ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

বানভাসিদের দুর্ভোগ বাড়ছে
প্রকাশ: সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪, ৩:৫২ এএম  (ভিজিট : ৩১২)
উজানের ঢল, ভারী বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানি বেড়ে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সৃষ্ট বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। বন্যাকবলিতদের মধ্যে খাদ্য সংকটের পাশাপাশি তীব্র হচ্ছে গবাদিপশুর খাদ্য সংকটও। বানভাসি পরিবারগুলো বসতবাড়িতে বাঁশের মাচান, নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অধিকাংশের পরিবারে কয়েক দিন ধরে চুলা জ্বলছে না। বন্যাকবলিত এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের সংকট দেখা দিয়েছে। পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ দুর্বিষহ কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। তবে পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে জামালপুর ও সিলেটে। সময়ের আলোর প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবদদাতাদের পাঠানো খবর-

কুড়িগ্রাম : জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। দুধকুমারের প্রবল স্রোতে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে পাউবোর বাঁধ ভেঙে ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী, নুনখাওয়া ও হাতিয়া পয়েন্টে এবং দুধকুমারের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয় পড়েছে প্রায় সোয়া লাখ মানুষ। নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রনি জানান, দুধকুমারের পানি হু হু করে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। তবে ভাঙন এলাকায় এখন পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেউ খোঁজ নিতেও আসেনি। 

জেলার নদ-নদী তীরবর্তী ৪৪টি ইউনিয়নের ৩ শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে ভাসছে। প্লাবিত হয়েছে ঘরবাড়ি, কাঁচা-পাকা সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফসলের ক্ষেত। কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দুর্ভোগ লাগবে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে চাল, শুকনো খাবার ও নগদ টাকা বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। 

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ২৩ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার, হাতিয়া পয়েন্টে ২৪ দশমিক ৯৬ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৬ দশমিক ৫৮ সেন্টিমিটার এবং পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমারের পানি বিপদসীমার ৩০ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার, ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ২৬ দশমিক ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
দিনাজপুর : উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলা পয়েন্টে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ১৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। গতকালের তুলনায় ৪৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে এই নদীর পানি। 

এ ছাড়া জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া পুনর্ভবা, ইছামতি এই প্রধান দুটি নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে আত্রাই নদীর পানি খানসামা উপজেলা পয়েন্টে বিপদসীমার ওপরে থাকায় উপজেলার ৫নং ভাবকী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের চাকিনিয়া গ্রামের বগুড়াপাড়া প্লাবিত হয়েছে।

দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, রোববার দুপুর ১২টায় জেলার খানসামা উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ১৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকালের তুলনায় এই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৩ সেন্টিমিটার। নদীর এই অংশে বিপদসীমা ৪৩ দশমিক ৭০ মিটারের বিপরীতে প্রবাহিত হচ্ছে ৪৫ দশমিক ৫০ মিটারে। আত্রাই নদীর পানি চিরিরবন্দরের ভূষিরবন্দর পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৯ দশমিক ১৫ মিটারের বিপরীতে প্রবাহিত হচ্ছে ৩৮ দশমিক ৬৬ মিটার। এ ছাড়াও শহরের পাশঘেঁষা পুনর্ভবা নদীর পানি বর্তমানে প্রবাহিত হচ্ছে ৩২ দশমিক ৪৮ মিটার ওপর দিয়ে। পুনর্ভবা নদীর বিপদসীমা ৩৩ দশমিক ৫০০ মিটার। এ ছাড়াও ফুলবাড়ী উপজেলা পয়েন্টে ইছামতি নদীর পানি প্রবাহিত হচ্ছে ২৭ দশমিক ২৭ মিটার ওপর দিয়ে।

দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সিদ্দিকুর জামান নয়ন সময়ের আলোকে জানান, রোববার দুপুর ১২টায় জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রধান তিনটি নদীর মধ্যে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ১৮০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। এ ছাড়াও পুনর্ভবা, ইছামতি এই প্রধান দুই নদীর পানি আরও বেড়ে বিপদসীমা অতিক্রম হতে চলেছে। তবে উজানের ঢল আর টানা বৃষ্টিপাত হলে অন্যান্য নদীগুলোর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।

টাঙ্গাইল : জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পানির তোড়ে নদী-তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার রাস্তা-ঘাট ভেঙে নদীর পানি তীব্র গতিতে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। রোববার সকাল ৯টায় টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার সব নদীর পানিই বৃদ্ধি পেয়েছে। ঝিনাই নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে আট সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ি পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার, ফটিকজানি নদীর পানি নলচাপা ব্রিজ পয়েন্টে ছয় সেন্টিমিটার, বংশাই নদীর পানি কাউলজানী পয়েন্টে সাত সেন্টিমিটার, মির্জাপুর পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার এবং মধুপুর পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

বগুড়া : যমুনার পানি দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে তা বিপদসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সারিয়াকান্দি, সোনাতলা উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিন উপজেলার ১ হাজার ৩৫৬ হেক্টর জমির পাট, রোপা আমনের বীজতলা, সবজি ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। ৩৬টির বেশি স্কুলে পানি ওঠায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হক জানান, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় যমুনার পানি শনিবার দুপুরে বিপদসীমার ৫৬ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে এসব উপজেলার চরগুলোর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার কর্নিবাড়ি, কামালপুর, হাটশেরপুর, ফুলবাড়ি পানিতে প্লাবিত হয়েছে। 
জামালপুর : জেলায় যমুনা নদীর পানি সামান্য হ্রাস পাওয়ায় জামালপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদী পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি ধীরগতিতে কমলেও এখনও ৬টি উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জাকিয়া সুলতানা জানান, বন্যার পানিতে এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ৭ হাজার ৬৭২ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে আউশ, রোপা-আমন বীজতলা, পাট, তিল, মরিচ, ভুট্টা, আখ, কলা ও শাকসবজি। বন্যার পানি কিছুটা কমলেও এখনও উপজেলাগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। বন্যাকবলিত এলাকায় বিস্তৃীর্ণ ফসলের মাঠ বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় এলাকাগুলোতে গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ পশুদের খাওয়ানোর জন্য দূর-দূরান্ত থেকে নৌকাযোগে গো-খাদ্য সংগ্রহ করে নিয়ে আসছেন। 

সিলেট : জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। প্রতিদিনই কমছে সুরমা, কুশিয়ারাসহ সব নদীর পানি। তবে গতকাল রোববারও এ নদী দুটির পানি কানাইঘাট, জকিগঞ্জ, বিয়ানীবাজার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এদিকে বন্যার পানি কমতে শুরু করায় বিভিন্ন উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলো ভেসে ওঠতে শুরু করেছে। বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাটে হাঁটুপানি মাড়িয়ে বন্যার্তদের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে। তবে এখনও যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি বন্যাকবলিত অনেক এলাকায়।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস জানান, উজানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পাহাড়ি ঢল নামছে না। তাই সিলেটের সব নদীর পানি কমছে। তবে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি কমলেও ৪টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close