ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ভাঙন আতংকে গজারিয়াবাসী
মেঘনায় বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০২৪, ৩:১৯ এএম  (ভিজিট : ৪০৬)
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় মেঘনা নদীতে চলছে বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ। একে তো বর্ষাকাল, তার ওপর গ্রামের সীমানা ঘেঁষে চলছে শতাধিক ড্রেজারে বালু তোলার কাজ। ফলে ভাঙন আতংকে ভুগছেন কয়েকশ পরিবার। এদিকে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে গ্রাম ঘেঁষে বালু তোলার অভিযোগ উঠেছে খোদ গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহর বিরুদ্ধে। 

এ প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর রিপন বলেন, সীমানা অতিক্রম করে বালু উত্তোলনের বিষয়টি অবগত হয়েছি। তাৎক্ষণিকভাবে গজারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যাতে নির্ধারিত সীমানার বাইরে গিয়ে বালু উত্তোলন করা না হয়। 

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ। তার দাবি, সরকারিভাবে ইজারা পেয়েই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট স্থানেই বালু কাটা হচ্ছে, তীর ঘেঁষে নয়। তিনি আরও বলেন, এটা আমার গ্রাম, আমার ইউনিয়ন। আমার জন্মস্থান। ব্যবসা তো সবাই করে। তবে আমার গ্রাম বিলিয়ে দিয়ে ব্যবসা করব না। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলনের বৈধ ইজারা নিয়ে গ্রাম ঘেঁষে বালু উত্তোলনের কাজ চালাচ্ছে ইজারাদার প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এতে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বসতভিটা আর ফসলি জমি মেঘনায় বিলীন হওয়ার আশংকা করছেন গ্রামবাসী। মেঘনা তীরের চর কালীপুরা গ্রামের পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকে রয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। বর্ষায় ওই জমিতে জোয়ারের সময় হাঁটু পর্যন্ত পানি হয়। দিনের বেলায় গ্রাম লাগোয়া ওই জমি থেকে কিছুটা দূরেই ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হলেও রাতের আঁধারে জমি ঘেঁষেই বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ চলে।

উপজেলার চরকালীপুরা, নয়ানগর, রমজানবেগ ও ষোলআনি গ্রাম সংলগ্ন মেঘনার বালু মহাল ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ বালু মহালের ১২৮ একর জুড়ে মেঘনা বক্ষে বালু উত্তোলন করা যাবে। এ বালু মহালটি ইজারা পেয়েছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। সম্প্রতি ওই মহালে শতাধিক ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন শুরু করে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানটি। রাজধানীর দিলকুশার ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মেঘনায় বালু উত্তোলনের কাজ দেখভাল করে আসছেন গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর আহমেদ খান জিন্নাহ। মেঘনা তীরের ওই গ্রাম ঘেষে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার পেছনে ওই উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম উঠে এসেছে গ্রামবাসীর মুখে।

সরেজমিন গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের চরকালীপুরা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে বালু উত্তোলনের এ চিত্র পাওয়া গেছে। এ সময় তারা গ্রাম ঘেঁষে বালু উত্তোলনে অভিযোগ করেন।
উপজেলার চরকালীপুরা গ্রামের বাসিন্দা আব্বাস প্রধানের স্ত্রী নার্গিস আক্তার (৫০) জানান, এ গ্রামের একেবারে নদী ঘেঁষে রয়েছে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্প। এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে ১২০টি পরিবারের। এছাড়া এ গ্রামে আরও ২০০টি পরিবার বসবাস করে আসছে বংশপরম্পরায়। তিন শতাধিক পরিবারের বসবাসের এ গ্রামের অধিকাংশ বাসিন্দার রোজগারের একমাত্র উপায় মেঘনা নদীতে মাছ শিকার। এক কথায় অধিকাংশ পরিবার হতদরিদ্র। নার্গিস আক্তার বলেন, আমাগো চোখের সামনেই গ্রামের জমিগুলোর ধারেই বালু উত্তোলনের জন্য ড্রেজার লাগাইতাছে। চোখে দেখতাছি, তয় বাদ সাধতে পারি না। কিছু কইতে গেলেই মারতে আসে। ভয়ে আছি কহন জানি পুরা গ্রাম কাইটা নিয়া যায়! এমনে কইরা বালু কাটলে তো বর্ষায় আমাগো ঘর-বাড়ি ভাইঙ্গা লইয়া যাইব রাক্ষুসী মেঘনা।

স্থানীয় বাসিন্দা জুলহাস প্রধান (৫৫) বলেন, বর্ষা আইলেই নদীর ভাঙনের ভয়ে আমাগো বুক কাঁপে। এহন আবার গ্রামের কাছেই ড্রেজারে বালু কাটতাছে। আমাগো উপজেলা চেয়ারম্যান জিন্নাহ বড় একটা কোম্পানির সঙ্গে মিলে এ বালু উত্তোলন করতাছে। যেভাবে ড্রেজার লাগাইছে, তাতে গ্রামের জমি ও বসতভিটা এ বর্ষাতেই ভাইঙ্গা যাইব। স্থানীয় আরেকজন আক্কাস প্রধান (৬০) বলেন, গ্রাম লাগোয়া আমার ১২০ শতাংশ জমি আছে। জমির পরই মেঘনা নদী। জমির খুব কাছে মেঘনায় বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ড্রেজারের মাধ্যমে এ বালু উত্তোলন করায় ভাঙন আতংক বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিবাদ করার সাহস নেই আমাদের। প্রতিবাদ করলে ইজারাদারের লোকজন চড়াও হয়। এভাবে বালু কাটলে এ বর্ষায় মেঘনায় ভাঙন দেখা দেবে। আমার ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে। স্থানীয় মামুন প্রধানের স্ত্রী নাজনীন (২১) বলেন, রাতে ঘুম আহে না। কখন জানি ড্রেজারে জমিসহ আমাগো বসতভিটা কাইটা লইয়্যা যায়!

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close