্যর্থতার জন্যও তদন্ত করা হবে। এবং তাকে দুর্নীতির চারটি মামলার জন্য আদালতে হাজির করা হবে। এই লোকটি ক্ষমতায় থাকার জন্য নিজের মাকে হত্যা করতে প্রস্তুত। এবং এখন সে লাখ লাখ ফিলিস্তিনির জীবন এবং হয়তো অনেক ইসরাইলির জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে, কারণ সে তার নিজের স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করছে।

আন্তর্জাতিক নীরবতা ও মার্কিন মদদ : ইসরাইল গাজায় যে জাতিগত নিধন, গণহত্যা আর যুদ্ধাপরাধের সীমাহীন নজির স্থাপন করছে; তার সবটাই ঘটছে আন্তর্জাতিক নীরবতার মধ্যে, প্রত্যক্ষ মার্কিন মদদে। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার ১০ দিনের মাথায় (১৭ অক্টোবর) গাজার আল-আহরি আরব হাসপাতালকে বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে কয়েকশ মানুষকে হত্যা করে ইসরাইল। তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঘনিষ্ঠতম মিত্র ইসরাইলে উড়ে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সঙ্গে নিয়ে যান মিথ্যা (ডিসইনফরমেশন) আর প্রচারণার (প্রোপাগান্ডা) ফুলঝুরি। কোনোরকম তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই ইসরাইলি সুরে সুর মিলিয়ে বাইডেন সে সময় নেতানিয়াহুকে বলেন, হাসপাতালে হামলা আপনাদের নয়, ফিলিস্তিনে সশস্ত্র সংগঠনের কাজ। ততক্ষণে অপরাধের সব তথ্যপ্রমাণ বিনাশ করা হয়ে গেছে ইসরাইলের। এরপর প্রোপাগান্ডার এক অভাবনীয় নজির স্থাপন করেন বাইডেন। হামাস নাকি ইসরাইলি শিশুদের শিরোচ্ছেদ করেছে আর বাইডেন নাকি তার ছবি দেখেছে; এমন মিথ্যা বলতেও ছাড়েন না তিনি। বাইডেন অভিযোগ করেন, ইসরাইলি নারীদেরও নাকি ধর্ষণ করেছে হামাসের সদস্যরা! হামাস কর্তৃক নারী-শিশুসহ ইসরাইলিদের হত্যা ও জিম্মি করার তথ্য ছাড়া প্রমাণিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি শিরোচ্ছেদ কিংবা ধর্ষণের। 

দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে নেতানিয়াহু সে সময়ই ঘোষণা করেন, হামাস নির্মূল প্রকল্পের অংশ হিসেবে যেকোনো পরিস্থিতিতে ইসরাইলের সঙ্গে আছে যুক্তরাষ্ট্র। হামাসকে আইএসের সঙ্গেও তুলনা করেন বাইডেন। ইসরাইলি আত্মরক্ষার অধিকারকে চূড়ান্ত এবং একমাত্র প্রায়োরিটি হিসেবে হাজির করেন তিনি। ততক্ষণে ইসরাইলের সমর্থনে মার্কিন রণতরী ভিড়তে শুরু করেছে। জানানো হয়েছে সেনা রিজার্ভ রাখার কথাও। আর ‘খোলা জেলখানা’ গাজা উপত্যকায় সিস্টেমেটিক আগ্রাসনের অংশ হিসেবে পানি-বিদ্যুৎ আর খাবার বন্ধের রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে ধারাবাহিক বেসামরিক হত্যার সবথেকে ভয়াবহ পর্ব। নির্বিবাদে মারা শুরু হয়েছে নারী ও শিশুদের, যা এখনও চলছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে তেমন কোনো বদল ঘটেনি। 

গাজায় যুদ্ধবিরতির একাধিক প্রস্তাব ভেটো দিয়ে আটকেও দেয় ইসরাইল। পরে তাদের ভোট দানে বিরতি থাকার সুযোগে একটি বিরতি প্রস্তাব পাস হলেও তাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ইসরাইল তাদের গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ চালিয়ে যেতে পারছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে অভ্যন্তরীণ চাপের মুখে বাইডেন রাফায় বিস্তৃত অভিযানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তবে নেতানিয়াহু পাত্তা দেননি। এক পর্যায়ে ২০০০ পাউন্ডের বোমার চালান স্থগিত করতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে সেই স্থগিতাদেশ থাকলেও গতকাল বৃহস্পতিবার তারা জানিয়েছে, ঠিকই সেখানে ৫০০ পাউন্ডের বোমার চালান পাঠানো হচ্ছে।

রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধের শুরু থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত ইসরাইলকে যুক্তরাষ্ট্র কমপক্ষে ১৪ হাজার এমকে-৮৪ ২০০০ পাউন্ড বোমা, সাড়ে ৬ হাজার ৫০০ পাউন্ড বোমা, ৩ হাজার হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র, ১ হাজার বাঙ্কার-বাস্টার বোমা, ২ হাজার ৬০০টি ছোট-ব্যাসের বোমা এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করেছে। খোদ মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন প্রমাণ হাজির করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া অস্ত্রে বেসামরিক হত্যা হচ্ছে। এদিকে যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যাওয়া নিয়েও বারবার হামাসকেই দায়ী করেছে যুক্তরাষ্ট্র। 

ফিলিস্তিনি চিকিৎসক ও অ্যাক্টিভিস্ট মোস্তফা বারঘৌতি ডেমোক্র্যাসি নাউকে বলেছেন, ইসরাইল যা করছে, আন্তর্জাতিক নীরবতা ও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের কারণেই তা করতে পারছে। ‘যদি অবিলম্বে গোটা বিশ্ব সম্প্রদায় সরব না হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত অবিলম্বে এই ভয়ংকর গণহত্যা এবং এই ভয়ংকর যুদ্ধ বন্ধের আদেশ জারি না করে তা হলে এই আগ্রাসন ভয়ংকরতম গণহত্যার নজির স্থাপন করবে বলে সতর্ক করেছেন তিনি। 

ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্নের লক্ষ্য : মোস্তফা বারঘৌতি বলছেন, নেতানিয়াহু ও তার ফ্যাসিস্ট সরকার যা করছেন, তা স্পষ্টতই ফিলিস্তিনি জাতিসত্তাকে চিরতরে নিশ্চিহ্নের আয়োজন। তার মতে, নেতানিয়াহু সরকারের ৩টি লক্ষ্য। প্রথমত, কার্যকর যে কোনো যুদ্ধবিরতির আলাপকে দুর্বল করা। দ্বিতীয়ত, ফিলিস্তিনিদের জাতিগতভাবে নিধন করা এবং তৃতীয়ত, গাজাকে ফিলিস্তিনিমুক্ত করে তার দখল নিশ্চিত করা। ‘ আমরা এইমাত্র খবর পেয়েছি, ইসরাইলি সেনাবাহিনী ইতিমধ্যেই উত্তর অংশে এবং গাজা শহরে সামরিক বাহিনীর স্থায়ী ঘাঁটি তৈরি করতে শুরু করেছে।’ জানিয়েছেন তিনি। 

দ্য নিউ আরবের কলামিস্ট মোহাম্মদ মুরতজা লিখেছেন, একটি কার্যকর যুদ্ধবিরতি ছাড়া ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নিধন ঠেকানোর কোনো পথ নেই।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close