এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। তার ওপর সম্প্রতি নীলফামারী জেলায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কাঁচা মরিচসহ সব ধরণের সবজির দাম।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) নীলফামারী শহরের বড় বাজার, পাঁচ মাথা মোড় বাজার, মাধার মোড় বাজার, উকিলের মোড় বাজরে ঘুরে দেখা যায় কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও কাঁচা মরিচের কেজি ছিল একশো টাকার নিচে। খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আড়তে দাম বেশি তাই আমরাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ সময় কোন দোকানে পণ্যের মূল্য তালিকা দেখা যায়নি।
গত সোমবার (৭ জুলাই) সৈয়দপুর পাইকারি সবজি আড়তে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে এক ধারা ( ৫ কেজি) ৭৫০ টাকা। পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে এলে দ্বিগুণ বেড়ে যায় পণ্যের দাম। আর কয়েক হাত বদল হলে দাম আরও বেশি হয়ে যায়। খুচরা দোকানদারেরা প্রতি কেজি কাঁচা মরিচে লাভ করছেন ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।
দামের বিষয়ে সৈয়দপুর বাইপাস আড়ৎদার সাজু আহমদ বলেন, কাঁচা পণ্যের দাম কখনও বাড়ে আবার কখনো কমে। তবে আড়তে দাম কমলেও খুচরা বাজারে দাম বেশি থাকে কারণ তাদের লাভ করতে হয়। তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছ থেকে কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা কত দামে বিক্রি করে সেটি আমাদের দেখার বিষয় নয়।
সৈয়দপুর শহরের আখতার হোসেন বাদল আধুনিক পৌর সবজি বাজারের খুচরা বিক্রেতা মাহবুব আলী জানান, তার দোকানে পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে দেশি ১১০ টাকা ও ভারতীয় পেয়াজ ১০০ টাকা কেজি দরে। পটল ৪০ টাকা,আলু ৫০ টাকা,রসুন ২৬০ টাকা, আদা ২৪০ টাকা, সোলা কচু প্রতিটি ৩০ টাকা, সজির ( ছোট কচু) কেজি ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, পুঁই শাক, পাট শাক, কচুশাক, কলমিশাক বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। দাম বেড়েছে চিচিঙ্গা, বরবটি, হলুদসহ সব ধরণের সবজির দাম।
ক্রেতা জিকরুল হক বলেন, শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজারে সাড়ে তিনশো টাকা কেজি। আর ওই শুকনো মরিচ খুচরা বাজারে কেজি নেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। বাধ্য হয়ে আমাদের কিনতে হচ্ছে।
রেলওয়ে কারখানা গেট বাজারে আসা ক্রেতা রেলওয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী আফাজউদ্দিন বলেন, বড় আলুর কেজি নিলাম ৫০ টাকা। দেশি ছোট আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজি। তিনি আরও বলেন, কিছুদিন আগেও ওই আলুর কেজি ছিল ২০ টাকা।
নীলফামারী জেলা কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জেলা সাধারণ সম্পাদক আল আমিন বলেন, মিষ্টি কুমড়োর কেজি কিনলাম ৩০ টাকা। অথচ ওই পুরো কুমড়োর দামেই ছিল কয়েকদিন আগে ২০ টাকা। দামের বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা হবে।
ক্যাবের সৈয়দপুর উপজেলা শাখার সভাপতি ওবায়দুল ইসলাম বলেন, কাঁচা বাজারে সবজির দামে যেন আগুন লেগেছে। প্রত্যেকটি পণ্যের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। দাম বাড়তি নেয়া হলেও তাদের দোকানে নেই কোন মূল্য তালিকা।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এবার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের চাষ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বাম্পার। তবুও কাঁচা বাজার কেন যেন অস্থির হয়ে উঠেছে সেটি চিন্তার বিষয়।
সৈয়দপুর ক্ষুদ্র সবজি বাজার সমবায় সমিতির সভাপতি মো. জয়নুল হক বলেন, বর্ষাকাল চলছে। পানিতে অনেক সবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বাজারে সরবরাহ কম। তাই দাম বেড়েছে।
হাট বাজার মনিটরিংয়ের স্থানীয় কর্মকর্তা এ টি এম এরশাদ আলম খান বলেন, আবহাওয়ার কারণে মরিচের উৎপাদন কমেছে উল্টো দিকে বেড়েছে চাহিদা। বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। তবে কেউ যদি অতিরিক্ত দাম নিয়ে থাকেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীমান ভুষণ বলেন, বর্ষাকালে মরিচের গাছ দ্রুত মরে যায়। তাই দেখা দেয় মরিচ সংকট। তবে এ সুযোগে কিছু অসৎ ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে দিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে। এটি যাতে না হয় সেদিকে আমরা নজরে রাখছি।
সময়ের আলো/আরআই