ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সিলেটে বন্যায় সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেকে
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪, ১:১৬ এএম  (ভিজিট : ৩২৪)
দুই দফার বন্যায় সিলেটের সীমান্ত নদীতীরবর্তী গ্রামের বাসিন্দারা সর্বস্ব হারিয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের তীব্র স্রোতে ভেসে গেছে অনেকের বাড়িঘর। লন্ডভন্ড হয়ে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। রাস্তাঘাট ভেঙেচুরে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ হারিয়েছে কয়েকহাজার কৃষক ও খামারি। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির পাশাপাশি প্রাথমিক হিসেবে ৮০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি ধরা হয়েছে সিলেটের বন্যাকবলিত এলাকায়। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট মেরামতে সরকারি বরাদ্দের অপেক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন। 

গত ২৯ মে এবং ১৫ জুন থেকে শুরু হওয়া দুদফা বন্যায় সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জসহ অন্তত ১০টি উপজেলা এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের ২৮টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর তলিয়ে ৯ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বন্যার পানি কমতে শুরু করায় ভেসে উঠেছে ক্ষতচিহ্ন। বানের পানির তোড়ে রাস্তাঘাট যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি নদীতীরবর্তী বিভিন্ন স্থাপনা ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

অনেক স্থানে বন্যার পানিতে ভেসে গেছে কাঁচা ও আধাপাকা বাড়িঘর, মৎস্য খামারের কোটি কোটি টাকার মাছ। বন্যার পানি কমতে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে বিপাকে পড়েছেন বাড়িঘর হারানো মানুষ। এখন মাথাগোঁজার ঠাঁইও নেই তাদের। স্কুল, মাদরাসাসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে নির্বাক অনেকেই। 
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং নয়াগাঙ্গেরপারের আনোয়ারা বেগম ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় সব কিছু হারিয়ে আশ্রয় নেন অন্যের বাড়িতে। ধীরে ধীরে নিজের বাড়ি ফেরার কথা যখন ভাবছিলেন, তখনই গত মে মাসে বন্যার কবলে পড়েন। বাইশের বন্যার পর যখন একটু একটু করে গুছিয়ে নিজের বসতভিটার মাটি ভরাট করে বাড়ি ফেরার স্বপ্নে বিভোর, ফের আঘাত হানে বন্যা। অর্ধনির্মিত ঘর সর্বনাশা বানের পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। 

আনোয়ারা বেগমের মতো আরও ৯ পরিবারের বসতঘর বিলীন হয়ে গেছে বানের পানিতে। টানা দুইবার বাড়িঘর হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন-আনোয়ারা, মাইনউদ্দিন, হাফিজ আহমেদের পরিবারসহ আরও কয়েকটি পরিবার। বাইশের ভয়াবহ বন্যায় তারা ভিটেমাটি হারিয়ে সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েন। কোনোমতে একটি ঘর তৈরি করে বসবাস করে আসছিলেন। এখন মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই তাদের।
আনোয়ারা বেগম বলেন, বাইশের বন্যা চরম ক্ষতি করে গেছে আমাদের। কোনোমতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিলাম। আবারও বন্যার থাবায় সব ভেসে গেছে। আমরা দিশাহারা হয়ে পড়েছি। সরকার পুনর্বাসন না করলে ঘুরে দাঁড়াতে পারব না।

মাইনউদ্দিন ও হাফিজ আহমেদ বলেন, বানের পানি বাড়িঘর, টাকা-পয়সা, চালসহ সব নিয়ে গেছে। বাইশের ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ি হারিয়ে নয়াগাঙ্গেরপার এলাকার ৯টি পরিবার সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ি। ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রামকালে আবারও বন্যায় সর্বস্ব কেড়ে নিয়েছে। 

গাজী মিয়া, মাইনুদ্দিন মিয়া, হাফিজ মিয়া, ময়না মিয়া এবং পারভিন আক্তার বলেন, গত বন্যায় বাড়িঘর ভাঙছে। এবার ঘরের মাটি চলে গেছে। ঘরগুলো মেরামত করতে প্রচুর টাকার দরকার। হাতে কোনো টাকা-পয়সা নেই। একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছি। গত বন্যার থেকে এ বছরের বন্যা আমাদের জন্য আরও ভয়ংকর হয়ে আসে।

এদিকে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে প্রতিদিনই। সব নদ-নদীর পানি কমছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী বুধবার সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে কুশিয়ারা নদীর আমলসিদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। 

বন্যার পানি নামতে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির চিত্রও ভেসেও উঠছে বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে। পানি কমে আসায় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়ছে মানুষ। এর মধ্যেই প্রাথমিকভাবে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, মৎস্য ও কৃষিতে ৭৭৯ কোটি ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলায় পানিবন্দি রয়েছে ৭ লাখ ৮৯ হাজার ১৩১ জন। জেলার ৭৩৪ আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ২৫৮ কেন্দ্রে অবস্থান করছেন ১২ হাজার ৯০৫ জন।

সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ তথ্যানুযায়ী, জেলার ১৩ উপজেলায় আউশ বীজতলা, সবজি ও বোনা আমন ধানের ১৫ হাজার ৫০৬ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার ৯৮ হাজার ৬৫৩ কৃষক। যার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৭৫ কোটি ২১ লাখ টাকা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সিলেট জেলার তথ্যানুযায়ী, বন্যায় সিলেটের ১৩টি উপজেলার ১৬০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। যার আর্থিক পরিমাণ প্রায় ১১৯ কোটি টাকা। সড়ক ও সেতু বিভাগের তথ্যমতে বন্যায় সিলেট জেলার ৪০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। আর্থিক হিসেবে প্রায় ৮৫ কোটি টাকার ক্ষতি।

সিলেট জেলা মৎস্য অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, বন্যায় সিলেট জেলায় ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৬৬ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। জেলার ২১ হাজার ১১১টি পুকুর-দীঘি ও খামারের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের তথ্যানুযায়ী, ২ জুন থেকে শুরু হওয়া প্রথম দফার বন্যায় ২৮টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়। ১৫ জুন থেকে শুরু হওয়া দ্বিতীয় দফার বন্যায় প্লাবিত হয় নগরীর ২৩টি ওয়ার্ড। দুদফা বন্যায় নগরীর ২৫০ কিলোমিটার রাস্তা প্লাবিত হওয়ায় আনুমানিক ৩০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সবমিলিয়ে সিলেট জেলা ও মহানগরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭৭৯ কোটি ৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। তবে এর পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, দুদফা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে জেলা প্রশাসনে পাঠানো হয়েছে। সরকারি বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে। 

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close