ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

গ্রিড লাইন ক্ষতিগ্রস্ত, গ্যাস সংকট চরমে
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪, ৫:০৬ এএম  (ভিজিট : ৪৬২)
গ্যাস সরবরাহের জাতীয় গ্রিড লাইনের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট ৪২ ইঞ্চি পাইপলাইন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহেশখালী ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে এই লাইন দিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এতে মেইন লাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় সারা দেশে গ্যাস সংকট আরও বেড়েছে। কমেছে বিদ্যুৎ ও শিল্পকারখানার উৎপাদন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

গ্রাহকদের সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, ৯ জুলাই সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানার অন্তর্গত মাঝেরচর (কাফকো ও বঙ্গবন্ধু টানেলের মধ্যবর্তী স্থানে) কর্ণফুলী নদীর আনোয়ারা প্রান্তে বেজা’র আনোয়ারা সিইপিজেড (চায়না ইপিজেড) নিয়োজিত ঠিকাদার সিআরবিসির (চায়না রোড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড) সাব-কন্ট্রাক্টর ফাস্ট হারবার কনস্ট্রাকশন সিইপিজেডের জেটি নির্মাণের জন্য সয়েল টেস্টের (মাটি পরীক্ষা) কাজ করছিল। এ সময় জিটিসিএলের ৪২ ইঞ্চি ব্যাসেরআনোয়ারা-ফৌজদারহাট উচ্চচাপ গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইনের ওপর রিগ স্থাপন করে কাটারের মাধ্যমে সয়েল টেস্টকালীন কাটারের আঘাতে পাইপলাইন লিকেজ হয়ে যায়। বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে জিটিসিএলের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পাইপলাইনের ওপর রিগের অবস্থান শনাক্ত করেন। তারা দেখতে পান রিগের নিচ দিয়ে বিস্তৃত পরিসরে গ্যাস নির্গত হচ্ছে।

বুধবার সকালে ঠিকাদার লোকবল ও যন্ত্রপাতিসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেছেন বলে জিটিসিএল জানিয়েছে। 

পাইপলাইন দ্রুত মেরামতের কাজ চলছে। কেজিডিসিএলের চট্টগ্রাম রিং মেইন পাইপলাইনে (কাফকো, শিকলবাহা বিদুৎকেন্দ্রসহ) ২৫০-২৬০ এমএমএসসিএফডি হারে সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রেখে পাইপলাইন রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলাকালে জাতীয় গ্যাস গ্রিডের মাধ্যমে টিজিটিডিসিএল ও বিজিডিসিএল অঞ্চলে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় তিতাস ও বাখরাবাদ এলাকায় গ্যাসের স্বল্প চাপ বিরাজ করবে। দেশের অন্য কোথাও সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত মঙ্গলবারই সংকটে পড়তে হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মেরামতের কথা বলা হলেও আসলে কত সময় লাগবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে সাধারণত ২টি এলএনজি টার্মিনাল দিয়ে ১শ’ থেকে ১১শ’ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটি সিঙ্গাপুরে নিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। ফলে কয়েক সপ্তাহ ধরে ৫শ’ কোটি ঘনফুটের মতো এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছিল। এতে পরিবহন এবং শিল্পসহ সব খাতে গ্যাস সংকট তীব্র হয়। এর মধ্যেই আনোয়ারা-ফৌজদারহাট পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এলএনজি সরবরাহ আরও ৩০ কোটি ঘনফুট কমে যাওয়ায় সারা দেশের গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।

পেট্রোবাংলা বলছে, দিন দিন গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু সে হারে উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ছে না। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুটের চাহিদা রয়েছে। রিমালের আগেও ৩০০ কোটি ঘনফুটের বেশি সরবরাহ করা হচ্ছিল। ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত সামিট গ্রুপের এফএসআরইউটি (ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) সিঙ্গাপুরে নিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। এতে ৫০০ কোটি ঘনফুটের মতো সরবরাহ কমে গেছে। এখন পাইপলাইন ফেটে যাওয়ায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে। ১৫০ কোটি ঘনফুটের মতো ঘাটতি রয়েছে।

পেট্রোবাংলার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময়ের আলোকে বলেন, কোনো কারণে পাইপলাইন ফেটে গেলে পুরো লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঠিক কোন জায়গায় ফেটেছে সেটা চিহ্নিত করে পুরো গ্যাস বের করে ফেলতে হয়। তারপর মেরামত কাজ চালাতে হয়। না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এই পাইপ লাইনটি দ্রুত মেরামতের জন্য কাজ চলমান আছে।

তিনি জানান, অন্য যে ভাসমান টার্মিনালটি সিঙ্গাপুরের মেরামতে জন্য আছে সেটি ১৩ জুলাই সেখান থেকে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। আশা করছি আগামী সপ্তাহে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ততদিন সংকটেই থাকতে হবে।

পেট্রোবাংলা ও পিজিসিবির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সোমবার এলএনজি সরবরাহ করা হয় ৬০ কোটি ঘনফুট। মঙ্গলবার পাইপলাইন হঠাৎ ফেটে যাওয়ায় ৪৫ কোটি ঘনফুট সরবরাহ করা সম্ভব হয়। আর বুধবার সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র ২৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস। দেশে যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো রয়েছে সেগুলোর চাহিদা ২০০ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস। চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন ১৩০ কোটি ঘনফুটেরও বেশি। রোজার ঈদের পর থেকে গ্যাস দিয়ে গড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াটের মতো উৎপাদন করা হচ্ছিল। গত মঙ্গলবার সরবরাহ করা হয়েছে ৯৩ কোটি ঘনফুট, বুধবার এই সরবরাহ আরও কমেছে। বুধবার রাত ১টায় গ্যাস দিয়ে সর্বোচ্চ উৎপাদন হয়েছে ৫ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর বিকাল ৫টার দিকে এই উৎপাদন নামে ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটে। বুধবার সারাদিনই লোড শেডিং করতে হয়েছে। সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল দুপুর ২টায় ১৯৩৪ মেগাওয়াট। অন্যদিকে ডে পিক আওয়ার দুপুর ১২টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৭২০ মেগাওয়াট আর উৎপাদন হয়েছে ১২৬০ মেগাওয়াট। এ সময় লোডশেডিং ছিল ১০৫২ মেগাওয়াট।

এই সংকটের মধ্যেই তিতাস গ্যাস জানিয়েছে, গ্যাস পাইপলাইনের জরুরি প্রতিস্থাপন কাজের জন্য বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মোট ১০ ঘণ্টা কলাবাগান, কাঁঠাল বাগান, পূর্ব রাজাবাজার, গ্রিন রোড ও পান্থপথ এলাকায় সব শ্রেণির গ্রাহকের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া আশপাশের এলাকায় গ্যাসের স্বল্পচাপ বিরাজ করতে পারে।

জানা গেছে, গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিকের গ্রাহকরা। দিনের খুব কম সময়ই লাইনে রান্নার জন্য গ্যাস পাওয়া যায়। এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে সারা দিনেও রান্নার মতো পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যায় না। 

তিতাস গ্যাস জানিয়েছে, এলএনজি সরবরাহ কমে যাওয়ায় তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ কমার পাশাপাশি চাপও কমেছে। সরবরাহ না বাড়া পর্যন্ত পরিস্থিতি এমনই থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইন্স) মো. কামরুজ্জামান খান সময়ের আলোকে বলেন, একটি এলএনজি টার্মিনাল মেরামতে আছে, এটি বন্ধ থাকায় গ্যাসের সরবরাহ কমেছে। এর ওপর জাতীয় গ্যাস গ্রিডের আনোয়ারা-ফৌজদারহাট ৪২ ইঞ্চি পাইপলাইন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সরবরাহ আরও কমেছে। পাইপলাইন মেরামতের কাজ চলছে, দুয়েক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। আগামী সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে মেরামতে থাকা এলএনজি টার্মিনালটি চলে আসবে। তখন গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close