ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

অস্তিত্ব সংকটে ‘ফরিদপুরের ছাতা সেলাই করা ইঞ্জিনিয়াররা’
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪, ৪:২১ এএম  (ভিজিট : ২১৪৪)
বৃহত্তর ফরিদপুর জেলা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি জেলা। অতীতে ফরিদপুর অঞ্চলে ছাতার ব্যবসা বেশ জমজমাট ছিল। তখন ছাতার ব্যবসার বিস্তৃতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। দেশের সীমানা পেরিয়ে ভারতের উত্তর প্রদেশ ও কলকাতা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল ফরিদপুরের ছাতার ব্যবসা।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যেত এখানকার ছাতা। বিশেষ করে যশোর, রাজশাহী, সিলেট ও চট্টগ্রামে দারুণ চাহিদা ছিল ফরিদপুরের কারিগরদের তৈরি করা ছাতার। ফরিদপুর অঞ্চলে ছাতার ব্যবসা শুরু হয়েছিল সেই ব্রিটিশ আমলে। বর্তমানে ফরিদপুর জেলা বিশেষ করে ভাঙ্গা ও নগরকান্দা উপজেলার ছাতা ব্যবসায়ী ও কারিগররা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এই এলাকায় বেশ কিছু ছাতার কারখানা গড়ে উঠেছিল। কিন্তু উন্নত প্রযুক্তি আর চায়না ছাতার আগমনে প্রায় বিলুপ্তির পথে ফরিদপুরের ঐতিহ্যবাহী ছাতার ব্যবসা। 

এ বিষয়ে সময়ের আলোর সঙ্গে একান্ত আলাপকালে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিএম কুদরত-এ-খোদা বলেন, ছাতা তৈরি ও ছাতা তৈরির কারিগরদের জন্য অনেক আগে থেকেই বিশেষভাবে পরিচিত ফরিদপুর জেলা। তাই এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য ছাতা তৈরির কারিগর ও কারখানার মালিকরা সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিলে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে। সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে। 

একটা সময়ে দেশের সবচেয়ে বড় জেলা হিসেবে পরিচিত ছিল ফরিদপুর জেলার। তবে কালের পরিক্রমায় দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে ফরিদপুর জেলাকে বিভক্ত করে আরও বেশ কয়েকটি জেলা গঠন করা হয়। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জ, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর। একটা সময় এসব জেলা ফরিদপুরের অন্তর্গত থাকলেও জেলাগুলোকে স্বতন্ত্র জেলায় রূপান্তর করা হয়েছে। ভেঙে টুকরো টুকরো হলেও ফরিদপুর জেলার যে আয়তন রয়ে গেছে তা নেহাত কম নয়। এখনও ফরিদপুর জেলা বাংলাদেশের ১৪তম বৃহৎ জেলা।

বর্তমানে ফরিদপুর জেলার আয়তন ২ হাজার ৭২ দশমিক ৭২ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ১৭ লাখ ৪২ হাজার ৭২০ জন। শিক্ষার হার ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। অতীতে এই জেলার শিক্ষার হার যেমন কম ছিল তেমনি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও ছিল খুবই অপ্রতুল। হাতে গোনা কয়েকটি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন স্থানীয় লোকজন। বর্তমানে অল্প কিছুসংখ্যক ছাতার কারখানা কোনোরকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পেরেছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাটা ছাতা, সিকদার ছাতা, চুকদার ছাতা, কাজী ছাতা ও বাঁশী ছাতা। এ অঞ্চলের দীর্ঘদিনের ছাতা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কারিগররা এখন আর আগের মতো আয় করতে পারেন না। উন্নত প্রযুক্তি ও দেখতে ঝলমলে চায়না ছাতার প্রভাবে এখন আর আগের মতো কদর নেই এখানকার ছাতার কারিগরদের। তাদের কাছে ছাতা মেরামত করতেও মানুষ আর তেমন একটা আসে না। 

সরেজমিন কথা হয় ভাঙ্গা উপজেলার মুনশুরাদ গ্রামের ৭৭ বছর বয়সি বৃদ্ধ ছাতার কারিগর মো. টুকু মিয়ার সঙ্গে। এ সময় তিনি জানান, তার বাবা এই পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। এখন তিনি এই কাজ করছেন। প্রায় ৪৬ বছর ধরে ছাতা সেলাই ও তৈরির কাজ করছেন তিনি। তার তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। কোনোভাবেই আয়ের সাথে ব্যয়ের তাল মেলাতে পারছেন না। আগে আয় বেশ ভালো হতো। কিন্তু এখন আর আয় তেমন হয় না। দৈনিক ৩-৪শ টাকার বেশি রোজগার করা সম্ভব হয় না। প্রতিনিয়িত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে হু-হু করে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছেন না। যে উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠে যায়। বাপ-দাদার আমলে এই ছাতার কাজ শিখেছেন। এটা ছাড়া আর কোনো কাজ পারেন না। তাই জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সংগ্রাম করে অতি কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। 

ভাঙ্গা উপজেলার মাধবপুর গ্রামের আরেক ছাতার কারিগর ৫১ বছর বয়সি বক্কার মিয়া জানান, ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ছাতার কাজ করছেন। কিন্তু এই কাজ করে বলতে গেলে সংসারের জন্য কিছুই করতে পারেননি। এলাকার বাইরে গেলে লোকে তাদের বলে ফরিদপুরের ছাতা সেলাই করা ইঞ্জিনিয়ার। দেশ যখন স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাচ্ছে ঠিক তখনই পিছিয়ে যাচ্ছে ফরিদপুর অঞ্চলের ছাতার কারিগররা। ফরিদপুর জেলায় হাতে গোনা যে কয়েকটি ছাতার কারখানা আছে সেগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হলে যুগোপযোগী উন্নত প্রযুক্তির ছাতা তৈরি করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ। কিন্তু সেগুলোর দাম আকাশছোঁয়া।তাই সরকার যদি তাদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে তারা ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবেন। সেই সঙ্গে ধরে রাখা সম্ভব হবে অতীতের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close