ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কুড়িগ্রামে পানি বিপদসীমায়, লালমনিরহাটে ভাঙন আতঙ্ক
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০২৪, ৭:০৭ এএম  (ভিজিট : ৩০৮)
কুড়িগ্রামে তিন নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে। বন্ধ রয়েছে ৩৪১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠদান কার্যক্রম। বন্যায় সাত দিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে জেলার প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। লালমনিরহাটের স্পার বাঁধসহ তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কে রয়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজন। যমুনার পানি হ্রাস পাওয়ায় জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় সামান্য সরকারি ত্রাণের দেখা মিললেও বেসরকারি ত্রাণ নেই বললেই চলে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুড়িগ্রাম: জেলায় বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদের পানি। ব্রহ্মপুত্রের পানি সামান্য হ্রাস পেয়ে চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ২৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ধরলার পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩১ দশমিক শূন্য ৮ সেন্টিমিটার ও দুধকুমারের পানি পাটেশ^রী পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯ দশমিক ৯৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি ওঠায় জেলার ৯ উপজেলায় ৩৪১টি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাদরাসায় পাঠদান সাময়িক বন্ধ করা হয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকায় জেলার নদ-নদীর অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে সাত দিন ধরে বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষ। অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে গবাদিপশু নিয়ে উঁচু সড়ক ও বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবার সংকটে পড়েছেন চরাঞ্চলের বন্যাকবলিতরা। গবাদিপশুর খাদ্য সংকট নিয়েও বিপাকে পড়েছেন তারা। তবে বানভাসি মানুষের মাঝে সরকারিভাবে কিছু ত্রাণ সহায়তা লক্ষ্য করা গেলেও বেসরকারিভাবে তেমন ত্রাণ সহায়তা দেখা যায়নি।

জেলা সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চর এলাকার বাসিন্দা জালাল আহমেদ বলেন, গত সাত দিন ধরে আমার চরের সব বাড়িতে পানি। গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে পাশের উঁচু একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছি। চাল নেই, চুলা নেই। ভীষণ কষ্টে দিন পার করছি। স্কুল শিক্ষার্থী মিম, মরিয়ম ও হাসান জানায়, সাত দিন ধরে রাস্তাঘাট তলিয়ে আছে। বিদ্যালয়ে এক হাঁটু জল। কবে পানি নামবে। তারপর হয়তো স্কুলে যাব।

অভিভাবক সিরাজুল ইসলাম জানান, চারদিকে পানি আর পানি। বিদ্যালয়ের আশপাশের রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। শিশুদের স্কুলে পাঠানোর কোনো সুযোগ নেই। সদরের আশরাফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন বলেন, বন্যার পানিতে চতুর্দিকে তলিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের চলার পথও ভেঙে গেছে। স্কুলে পানি। সবকিছু বিবেচনায় শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে গত ৩ জুলাই থেকে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন জানান, ৯টি উপজেলায় বন্যায় প্লাবিত বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৫৩টি। এর মধ্যে সাময়িক পাঠদান বন্ধ রয়েছে ২২০টি। জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামসুল আলম জানান, বন্যার পানিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়া ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় ১২১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসার পাঠদান কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বন্যার আওতার বাইরে সেসব প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে। 

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বন্যায় এ পর্যন্ত ৬ হাজার ৬৬০ হেক্টর ফসলি জমি, বীজতলা ও শাকসবজি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে বন্যার পানি না নামা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে না। জেলা সিভিলে সার্জন ডা. মনজুর এ মোর্শেদ বলেন, জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পর্যায়ে বন্যাকবলিত এলাকায় ৮৩টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা মো. আবদুল হাই সরকার জানান, বন্যা মোকাবিলায় ৩১৭ টন চাল, ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ১৯ হাজার ৩০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. সাইদুল আরীফ জানান, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

এদিকে কুড়িগ্রামে কোমর সমান পানিতে ভিজে বানভাসিদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবির সদস্যরা। জেলার উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দইখাওয়াসহ কয়েকটি চরে বন্যার বানভাসিদের সহায়তায় বিজিবির কর্মকর্তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শুকনো খাবার হিসেবে বিশুদ্ধ পানি, মুড়ি, চিনি, চিড়া ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পৌঁছে দেন। এমন দুর্যোগকালীন সময়ে ২৫০টি পরিবার বিজিবির খাদ্যসামগ্রী পেয়ে দারুণ আনন্দিত হয়েছেন। শনিবার শেষ বিকালে উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের একাধিক চরে এসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে বিজিবি।

লালমনিরহাট: জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে তিস্তা নদীর স্পার বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাৎক্ষণিক পাউবো থেকে জিও ব্যাগ ফেলে ধস আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবুও আতঙ্কে রয়েছে ভাটি এলাকার হাজারো পরিবার।

সরেজমিন দেখা যায়, উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টির কারণে তিস্তার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিচু এলাকায় পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। এতে মহিষখোচা গোবর্ধন ২ নং স্পার বাঁধের সংযোগস্থলে ধস দেখা দিয়েছে। ধীরে ধীরে ধস প্রকট আকার ধারণ করলে তাৎক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে জিও ব্যাগ ফেলা শুরু হয়। এতে সাময়িকভাবে ধস আটকালেও পানি বাড়তে থাকায় শঙ্কা রয়েছে। এতে ভাটিতে থাকা চার থেকে পাঁচ হাজার পরিবার ঝুঁকির মুখে পড়েছে। এদিকে তিস্তাসহ জেলার নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করায় শঙ্কায় রয়েছে লাখো মানুষ। ধীরে ধীরে নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ করতে থাকায় নির্ঘুম রাত কাটছে এসব মানুষের। তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে জেলা সদরের খুনিয়াগাছ, গোকুন্ডা, রাজপুর ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। আতঙ্কে রয়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষজন।

সার্বিক বিষয়ে পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টা এই অঞ্চলের নদ-নদীর পানি হ্রাস পেতে পারে। ধস এলাকায় জরুরি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছি।

জামালপুর : যমুনা নদীর পানি ধীর গতিতে হ্রাস পাওয়ায় জামালপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানি ধীর গতিতে কমলেও এখনও ৬টি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের প্রায় আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জাকিয়া সুলতানা জানান, বন্যার পানিতে এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ৯ হাজার ৯৮৫ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। দুর্গত এলাকায় এখনও রাস্তাঘাট, বসতঘর, রান্নাঘর, টিউবওয়েল, শৌচাগার সবকিছুই বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে। জামালপুরের বকশীগঞ্জে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন ও বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

সোমবার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন ও বগারচর ইউনিয়নের বন্যায় প্লাবিত হওয়া এলাকা নৌকাযোগে ঘুরে ঘুরে পরিদর্শন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য নূর মোহাম্মদ। এ সময় তিনি দুটি ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত ১ হাজার ৫০০ জনের মাঝে চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেন। এ ছাড়াও বানভাসি পরিবারের মাঝে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও পানির জার বিতরণ করা হয়।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close