প্রকাশ: শনিবার, ৬ জুলাই, ২০২৪, ৫:০৯ পিএম (ভিজিট : ৩৪৮)
কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী, নুনখাওয়া ও হাতিয়া পয়েন্ট পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা এবং গ্রামের পর গ্রাম। প্লাবিত হয়েছে নদ-নদী তীরবর্তী ৪৩ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ২ শতাধিক গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। তবে জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে দুর্যোগ কবলিত মানুষের সংখ্যা ৬২ হাজার ২০০।
শনিবার (৬ জুলাই) সকালে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ও হাতিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে, দুধকুমার নদের বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ১ সেন্টিমিটার, তালুক শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১০সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষজন। বানভাসী পরিবারগুলো বসতবাড়িতে বাঁশের মাচান, নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অধিকাংশ পরিবারে ৫দিন ধরে চুলা জ্বলছে না। বন্যার পানিতে ভেসে গেছে তাদের গৃহপালিত পশুপাখি। চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট। বানভাসীদের অনেকেই গবাদি পশুসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলের কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
বানভাসীদের মাঝে খাদ্য, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও শুকনো খাবারের এবং জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে বন্যা কবলিত মানুষ।
জেলা সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়নের শুকুর বাজার এলাকার আব্দুল কাদের বলেন, বন্যার পানি হু হু করে বাড়ছে। আমাদের ঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। কোথায় আশ্রয় নিবে চিন্তা ভাবনা করে দিশা পাচ্ছি না।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল গফুর বলেন, আমার ইউনিয়নের অনেক চর ও দ্বীপ চর তলিয়ে গেছে। অনেক কষ্টে বসবাস করছে চরের মানুষ। এছাড়াও কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কের দুটি স্থানে পানি ওঠায় যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এ ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. বাবলু মিয়া জানান, এ ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। বন্যায় দুর্গতদের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান জানান, জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্রসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি আরও ৪৮ ঘণ্টা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ব্রহ্মপুত্রের পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার জানান, এখন পর্যন্ত বানভাসীদের জন্য ৯ উপজেলায় ২৮২ মেট্রিক টন চাল ও ২১ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা বিতরণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মজুত আছে ৩৯৫ মেট্রিক টন চাল ও ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা । ৫০০ প্যাকেট শুকনা খাবার। যা পর্যায়ক্রমে বিতরণ করা হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, সরকারের নির্দেশনায় স্থানীয় প্রশাসন বন্যার্তদের পাশে থেকে দুর্ভোগ কমাতে সবধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
তিনি আরও জানান, জেলার ৯টি উপজেলার মধ্যে ৮ উপজেলা বন্যাকবলিত। ৪০৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র আশ্রয় নিয়েছেন এক হাজার ২৪৬ জন। ইতিমধ্যেই ৭ উপজেলায় ২ হাজার ৮৫০টি পরিবারের মাঝে ২৮ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়। এছাড়াও ২৯১ মেট্রিক টন চাল, ২০ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও সাড়ে ১৫ হাজার শুকনা খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সময়ের আলো/আরআই