ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

চাকরিতে ব্যর্থ হলেও মিশ্র ফল চাষে সাইদুলের বাজিমাত
প্রকাশ: সোমবার, ১ জুলাই, ২০২৪, ৬:৫১ পিএম আপডেট: ০১.০৭.২০২৪ ৭:০৭ পিএম  (ভিজিট : ৫৪২)
মালটার ফলনে খুশি কৃষক সাইদুল ইসলাম। ছবিটি সোমবার (১ জুলাই) দুপুরে নওগাঁর ধামইরহাটের আগ্রাদ্বীগুন ইউনিয়নের হযরতপুর এলাকা থেকে তোলা। ছবি: সময়ের আলো

মালটার ফলনে খুশি কৃষক সাইদুল ইসলাম। ছবিটি সোমবার (১ জুলাই) দুপুরে নওগাঁর ধামইরহাটের আগ্রাদ্বীগুন ইউনিয়নের হযরতপুর এলাকা থেকে তোলা। ছবি: সময়ের আলো

নওগাঁর ধামইরহাটে আমেরিকান, থাই, চায়না ও দার্জিলিং জাতের মিশ্র ফল বাগান করে এলাকায় রীতিমতো সারা ফেলেছেন কমলা চাষি সাইদুল ইসলাম। তার বাগানের ফল গুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা উন্নত জাতের কমলা, মাল্টা, আম, কলা ও পেয়ারার মত দেখতে বড় এবং সুস্বাদু হওয়ার কারণে স্থানীয় ও দূর দূরান্তের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে কদর বেড়ে যায়। এছাড়াও হাট বাজারে এর চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ভালো দামে বিক্রি হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন মাল্টা চাষি সাইদুল ইসলাম। তিনি উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকার সাবেক প্রধান শিক্ষক মৃত সারাফাত হোসেনের ছেলে। 

স্থানীয় কৃষকেরা সময়ের আলোকে জানান, ‘এই এলাকার চাষাবাদের জমি অনেক উঁচু। পানির স্তর অনেক নিচু হওয়ার কারণে পানির সংকট থাকতো সারা বছর। একারণে গত কয়েক দশক ধরে শুধু গম ও বর্ষালী জাতের ধান ছাড়া অন্য কোন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হতো না। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের পাশাপাশি তরুণ উদ্যোক্তা সাইদুলের মিশ্র ফলের বাগানের সফলতায় অন্যান্য কৃষকেরা ধানের চাষাবাদ ছেড়ে ফলের বাগানের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এ কারণে এ ইউনিয়নে কৃষি বিপ্লব ঘটেছে। অথচ কদিন আগে তা কল্পনা করাও সম্ভব ছিল না। তবে এসব এলাকায় পরিবহন ব্যবস্থার পাশাপাশি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বড় বড় পাইকারি ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি এবং কৃষকেরা যেন ভাল দাম পান তা নিশ্চিত করারও দাবি জানান তারা।’

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ৬৯৫ হেক্টর জমিতে নাগফজলি, আম্রপালি, গোপালভোগ, খিরসাপাতসহ বিভিন্ন জাতের আমের চাষাবাদ করা হয়েছে যার লক্ষ্য মাত্রা ৯ হাজার ৯২৫ হেক্টর মেট্রিক টন। এছাড়াও কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, খেজুর, আমলকি, ড্রাগন, স্ট্রবেরি ও কাজু বাদামসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফল ৯৭০ পয়েন্ট ৫৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। যার লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হয়েছে ১৩৭৪৬ পয়েন্ট ৩৭৫ হেক্টর মেট্রিক টন।

" align=


সোমবার (১ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার সময় উপজেলার সীমান্তবর্তী আগ্রাদ্বীগুন ইউনিয়নের হযরতপুর এলাকায় দেখা যায় এমন চিত্র। ওইসব এলাকায় ধান চাষের পরিবর্তে কৃষকেরা বিস্তীর্ণ মাঠের দুই পাশে গড়ে তুলেছেন নানান জাতের আমের বাগান। এরই একপাশে সাইদুলের মিশ্র ফলের বাগান জুড়ে সবুজ পাতার আড়ালে ঝুলছিল বারি ওয়ান ও বারি ফোর (ভিয়েতনাম) জাতের কমলা। এছাড়াও দার্জিলিং, চায়না ও থাই জাতের কলা। এগুলোর মধ্যে সাগর কলা, জি-নাইন ও অগ্নিশ্বর কলা উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বিদেশি জাতের আমের মধ্যে রয়েছে নাগফজলি, এটপাল, চাকাপিং, সূর্যডিম, কাটিমন, বানানা, আম্রপালি, ল্যাংড়া ও পেয়ারার মধ্যে থাই পেয়ারা, কাজি ও পাতাবাহার জাত উল্লেখযোগ্য।

সাইদুলের বাগানের ফলগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা উন্নত জাতের আম, কলা, কমলা ও মাল্টার মত বড় এবং সুস্বাদু হওয়ার কারণে এর কদর বেড়ে যায় স্থানীয় ও দূর দূরান্তের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের। একারণে সাইদুলের মিশ্র ফলের বাগান দেখতে এবং ফল সংগ্রহ করতে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা, বগুড়া, চট্টগ্রাম, সাপাহারসহ বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ছুটে আসছেন। বাদ যাননি স্থানীয় দর্শনার্থী ও শিশুরাও। শুধু তাই নয়, এসব বাগানের কারণে ওই এলাকার অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানও হয়েছে। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন তারা। 

" align=


দীর্ঘ আলাপচারিতার সময় মালটা চাষী সাইদুল ইসলাম সময়ের আলোকে জানান, নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করার পর একটা চাকরির জন্য ঢাকায় যান। এরপর পাঁচ বছর চাকরির পেছনে ছুটেছেন। চাকরি না পেয়ে বিমুখ হয়ে বাড়ি ফিরে এসে স্থানীয় কৃষি অফিসে পরামর্শে ২০২০ সালের এপ্রিলে ৪০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে ছোট্ট পরিসরে দার্জিলিং জাতের কমলা, মালটা এবং কিছু বড়ই গাছের চারা রোপণ করেন। বাগান থেকে প্রতিবছর ফল বিক্রি করে যে টাকা আয় হয়েছে তা দিয়ে বর্তমানে ১০০ একর জমিতে মিশ্র ফলের বাগান তৈরি করেছেন।

তিনি বলেন, বাগানে মিশ্র ফলগুলোর মধ্যে মালটা বারি ওয়ান জাতের গাছ ৩৫০ পিচ, বাউ-৬ বারোমাসি জাতের ১৩০০ পিচ, দার্জিলিং জাতের কমলা ৬০০ পিচ এছাড়াও অন্যান্য জাতের কমলার গাছ ৫০ পিচ রোপণ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক ভাবে আমের মধ্যে কাটি মন জাতে আম গাছ ১৩০০ পিচ, আম্রপালি ৫৫০, বারি ফোর ৮০০ এবং বানানা জাতের আম গাছ রয়েছে ১৮০ পিচ। এছাড়াও পরীক্ষামূলক ভাবে রোপণ করা আমের মধ্যে সূর্য ডিম জাতের আমগাছ রয়েছে ৭ পিচ, কিং অফ চাকাপাত জাতের আম ৫, রেডপালমার ৫, থ্রি টেষ্ট ৫ পিচসহ প্রায় ১৩ টি জাত রয়েছে। পেয়ারার মধ্যে থাই জাতের চিয়াংমাইসহ অন্যান্য জাতের পেয়ারা রয়েছে ৫ পিচ গাছ।

" align=


স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, দেশের মাটিতে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের মিশ্র ফলের বাগানের এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। সাইদুলের ফলের বাগানের সফলতা দেখে তিনিও ফল বাগানের প্রতি ঝুঁকছেন। 

তরুণ উদ্যোক্তা সাইদুল ইসলাম জানান, ‘চলতি বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাসে দার্জিলিং জাতের মালটা ও অক্টোবর নভেম্বরে বারোমাসি জাতের মালটা হারভেস্টার করা হবে। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী মালটা থেকে ১৪ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হবে। এছাড়াও পেয়ারা থেকে দশ লাখ টাকা, কলা থেকে দুই লাখ ও আম থেকে ১৬ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।’ এছাড়াও ডিসেম্বর মাসে কমলা হারভেস্টারের মাধ্যমে ৬ লাখ টাকাসহ এবছর সব খরচ বাদ দিয়ে ৪৮ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হবে বলে জানান।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ তৌফিক আল জুবায়ের সময়ের আলোকে বলেন, ‘সাইদুল ইসলাম আমাদের আইকন। মিশ্র ফল বাগানের উপর বিভিন্ন সময় পরামর্শ ও নানান ধরনের সহযোগিতা দেওয়ায় তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে পেরেছেন। এখন তার দেখা দেখি স্থানীয় অন্যান্য কৃষক ও বেকার শিক্ষিত যুবকেরাও মিশ্র ফল বাগানের প্রতি ঝুঁকছেন।’ 

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  মিশ্র ফলের বাগান   মিশ্র ফল চাষ   ধামইরহাট-নওগাঁ  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close