ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

মুক্ত অ্যাসাঞ্জ ফিরলেন অস্ট্রেলিয়ায়
যুক্তরাষ্ট্রে সাংবাদিকতার মুক্তি কবে
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪, ১:০২ এএম  (ভিজিট : ২৯২)
উইকিলিকসের সহপ্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ মুক্ত একজন মানুষ হিসেবে নিজ জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ায় ফিরেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নর্দান মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের আদালতে এসপিওনাজ (গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের) মামলা নিষ্পত্তির পর তাকে বহনকারী উড়োজাহাজ গতকাল বুধবার অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় পৌঁছে। তবে অ্যাসাঞ্জমুক্ত হলেও যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রশ্নটি উপেক্ষিতই থেকে গেল বলে মনে করছেন অ্যাকটিভিস্টরা। তারা মনে করছেন, যে জঘন্য কায়দায় অ্যাসাঞ্জকে দোষী সাব্যস্ত করা হলো; তাতে ভবিষ্যতেও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাঁস করলে তাকে ‘অপরাধ’ বিবেচনার সুযোগ থেকেই গেল। সেই তথ্য যতই জনগুরুত্বপূর্ণ হোক না কেন। 

অ্যাসাঞ্জ নতুন দিনের সংবাদমাধ্যম উইকিলিকসের মাধ্যমে ২০১০ সালে পেন্টাগন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লাখ লাখ সামরিক ও কূটনৈতিক গোপন নথি ফাঁস করে দিয়ে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন। ফাঁস করেছিলেন মার্কিন যুদ্ধাপরাধ। এই ঘটনায় ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক অ্যাসাঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত হন।

মার্কিন এসপিওনাজ আইন লঙ্ঘনের ‘দায় স্বীকার’ করে নেওয়ার চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে আপসরফায় পৌঁছানোর পর সোমবার যুক্তরাজ্যের একটি উচ্চ নিরাপত্তার কারাগার থেকে মুক্তি পান অ্যাসাঞ্জ। এরপর চুক্তি অনুযায়ী মঙ্গলবার তিনি যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নর্দান মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জে যান। বুধবার মারিয়ানার রাজধানী সাইপ্যানের আদালত ভবন গিয়ে কথিত দোষ স্বীকারের পর অ্যাসাঞ্জের মামলা শেষ হয়। এবার তিনি পুরোপুরি মুক্ত হন।

সাইপ্যান থেকে সিএনএনের সাংবাদিক টমাস ম্যাংলোনা (তৃতীয়) জানান, আদালতে বিচারক অ্যাসাঞ্জকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কী অপরাধ করেছেন। উত্তরে অ্যাসাঞ্জ বলেন, ‘একজন সাংবাদিক হিসেবে আমি আমার সূত্রকে উৎসাহ দিয়েছি যে-তথ্যকে গোপনীয় বলা হয়েছিল তা আমাকে দিতে। যেন আমি সেই তথ্য প্রকাশ করতে পারি। আমি বিশ্বাস করি যে প্রথম সংশোধনী সেই কার্যকলাপকে সুরক্ষা প্রদান করে।’ অ্যাসাঞ্জ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, প্রথম সংশোধনী এবং এসপিওনাজ আইন একে অপরের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, তবে আমি স্বীকার করি যে, এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় এমন একটি মামলায় জয়ী হওয়া কঠিন হবে।’

নিউইয়র্কভিত্তিক ফ্রিডম অব দ্য প্রেস ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক ট্রেভর টিম বিকল্পধারার মার্কিন সংবামাধ্যম ডেমোক্র্যাসি নাউকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্নে অ্যাসাঞ্জের এই মামলা ছিল টাইম বোমার মতো। তিনি মনে করিয়ে দেন, এসপিওনাজ মামলায় অভিযুক্ত হলেও অ্যাসাঞ্জকে গুপ্তচরবৃত্তিতে অভিযুক্ত করা যায়নি। তবে এসপিওনাজ আইন অনুযায়ী, কেবল গুপ্তচরবৃত্তিই নয়, যে কোনো রাষ্ট্রীয় গোপন নথি গ্রহণ, সংরক্ষণ কিংবা প্রকাশই বেআইনি। ট্রেভর টিম মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিকরা তাই জাতীয় নিরাপত্তা কিংবা রাষ্ট্রীয় নীতিবিষয়ক সাংবাদিকতার প্রশ্নে রাষ্ট্রীয় গোপন নথি প্রকাশ না করার শর্ত মেনেই সাংবাদিকতা করে আসছেন। 

ট্রেভর টিম উদ্বেগ প্রকাশ করেন, অ্যাসাঞ্জের এই মামলার রেফারেন্সকে ব্যবহার করে ভবিষ্যতেও গোপন নথি প্রকাশের কারণে কাউকে সাজা দেওয়ার সুযোগটা থাকল। সেই তথ্য জনগুরুত্বপূর্ণ হলেও। একই উদ্বেগের প্রতিফলন হয়েছে উইকিলিকসের প্রধান সম্পাদক ক্রিস্টিন হাফনসনের কথায়। তিনি বলেন, ‘আমি মোটামুটি নিশ্চিত, সাংবাদিকরা ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট জাতীয় নিরাপত্তার সমস্যাগুলো নিয়ে প্রতিবেদন করার ক্ষেত্রে দ্বিধাবোধ করছেন। কেননা অ্যাসাঞ্জের ঘটনাটি ইতিমধ্যে এমন সংকেত দিচ্ছে ‘আমাদের থেকে দূরে থাকুন। জনস্বার্থে কিছু করা হচ্ছে কি না তা আমরা বিবেচনায় নেব না। আমরা আপনার পিছু নেব।’

দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকার সাবেক সম্পাদক অ্যালান রাসব্রিজার, যিনি উইকিলিকসের সঙ্গে ফাঁস হওয়া নথির কিছু বিষয়বস্তু প্রকাশ করে বৈশ্বিক শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছিলেন, তিনি বলেছেন, এটি ‘খুবই বিরক্তিকর’ যে, যারা রাষ্ট্রের জন্য অস্বস্তিকর তথ্য প্রকাশ করেছে তাদের লক্ষ্যবস্তু করতে গুপ্তচরবৃত্তি আইনগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে। রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘আমি দুঃখিত যে, গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে একটি আবেদন করা হয়েছে। কেননা আমার মনে হয় না, আসলে কেউই মনে করে না অ্যাসাঞ্জ যা করছিল তা গুপ্তচরবৃত্তি।’

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট বলেছে, এমন বিচার বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। সিপিজে সিইও জোডি গিন্সবার্গ বলেছেন, ‘যদিও আমরা তার কারাবাসের সমাপ্তিকে স্বাগত জানাই, তবে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসাঞ্জের পিছু নেওয়াটা একটি ক্ষতিকারক আইনি নজির স্থাপন করেছে। সাংবাদিকরা তথ্য ফাঁসকারীদের কাছ থেকে গোপন তথ্য সংগ্রহ করলে গুপ্তচরবৃত্তি আইনের অধীনে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পথ খুলে দিয়েছে এটি।’

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close