ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

পরোয়া করছে না ব্যবসায়ী
প্রাচীন বটগাছ হত্যা গড়ালো আদালত পর্যন্ত
প্রকাশ: সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪, ১১:৫৫ পিএম  (ভিজিট : ৪১২)
২০২২ সালের মার্চে প্রথম দফায় কাটার পর অবশিষ্ট গাছটির দুটি ডাল এবং সবশেষ থাকা একটি ডালের অগ্রভাগ গত ২৩ জুন কেটে ফেলার চেষ্টা করা হয়। ছবি: সময়ের আলো

২০২২ সালের মার্চে প্রথম দফায় কাটার পর অবশিষ্ট গাছটির দুটি ডাল এবং সবশেষ থাকা একটি ডালের অগ্রভাগ গত ২৩ জুন কেটে ফেলার চেষ্টা করা হয়। ছবি: সময়ের আলো

প্রাচীনতম বটগাছটি গত দুই বছর ধরে কাটছিলেন অবৈধ দখলদার তেল ব্যবসায়ী গোলাম মস্তুফা। প্রতিবেশী ব্যবসায়ী, গণমাধ্যম কর্মী, উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে সবার পদক্ষেপ ব্যর্থ হয় ওই ব্যবসায়ীর কাছে। বাজারজুড়ে সগর্বে দাড়িয়ে থাকা বিশালাকার বটগাছটি সব বাধা উপেক্ষা করে গত দুই বছরে এখন অস্তিত্ব বিলীনের পথে। ফলে গাছ হত্যা ঠেকাতে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ালো। এমন ঘটনা শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার নালিতাবাড়ী পৌর শহরে।

শহরের প্রাণকেন্দ্র তারাগঞ্জ মধ্যবাজার। এ শহরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বহু পুরনো বেশ কয়েকটি বিশালাকার বটবৃক্ষ। যেগুলোকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা শহরের অক্সিজেন বলে থাকেন। কালের বিবর্তনে এসব গাছের প্রায় অর্ধেক কেটে নিশ্চিহ্ন করে দখল করা হয়েছে সরকারের খাস জমি। সবশেষ যে ক’টি গাছ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছিল তাদের একটি মধ্যবাজার তেলহাটির গাছটি।

গেল ২০২২ সালের মার্চে প্রথম এ গাছটির হত্যাযজ্ঞ শুরু করে তেল ব্যবসায়ী গোলাম মস্তুফা। গাছটির পাশে থাকা খাস জমি দখল করে গড়ে তোলা দোকানঘর বড় করে পুরো জমিটুকু দখল করতেই তার এ চেষ্টার শুরু। এ দফাতেই গাছটির বড় বড় শাখা-প্রশাখা কেটে অনেকটা ন্যাড়া করে ফেলে। প্রতিবাদের মুখে গাছের কিছু অংশ অবশিষ্ট রেখে এর কিছুদিন পর গাছের কাণ্ড থেকে নিচের অংশ টিনের চালা ও বেড়া দিয়ে দখলে নেয় সে।

এরপর ২০২৩ সালে দফায় দফায় রাতের আধারে কাটতে থাকে বিভিন্ন শাখা থেকে গাছটির বিভিন্ন অংশ। কখনো কুঠার কখনো করাত দিয়ে গাছটির এখানে-ওখানে কেটে তৈরি করে ক্ষত। গোপনে ঢেলে রাখে গাছ হত্যা করার বিভিন্ন উপাদান। একপর্যায়ে নতুন গজিয়ে ওঠা বেশকিছু ডালপালা প্রকাশ্যে কেটে ফেললে পুনরায় ব্যবসায়ী ও গণমাধ্যম কর্মীদের চাপে গাছ কাটা বন্ধ রাখে ওই ব্যবসায়ী।

চলতি বছরের মার্চের দিকে আবারও রাতের আধারে গাছটির অবশিষ্ট ডালপালা কাটতে থাকে গোলাম মস্তুফা। এসময় স্থানীয় আইনজীবী দীপঙ্কর সরকার দীপুর পদক্ষেপে বন্ধ হয় গাছ হত্যার শেষ পর্যায়ের কর্মযজ্ঞ। মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি উঠে এলে অভিযুক্ত গোলাম মস্তুফাকে পুলিশ দিয়ে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে। এসময় ক্ষমা চেয়ে গাছটি না কাটা এবং দখলমুক্ত করে দেওয়ার শর্তে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পায় গোলাম মস্তুফা। গত মে মাসে বদলি জনিত বিদায় নেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। জুনে নতুন নির্বাহী কর্মকর্তা যোগদানের পর গত ২২ জুন রাতের আধারে অবশিষ্ট একটি ডালের একাংশ কাটতে থাকে ওই ব্যবসায়ী। একপর্যায়ে একটি ডাল পাশের দোকানের চালে আছড়ে পড়লে সটকে পড়ে গোলাম মস্তুফা। পরদিন বিষয়টি সবার নজরে এলে আবারও শুরু হয় ব্যবসায়ী ও গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতিবাদ। এসময় গোলাম মস্তুফা দিনভর পালিয়ে থাকে। প্রতিবাদের মুখে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে গত ২৯ জুন যোগানিয়া ইউনিয়ন ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা (নায়েব) নেজামুল হক বাদী হয়ে গোলাম মস্তুফার বিরুদ্ধে নালিতাবাড়ী থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে আদালতে পাঠিয়েছে থানা পুলিশ। আদালতের নির্দেশ পেলেই নেওয়া হবে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ।

এদিকে বটগাছ হত্যা চেষ্টায় গোলাম মস্তুফার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি সরকারি খাস জমি উদ্ধারের দাবি তুলে ৩০ জুন মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায় প্রস্তাব আনেন ওই কমিটির সদস্য ও প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মনির।

প্রতিবেশী ব্যবসায়ীরা জানান, গাছটি বছরে পর বছর ধরে আমাদের ছায়া দিয়ে রেখেছে। প্রচণ্ড গরমে যখন সবাই অতিষ্ঠ তখন এ গাছটির ছায়ায় শীতল পরশ পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীরা ছাড়াও শহরে আসা ক্রেতাগণ এতে অনেক উপকৃত হন। কিন্তু গোলাম মস্তুফা আমাদের নিষেধ না মেনে গত দুই বছর ধরে কাটতে কাটতে গাছটি প্রায় শেষ করে ফেলেছে। আমরা এর প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো দুর্ব্যবহার করে।

গাছ কাটার বিষয়ে জানতে গেলে গোলাম মস্তুফা প্রথমদিকে গাছ কাটার বিষয় স্বীকার করলেও শেষদিকে গাছ কাটার বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান। তবে জমিটুকু নিজের বলে দাবি করেন।

নালিতাবাড়ী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল আলম ভুইয়া জানান, আদালতে প্রসিকিউশন পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  প্রাচীন বটগাছ হত্যা-আদালত   শেরপুর  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close