ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

গ্যাস সংকটের বিরূপ প্রভাব সর্বত্র
প্রকাশ: রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪, ৫:২৮ এএম আপডেট: ০৭.০৭.২০২৪ ৮:০১ এএম  (ভিজিট : ৩৫৩)
রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের চাপ না থাকায় গাড়ির লাইন থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শিল্প-কারখানা এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে ব্যাহত। 

সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিকের গ্রাহকরা। দিনের খুব কম সময়ই লাইনে রান্নার জন্য গ্যাস পাওয়া যায়। এমন অনেক এলাকা আছে যেখানে সারাদিনও রান্নার মতো পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যায় না।

গত দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীর বেশিরভাগ এলাকায় গ্যাস সংকটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, যেসব এলাকায় আগে পাওয়া যেত সেসব এলাকায়ও গত দুই সপ্তাহ ধরে গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় দিনের বেলায় গ্যাস মিললেও নিভু নিভু করে জ্বলে চুলা। আবার বিনা ঘোষণায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাও নিয়মিত হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে হোটেল থেকে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে নতুবা এলপিজি সিলিন্ডার ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে মাসের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

পেট্রোবাংলা বলছে, দিন দিন গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু সে হারে উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ছে না। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুটের চাহিদা রয়েছে। রিমালের আগেও ৩০০ কোটি ঘনফুটের বেশি সরবরাহ করা হচ্ছিল। ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত সামিট গ্রুপের এফএসআরইউটি (ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট) সিঙ্গাপুরে নিয়ে মেরামত করা হচ্ছে। এতে ৫০০ কোটি ঘনফুটের মতো সরবরাহ কমে গেছে। সে জন্য সংকট দেখা দিয়েছে। এটি মেরামত করতে ১ মাস লাগবে। চলতি মাসের মাঝামাঝি এটি দেশে এলে এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে।

পেট্রোবাংলার ওয়েব সাইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বুধবার সরবরাহ করা হয়েছে ২৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা হয়েছে ৯৭৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস।

জানা গেছে, দেশে যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো রয়েছে সেগুলোর চাহিদা ২০০ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস। চাহিদানুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন ১৩০ কোটি ঘনফুটেরও বেশি। রোজার ঈদের পর থেকে গ্যাস দিয়ে গড়ে ৭ হাজার মেগাওয়াটের মতো উৎপাদন করা হচ্ছিল। গ্যাস সবরাহ কমে যাওয়ায় এখন সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এই ঘাটতি পূরণের জন্য তেলভিত্তিক কেন্দ্র চালানো হচ্ছে, না হলে লোডশেডিং করা হচ্ছে। বুধবার রাত ১টা থেকে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা পর্যন্ত গ্যাস দিয়ে গড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে।

এ ছাড়া সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কাক্সিক্ষত গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো কোনো পাম্পে তো গ্যাস পাওয়াই যাচ্ছে না। আবার যেগুলোতে পাওয়া যায় সেখানে দীর্ঘ সারি। অনেক পাম্পে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর গ্যাস পেলেও প্রেসার থাকে না।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গাড়িচালক আহমেদ হাসান জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রিফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে চরম গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাস নেওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবার চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস পাওয়া যায় না। এক হাজার টাকার গ্যাস চাইলে ৫০০ টাকার পাওয়া যায়। এ গ্যাস দিয়ে সারা দিন গাড়ি চলে না। ফলে আবারও গ্যাস নিতে আসতে হয়।

উবার চালকরা বলছেন, সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে গ্যাস নিতে যে সময় অপচয় হচ্ছে, সেই সময়ে আমি দুটি ট্রিপ দিতে পারতাম। কিন্তু সেটি করতে পারছি না। 

এ কারণে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।ফিলিং স্টেশন-মালিকরা বলছেন, চাপ কম থাকলে অনেক সময় পাম্প বন্ধ রাখা লাগে। গত দেড়-দুই মাস ধরে গ্যাসের সমস্যা বেড়েছে। এতে করে পাম্প মালিকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

গ্যাস সংকটের বিষয়ে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্সন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ফারহান নূর ভূঁইয়া সময়ের আলোকে বলেন, কিছু দিন হলো সিএনজি স্টেশনগুলোতে এখন চাহিদামাফিক গ্যাস পাওয়া যায় না। ফলে পাম্প মালিকরা লসের মুখে পড়েছেন। সমস্যার সমাধানে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু সেখান থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে।

অন্যদিকে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাস-সংকটে ভুগছে শিল্প খাত। বর্তমানে গ্যাস সংকটে কারখানার উৎপাদন কমছে, সক্ষমতার ৬০ শতাংশই ব্যবহার হচ্ছে না বলে দাবি করেছেন মালিকরা।

শিল্পোদ্যোক্তাদের অভিযোগ রয়েছে, গ্যাস-সংকটের কারণে তাদের এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত বছরের জানুয়ারিতে সরকার গ্যাসের দাম গড়ে ৮০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়, যা ছিল দেশের ইতিহাসে একসঙ্গে গ্যাসের সর্বোচ্চ মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা। তখন কোনও কোনও শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত। মূল্যবৃদ্ধির আগে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকারিভাবে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল যে, দাম বেশি পড়লেও গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। আগের তুলনায় অতিরিক্ত দাম দিয়েও কারখানাগুলো গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাচ্ছে না।

গ্যাস-সংকটের সমাধান চেয়ে গত মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকারকে চিঠি দিয়েছে বিটিএমএ। এ ছাড়া গ্যাস-সংকটের সমাধান চেয়ে গত সপ্তাহে সরকারের বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিরামিক উৎপাদক ও রফতানিকারক সমিতি (বিসিএমইএ)।

চলতি মাসেই গ্যাসসংকট নিরসন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী মো. সেলিম মিয়া। 

তিনি সময়ের আলোকে বলেন, গ্যাসের কিছুটা সংকট রয়েছে। সব এলাকায় নয়, কিছু কিছু এলাকায় গ্যাসের সংকট রয়েছে। সরবরাহ কম থাকায় এমনটা হচ্ছে। আশা করছি, চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে সমস্যার সমাধান হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইন্স) মো. কামরুজ্জামান খান সময়ের আলোকে বলেন, চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, সে অনুযায়ী সরবরাহ করা যাচ্ছে না। একটি এলএনজি টার্মিনাল মেরামতে আছে, এটি বন্ধ থাকায় গ্যাসের সরবরাহ কমেছে। এটি জুলাইয়ের মাঝামাঝি চালু হতে পারে।

গ্যাসের স্বল্প চাপ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ঝড়ের কারণে আমাদের একটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী ১৪ থেকে ১৫ জুলাই টার্মিনালটি পুনরায় গ্যাস সরবরাহ করলে গ্যাসের সমস্যার সমাধান হবে।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close