টানা ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের বাসিন্দারা চিন্তায় পড়ে গেছেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে পাহাড় ধসের আতঙ্ক। টানা বৃষ্টি পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন তারা। সিলেট, সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয়রা ফের বন্যা আতঙ্কে ভুগছেন। অনেক রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় দুর্ভোগ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম): টানা ভারী বর্ষণে কেরানীহাট-বান্দরবান মহাসড়কে পানি উঠেছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত
থাকলে সড়কটি পুরোপুরি তলিয়ে গিয়ে বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সোমবার বিকালে সরেজমিন দেখা যায়, টানা ভারী বর্ষণের ফলে কেরানীহাট-বান্দরবান মহাসড়কের দস্তিদার হাটের পূর্বে গ্রীণটাচ কনভেনশন সেন্টার এলাকায় সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারী বর্ষণের কারণে সাঙ্গু ও ডলু নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অব্যাহত বর্ষণের কারণে আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। দিনের বেলায় যেমন-তেমন হলেও বৃষ্টির কারণে রাতের বেলায় অনেকটা নির্ঘুম সময় কাটে নদী তীরের মানুষের।
স্থানীয়রা জানান, গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যার কথা এখনও ভুলতে পারেননি তারা। টানা বৃষ্টিপাতে এখন নতুন করে চিন্তায় আছেন। অব্যাহত বৃষ্টি তাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাবেন।
ছদাহা ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. আলী বলেন, গত বছরের ক্ষতি এখনও কাটেনি। টানা বৃষ্টিপাতে এখন পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে কেরানীহাটের সঙ্গে ছদাহায় যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মো. হাসান নামে আরেকজন জানান, আমরা যারা নদীর পাড়ে আছি তারা খুবই আতঙ্কে আছি।
উপজেলার বাজালিয়া ইউনিয়নে পাহাড়ের পাদদেশে ও ঝুঁকিপূণভাবে অবস্থানরত লোকজনকে সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য অনুরোধ করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাপস কান্তি দত্ত। অবস্থার অবনতি হওয়ার আগেই উত্তর বাজালিয়া সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় গ্রহণের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের অনুরোধ করেন তিনি।
আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃষ্টিপাত আরও কয়েক দিন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টিপাতের কারণে সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে, পাহাড় ধসের শঙ্কাও আছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের আগস্টে ভয়াবহ বন্যায় সাতকানিয়া উপজেলার বেশিরভাগ এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। কেরানীহাট তলিয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ও কেরানীহাট-বান্দরবান মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল। উপজেলা সদরের সঙ্গে অনেক এলাকার লোকজনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
সিলেট: জেলায় আবারও শুরু হয়েছে অতিবৃষ্টি। দিনভর থেমে থেমে ঝরেছে বৃষ্টি। সোমবার ভোররাত থেকে টানা বৃষ্টির ফলে সিলেটের নদ-নদীর পানি বাড়ছে। সিলেট আবহাওয়া অফিস সোমবার সকালে জানিয়েছে, রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৭ ঘণ্টায় সিলেটে ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী কয়েক দিন আরও বৃষ্টি বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সোমবার সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি রয়েছে বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার ওপরে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাস জানান, পূর্বাভাস অনুযায়ী সিলেটে চলতি সপ্তাহে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। সিলেট ও চেরাপুঞ্জিতে অতিবৃষ্টির কারণে বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুনামগঞ্জ: উজানের পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিপাতের ফলে সুনামগঞ্জের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ^ম্ভরপুর, সুনামগঞ্জ সদরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে সোমবার দুপুর ১২টায় বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে পৌর শহরের সাহেব বাড়ি ঘাট, আরপিন নগর, নতুন পাড়ার রাস্তাঘাট। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুরে সুরমা নদীর পানি বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক উপচিয়ে হাওরে পড়ছে। এতে সড়কে যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার দুর্গাপুরে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় তাহিরপুরের সঙ্গে সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লালপুর গ্রামের বাসিন্দা জমির মিয়া জানান, কয়েক দিন আগেও পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে গিয়েছিল। গতকাল রাত থেকে আবার রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। খুবই ভোগান্তিতে আছি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ছাতক পয়েন্টে প্রবাহিত হচ্ছে ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, সুনামগঞ্জে নদ-নদীর পানি ইতিমধ্যে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, বন্যা হলে মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকারি পর্যাপ্ত ত্রাণও মজুদ আছে।
সময়ের আলো/জিকে