ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

গল্পটা আষাঢ়ের
প্রকাশ: শুক্রবার, ১২ জুলাই, ২০২৪, ৩:১৬ এএম  (ভিজিট : ৫১২)
আমরা পাঁচ বন্ধু, প্রত্যেকের কর্মকাণ্ডের ভিত্তিতে একটা করে নাম দেওয়া আছে। আমি লালা, কারণ বাসায় লাল আটার রুটি খাওয়া হয়। মোর্শেদ লম্বা, তাই লম্বু। আশিষ অনেকটা সিদেসাধা, তাই ওর নাম ভোলা। খোকা খুবই গোঁয়ার ধরনের, তাই ও ত্যাঁদড়। আর হাসান একটু মিনমিনে, তাই ও টিকটিকি। এই পাঁচজনের একসঙ্গে চলাফেরা অর্থাৎ হরিহর পঞ্চপাণ্ডব। তবে কিছু বিষয়ে আমরা নিয়মিত। এই যেমন সকাল দশটায় জোড়পুকুরে গোসলে সবাই একসঙ্গে পুকুরে নামা। 
বিকাল পাঁচটা থেকে সাতটা পর্যন্ত শরীরচর্চা। রাত দশটায় চুপিচুপি মিটিং, কার গাছের আম পেকেছে, কার কাঁঠাল কতটুকু পাকল কিংবা সুপারি গাছের একটা লটকন কেটে আনতে পারলেই কেল্লা ফতে ইত্যাদি। খাওয়া-দাওয়াতেও শহরে আমরা বেশ নামজাদা। জীবনের অন্য কোনো চিন্তাভাবনা নেই। হেসে-খেলে এভাবেই চলছিল আমাদের জীবন। শহরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মাঝে মাঝেই প্রচণ্ড গরমে আমরা কমপ্লিট স্যুট-টাই লাগিয়ে তপ্ত রোদে শহরের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে হেঁটে যেতাম। কিংবা প্রচণ্ড শীতে স্যান্ডো গেঞ্জি ও হাফ প্যান্ট পরে বের হতাম। হঠাৎ ১০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ডাকাতিয়া নদীতে লাফিয়ে পড়তাম, নিশ্চিন্তে যতক্ষণ ইচ্ছে জলে ঝাঁপাঝাঁপি করতাম।
আষাঢ়ের একদিন, আমাদেরই অন্য এক বন্ধু খুব মন খারাপ নিয়ে আমাদের কাছে এলো। জিজ্ঞেস করলাম কী হয়েছে। বলল, ‘আজ ভাগ্নির বিয়ে ছিল, আমরা রয়েল বেঙ্গল টাইগার দিয়ে গেট ধরেছিলাম। অবশ্য ওদের গলায় দড়ি ছিল, যাতে কারও ক্ষতি করতে না পারে। বরপক্ষ এতে অসন্তুষ্ট হয়েছে। ওদের আশা ছিল আমরা সিংহ দিয়ে গেট ধরব, তাই ছেলেপক্ষ আমাদের মুরব্বিদের খুব অপমান করেছে। এমনও বলেছে, আমরা নাকি ফকির তাই কম পয়সায় রয়েল বেঙ্গল এনেছি। আর এই গেট ধরা টাকা দিয়ে আমরা নাকি আপ্যায়নের খরচ উঠাবো। এতে আমাদের মুরব্বিরা খুব কষ্ট পেয়েছেন। তোদের এর প্রতিশোধ নিতে হবে!’ কথা শুনে আমাদেরও মন খারাপ হয়ে গেল। কীভাবে কী করা যায়। হঠাৎ ত্যাঁদড় জানতে চাইল, ‘এই, ওদের বউভাত কবে রে?’
‘আগামী সোমবার’ বন্ধুটা জানাল। লম্বু জানতে চাইল, ‘বউভাত দিয়ে কী হবে?’ ততক্ষণে আমি বুঝে ফেলেছি ত্যাঁদড়া কী করতে চায়। ভোলাও বুঝতে পেরে বলল, ‘বুঝতে পেরেছি কী করতে চাস। আমাদের মেয়ে, তাই ওদের সঙ্গে তো আর মারামারি করা যাবে না সুতরাং হয়ে যাক খাবারের যজ্ঞ।’ বন্ধুর সঙ্গে কথা ঠিক হলো, বউভাতে সিংহরা হাজির থাকবে।
আমাদের মাঝে ঠিক করা ছিল, খাওয়া শুরু হলে আমরা প্রথম ব্যাচেই বসব। আমরা তা-ই করলাম। খাওয়া শুরু হলে আমরা আমাদের মতো করে খাওয়া শুরু করলাম। মোটামুটি প্রতিজন কুড়ি কেজি করে খাসির মাংস, দুটি করে মুরগি, এক কেজি করে পোলাও এবং প্রত্যেকে এক হাঁড়ি করে দই এবং দশটা করে রসগোল্লা। আমাদের মুরব্বিরা বিষয়টি বুঝতে পেরে ছেলেপক্ষকে কিছু বুঝতে না দিয়ে তাদেরকে বলল, ‘আমাদের খাওয়া নিয়ে চিন্তা করবেন না, ওরা খুশি থাক।’
খাওয়া-দাওয়া শেষ। ছেলেপক্ষের খাওয়ায় ভালোই টান পড়েছে, পরের মেহমান খাওয়ানো নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায়। তখনই টিকটিকি আর লম্বু মিনমিনিয়ে বলা শুরু করল। দোস্ত, পেটটা তো ঠিকমতো ভরলো না। একটু দেখ না আরও কিছু করা যায় কিনা!
টিকটিকির কথা শুনে অন্যরা ঢেকুর তুলতে শুরু করল। আর তখনই আষাঢ়ের আকাশে মেঘের গর্জনে সবাই চমকে উঠল। একটু পরেই আষাঢ়ের আকাশ ভেঙে নেমে এলো বৃষ্টির তোড়। মেঘময় আড্ডাটা আরও জমে উঠল আরও দুই মন সুখের আশায়।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close