ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

মাছ ধরার ফাঁদ নিয়ে ব্যস্ত কারিগররা
প্রকাশ: রবিবার, ৭ জুলাই, ২০২৪, ২:২৫ এএম  (ভিজিট : ৩৮৬)
বর্ষায় বৃষ্টির ছোঁয়ায় বদলে যায় প্রকৃতি। আষাঢ়ের শেষের দিকে খাল, বিল, নদী, নালাসহ চারিদিকে পানিতে টইটম্বুর। বর্ষায় এই নতুন পানিতে দেশি মাছ ডিম পাড়া শুরু করে। ফলে দেশি মাছের বিচরণে ভরে ওঠে নদীনালা। দেশি মাছের স্বাদ নিতে মুখিয়ে থাকে গ্রামের আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। গ্রামে এ সময়টিতে চাই-বুছনা (মাছ ধরার দেশিয় ফাঁদ) পেতে মাছ ধরতে চায় গ্রামের সবাই। ফলে প্রতি বর্ষা গ্রামে নিয়ে আসে উৎসবের আমেজ। আর এই উৎসবকে আরও জমজমাট করে তুলতে মৌসুমি আয়ে চাই-বুছনা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগররা। চাহিদার সামাল দেওয়ার পাশাপাশি এটি হয়ে উঠছে তাদের বাড়তি আয়ের পথ। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়নের বারইকরণ ও সরই গ্রামে চাই-বুছনা ও জাল বুননে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। ঝালকাঠির এই দুই গ্রাম মূলত পান চাষের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু পান চাষের পাশাপাশি মৌসুমি কাজ হিসেবে স্থানীয়রা বেছে নিচ্ছেন চাই-বুছনা ও জাল বুননের কাজটিও। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চাই তৈরি করছেন এমন কারিগররা তো আছেনই, পাশাপাশি অন্যান্য শ্রমজীবীরাও বর্ষার এ সময়টিতে হয়ে উঠছেন চাই-বুছনা ও জাল বুননে পটিয়সী। কেবল ঘরের কর্তা ব্যক্তি নয়, পরিবারে বুনন কাজে সহযোগিতা করছে স্ত্রী, পুত্র, ভাই, বৃদ্ধ মা ও বাবা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনেকটাই এগিয়ে যায় এ বুননের কাজ। এমনটাই জানালেন সরই গ্রামের কারিগর দেলোয়ার হোসেন।

কারিগর দেলোয়ার হোসেন বলেন, মাঘ মাসে চোখের দৃষ্টিতে অনুমাননির্ভর করে ১২০ থেকে দেড়শ’ টাকায় প্রতিটি বাঁশ কেনা হয়। এরপর বাঁশ নির্দিষ্ট আকৃতি অনুযায়ী কেটে পানিতে ভিজিয়ে রেখে শলা তৈরি করতে হয়। প্রতি সপ্তাহের ৩ দিন বাঁশ থেকে শলা তৈরি করি এবং বাকি ৪ দিন রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। প্রতিটি বুছনা তৈরিতে ২২০ থেকে ২৫০টি শলা লাগে। একটি ভালো বাঁশ থেকে ৩টি বুছনা তৈরি করা যায়। মাঘ মাস থেকে এ কাজ শুরু করেছি আশি^ন মাস পর্যন্ত চলবে। আমার এ কাজে আমার পরিবারের সবাই সহায়তা করে। মূলধনের অভাবে ইসলামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে প্রতি বছরই কাজ করি।
তিনি আরও বলেন, একেকটি বুছনা বিক্রি করি ৩৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। ঝালকাঠি স্টেডিয়ামের মোড়ে প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারে ৬০টি বুছনা নিয়ে বিক্রি করি। আমার কাছ থেকে অন্য বিক্রেতারা পাইকারি কিনে নেয়। সংসারের খরচ, বাবা-মায়ের চিকিৎসা খরচ, ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার খরচ এবং ঋণ শোধ করে সব মিলিয়ে বছরের আয়-ব্যয় সমান সমান থাকে। সরকারি সহায়তায় সহজ শর্তে এবং বিনা সুদে ঋণ পেলে একটু ভালোভাবে জীবন কাটানোর আশা প্রকাশ করেন দেলোয়ার ও তার পরিবার।

বুননের পর কারিগররা নিজেরাই এসব চাই-বুছনা জেলার এক হাট থেকে অন্যহাটে নৌ ও সড়ক পথে সরবরাহ করেন। তবে চলতি মৌসুমে বুনন ও বিক্রয় কাজেই ব্যস্ত থাকেন তারা।

নলছিটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, দেলোয়ারের কার্যক্রম কুটির শিল্পের আওতায় পড়ে। আর্থিক সমস্যার কারণে এই কারিগররা ভালোভাবে ব্যবসা করে উঠতে পারছে না। আর্থিক সহায়তা পেলে সচ্ছল হতে পারত।

ঝালকাঠি বিসিকের সহকারী মনিটরিং এবং মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মো. আল আমিন বলেন, তারা আমাদের কাছে আসলে নিয়মানুযায়ী প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

সময়ের আলো/আরএস/




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close