শরীয়তপুরে বৃক্ষমেলার নামে চলছে তামাশা। জেলার গোসাইরহাট উপজেলায় দশ দিনব্যাপী বন বিভাগের বৃক্ষমেলার মাঠজুড়ে দেখা যায় প্রসাধনী, ফুসকা-চটপটিসহ বিভিন্ন দোকানের পসরা। অন্যদিকে মেলার এক কোণে একটি মাত্র গাছের চারা বিক্রির দোকান দেখতে পাওয়া যায়। শনিবার (৬ জুলাই) সরেজমিন দেখা মেলে এই চিত্রের। এ ঘটনায় মেলায় আগত দর্শকরা গাছের সঙ্গে তামাশা চলছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চলতি মাসের ১ তারিখ উপজেলা পরিষদের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে মেলাটি শুরু হয়।
এদিকে শরীয়তপুর বন বিভাগের নামে আয়োজন করা হলেও এই মেলা সম্পর্কে কিছুই জানে না বন বিভাগ। অথচ মূল ফটকে মেলার আয়োজক হিসেবে বন বিভাগ লেখা রয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের দাবি, মেলাটির আয়োজক বন বিভাগ। সার্বিক সহযোগিতা করেছে উপজেলা প্রশাসন।
গোসাইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আহমেদ সাব্বির সাজ্জাদ বলেন, মেলাটি বন বিভাগ আয়োজন করেছে তা মূল ফটকে লেখা রয়েছে। মেলাকে সার্বিক সহযোগিতা করছে উপজেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর বন বিভাগের বন কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, মূল ফটকে কী লেখা রয়েছে তা আমার জানা নেই। গোসাইরহাটে মেলা করার জন্য বন বিভাগের কোনো বরাদ্দ নেই। কোনো আয়োজনও বন বিভাগ করেনি। নার্সারি মালিক সমিতির আবেদনের পরে একদিন মিটিংয়ে জেলা প্রশাসন বলেছিল উপজেলা পর্যায়ে বৃক্ষমেলা আয়োজন করার জন্য। সেদিন মেলার জন্য আমাদের কোনো বরাদ্দ নেই বলে আমরা জানিয়েছিলাম। গোসাইরহাটে বৃক্ষমেলার আয়োজন হয়তো উপজেলা প্রশাসন করেছে। আয়োজকের স্থলে বন বিভাগের নাম তারা হয়তো ভুলে লিখেছে।
তবে স্থানীয় পরিবেশকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, এই মেলা দিয়ে উপজেলায় বৃক্ষরোপণের কোনো উপকার হবে না। বরং মানুষ গাছের চারা রোপণ করার জন্য যে টাকা বরাদ্দ রেখেছিল সেই টাকায় বৃক্ষমেলা থেকে কসমেটিকস, প্রসাধনী কিনে আচার-ফুসকা খেয়ে বাড়ি যাবে।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, মেলায় ৪০টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মুখরোচক খাবার ফুসকা-চটপটি, কসমেটিকস, প্রসাধনীসহ শিশুদের খেলনার বিভিন্ন রাইড দিয়ে সাজানো ৩৯টি দোকান, এক কোণে পড়ে রয়েছে মান্নান নার্সারি নামে একটি গাছের চারা বিক্রির দোকান। গাছের চারা বিক্রির ওই দোকানটিতে চলছে বিক্রির খরা। মেলার অন্যান্য দোকান মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাদের গড় বিক্রি প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। উপজেলা প্রশাসন বৃক্ষমেলায় আসা দোকান মালিকদের কোনো ভাড়া দিতে হয় না বলে জানালেও দোকানদারদের মধ্যে অনেকেই জানিয়েছেন প্রতিদিন এক হাজার বা তার চেয়ে কিছু কমবেশি ভাড়া দিতে হয় আয়োজক কমিটিকে।
মেলার একমাত্র নার্সারি দোকানের কর্মচারী নাজমুল জানান, মানুষ এখন আর আগের মতো গাছ কিনে না। দোকানে এসে মানুষ গাছের নাম ও দাম জিজ্ঞেস করে চলে যায়। অধিকাংশ মানুষ মেলার নৌকা ও নাগরদোলায় চড়ে আনন্দ করে, গাছ কিনে না। তবে কেউ কেউ গাছ কিনে। গাছের প্রতি মানুষের তেমন কোনো আগ্রহ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দোকানদার বলেন, দশ দিনব্যাপী এই মেলায় বৃষ্টির কারণে তেমন বিক্রি হচ্ছে না। কিন্তু প্রতিদিন এক হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে মেলা আয়োজক কমিটিকে। বিক্রি না হলে দশ দিনে ১০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে তেমন লাভ হবে না আমাদের।
মেলার একপাশে রয়েছে ভূতের বাড়ি। শিশুদের বিনোদনের জন্য এই ভূতের বাড়ির আয়োজন করা হয়েছে। ভূতের বাড়ির কর্মচারী জাকির বলেন, আমি প্রতিটি টিকেট ৪০ টাকায় বিক্রি করি। প্রতিদিন ১০ হাজার টাকার বেশি বিক্রি হয়। ভাড়ার বিষয়টি মালিক পক্ষ জানে, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।
মেলার আগত দর্শনার্থী জামশেদ বেপারি বলেন, আমি গতকালও মেলায় এসেছিলাম। আমার কাছে বিষয়টি অস্বস্তিকর লাগছে। ভেবেছিলাম মেলায় বিভিন্ন ধরনের অনেক গাছ পাওয়া যাবে। দেখলাম তেমন গাছ নেই। মনে হয় বাণিজ্য মেলায় এসেছি। এই মেলাটি উপজেলাবাসীর জন্য কোনো সুখবর নয়। কারণ বৃক্ষমেলায় বৃক্ষই নেই।
বৃক্ষমেলার বিষয়ে কিছুই জানেন না নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন বাবলু মৃধা। তিনি বলেন, আমি ঢাকায় ছিলাম। মেলা কোথায় হচ্ছে, কীসের মেলা হচ্ছে এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।
সময়ের আলো/আরআই