ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

নরসিংদীতে রেললাইনের পাশে ৫ যুবকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ
দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৯ জুলাই, ২০২৪, ১২:২৪ এএম  (ভিজিট : ২৪৪)
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার কমলপুর খাকচক এলাকা। সোমবার সকালে ওই এলাকার রেললাইন ধরে হাঁটছিলেন স্থানীয় কয়েকজন গ্রামবাসী। হঠাৎ কমলপুর খাকচক এলাকায় রেললাইন ও সংলগ্ন স্থানে রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন পাঁচজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন তারা। চিৎকার-হইচই ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তে। 

লোকজন জড়ো হয়ে পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় পাঁচ যুবকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ। এ ছাড়াও এই ঘটনাস্থলের প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে একই ধরনের আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। 

একইস্থানে পাঁচজন এবং কিছু অদূরে আরেকজনের মরদেহ উদ্ধার নিয়ে ওই এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ও কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। এই মৃত্যুকে অনেকেই রহস্যজনক মনে করছেন। কেউ বলছেন, দুর্ঘটনা, আবার কেউ কেউ বলছেন, পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকতে পারে। তবে সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম পরিমল সূত্রধর (৬০)। তিনি শিবপুরের যোশর এলাকার সুরেন্দ্র সূত্রধরের ছেলে। 

নিহতের ছেলে বিপুল সূত্রধর জানান, রোগী দেখার জন্য সকালে রায়পুরায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন তার বাবা। সেখান থেকে কীভাবে তিনি মেতিকান্দা স্টেশন এলাকায় এসেছেন তা জানেন না। পুলিশ বলেছে, সোমবার ভোর রাতে ওই ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

পরে খবর পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ, পিবিআই ও রায়পুরা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এরপর রেললাইন সংলগ্ন বিভিন্ন স্থান থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মরদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। তাদের অধিকাংশের পরনে ছিল প্যান্ট শার্ট। 

ঢাকা জেলার রেলওয়ে পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, এখনও (সোমবার সন্ধ্যা) নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি। তবে নিহতরা সবাই পুরুষ, তাদের বয়স ১৮ থেকে ২৫ এর মধ্য হবে। তারা ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে কাটা পড়েছে, নাকি রেললাইনে বসে থাকা অবস্থায় কাটা পড়েছে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ঘটনার বিস্তারিত  তদন্ত চলছে। তাদের পরিচয় নিশ্চিত করতে নরসিংদীর পিবিআইর একটি টিম কাজ করছে। তবে তাদের অবস্থা দেখে মনে হয়, নিহতরা  প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ।

ঘটনাস্থলের যেমন বর্ণনা: সজেমিন দেখা যায়, ঘটনাস্থল পলাশতলী ইউনিয়নের কমলপুর খাকচক এলাকা, যা মেথিকান্দা রেলস্টেশন প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। ‘ঘটনাস্থল’ পাশাপাশি দুইটি রেললাইনের এক পাশে খাল, অন্য পাশে রায়পুরা-নরসিংদী আঞ্চলিক সড়ক। যদিও সড়কটি রেললাইন থেকে বেশ কয়েক গজ দূরে। তবে এখানে তথা ঘটনাস্থলে কোনো সিগন্যাল ক্রসিং নেই। এলাকাটি বেশ নির্জন। ঘটনাস্থলের দুই দিকে প্রায় আধা কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বাড়িঘর, দোকানপাট বা লোকালয় নেই। স্থানীয়দের তথ্যমতে, সোমবার সকালে রেললাইন ধরে হাঁটতে থাকা কয়েকজন ব্যক্তি সোমবার সকাল ৮টার দিকে পাঁচজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রেললাইনের মধ্যখানে এখানে সেখানে বীভৎস অবস্থায় পড়েছিল পাঁচটি মরদেহ। কারও মাথা থেকে শরীর বিচ্ছিন্ন, আবার কারও শরীর থেকে নানা অঙ্গ-পতঙ্গ বিচ্ছিন্ন। রেললাইনের পাতের ওপর থোক থোক তাজা-শুকনো রক্ত পড়েছিল। মরদেহগুলো ঘিরে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। অনেকেই এমন কয়েকটি তাজা প্রাণ ঝড়ে যাওয়ায় আহাজারি করতে থাকেন। কৌতূহলি জনতার ভিড় জমে যায় ঘটনাস্থল ঘিরে। ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে, নিহতরা কারা- এসব নিয়েই চলছিল জল্পনা। তবে কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি মৃত্যুর স্পষ্ট কারণ।

যা বলছে পুলিশ ও স্থানীয়রা: ঘটনাস্থলে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, নিহতরা ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে কাটা পড়েছে, নাকি রেললাইনে বসে থাকা অবস্থায় কাটা পড়েছেন, নাকি আরও অন্যকিছু তা নিশ্চিত নয়। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ ধারণা থেকে জানায়, ভোরে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী ঢাকা মেইলের নিচে কাটা পড়ে এই ঘটনা ঘটতে পারে। তারা বলছেন, চলন্ত ট্রেনের ওপর থেকে পড়ে তাদের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। আবার তারা রেললাইনের ওপর বসে থাকা অবস্থায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। কিন্তু ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেকেই প্রশ্ন করছিলেন, একসঙ্গে এত ভোরে পাঁচজন কেন রেললাইনের ওপর বসে থাকবেন? অথবা চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে গেলেও তা একইস্থানে সবাই কেন পড়ে গেলেন? নাকি অন্য কোথাও কেউ তাদের হত্যা বা অচেতন করে এখানে রেললাইনের ওপর ফেলে রেখে যায়? 

স্থানীয় এলাকাবাসী আবুল হোসেন বলেন, সকালে স্থানীয় বাজারের যাওয়ার সময় রেললাইনের মাঝে পাঁচজনের মরদেহ দেখতে পাই। পরে পুলিশকে জানানো হলে তারা ঘটনাস্থলে আসে। তবে তাদেরকে দেখে মনে হয় না এরা কেউ এই এলাকার। 

স্থানীয় আবুল কালাম নামের একজন বলেন, ট্রেনে কাটাপড়ে একসঙ্গে এত লোক মারা যাওয়ার ঘটনাটি আমার জীবনে এটাই প্রথম দেখা। তিনি বলেন, সকালে হাঁটতে এসে এই রেললাইনের পাশে অনেক মানুষ দেখে আমিও এখানে কৌতূহলে এসে মর্মান্তিক ঘটনাটি দেখি। তবে একসঙ্গে এতগুলো ছিন্নভিন্ন মরদেহ দেখে আমার মনে সন্দেহ হয়, এটা কি দুর্ঘটনা না অন্যকিছু?

এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে ঢাকাগামী কালনি এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে আরও একজন নিহত হয়। নিহত ৬ জনের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ। এই একজনের মৃত্যুর ঘটনাটিও ওই পাঁচজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। নিহত এই ছয়জনই স্থানীয় ওই এলাকার নন।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close