পুত্র ইফাতের ১৫ লাখ টাকায় কোরবানির ছাগল কেনার ঘটনায় আলোচনায় আসা রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউর রহমান এখন দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে থেকে তিনি বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন- এমন তথ্যও সামনে আসছে। এই অবস্থার মধ্যেই বুধবার (২৬ জুন) মতিউর রহমানের সঙ্গে বংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ছবিটি দেখে বোঝা যাচ্ছে- তারা হজ পালন করতে গিয়ে সৌদী আরবে একত্রে ছবিটি তুলেছেন।
গত কোরবানির ঈদের পর থেকেই মূলত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রভাবশালী এই কর্মকর্তাকে নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সেই সঙ্গে একে একে বেরিয়ে আসছে অবৈধ অর্থে গড়া তার অঢেল সম্পদের খোঁজ। এছাড়া তার ও তারা দুই স্ত্রী এবং সন্তানদের বিলাসী জীবনের নানা দিকও প্রকাশ পাচ্ছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে ছবিটি ভাইরাল হওয়ায় বুধবার থেকে মতিউর কান্ডের আলোচনায় নতুন রসদ যোগ হয়েছে। হজ পালনের সময়কার তাদের দুই জনের ছবি বুধবার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ নিজ নিজ ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করেছেন এবং একেকজন বেশ চটকদার ক্যাপশনও দিয়েছেন ছবির সঙ্গে। আবার ছবির নীচে শত শত মানুষ যে যার মতো করে তীর্জক মন্তব্য করেছেন।
ছবিটিতে দেখা গেছে মতিউর রহমান ও গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার-দু’জনই সাদা রঙের তোয়ালে গায়ে দিয়ে রয়েছেন এবং দু’জনের গলাতে ঝুলছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার লোগো সম্বলিত আইডি কার্ডের ফিতা। এছাড়া ছবিটি দেখে মনে হচ্ছে মতিউর রহমান সম্ভবত তার মোবাইলে গভর্নরকে নিয়ে সেলফি তুলেছেন।
সৌদি আরবে হজ পালন করতে গিয়ে তোলা এই ছবিটিই বুধবার দিনভর ফেসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে। আর এই ছবির নিচে অসংখ্য মানুষ যে যার মতো করে মন্তব্য করেছেন। যেমন-ওই ছবির নিচে একজন মন্তব্য করেছে- ‘প্রশাসনিক পাড়ায় গল্প আছে উনারা দুজনে ভালো বন্ধু। একজন আরেকজনের জন্য বেশ করেছেনও বটে। একজন নাকি আরেকজনকে শেয়ার ব্যবসা ধরিয়ে দিয়েছেন। আরেকজন ব্যাংকে পরিচালক হতে দুহাত বাড়িয়ে সহায়তা করেছেন। দুজনের মধ্যে নাকি ধন সম্পদ, পদ পদবিতে কে কতোটা এগোলো এ নিয়ে প্রতিযোগিতাও আছে। এখন দেখছি ধর্মকর্মেও কেউ কারো চেয়ে পিছিয়ে নেই। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদের নেক উদ্দেশ্য কবুল করুক। আমিন।’ এভাবে একেক জন একেক রকম মন্তব্য করেছেন ভাইরাল হওয়া ওই ছবির নিচে।
গত কোরবানির ঈদের আগে ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার খবর প্রকাশিত হওয়ার পর মতিউর রহমান দেশজুড়ে আলোচিত। মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ (লাকী) নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির তিনি ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক।
ইতোমধ্যেই মতিউর রহমান ওরফে পিন্টু, তার দুই স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। একই সঙ্গে তাদের মুঠোফোনে আর্থিক সেবার (এমএফএস) হিসাব ও শেয়ারবাজারের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফলে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব হিসাবে আর কোনো লেনদেন করা যাবে না।
এসব পদক্ষেপের পাশাপাশি ওই আটজনের ব্যাংক, এমএফএস ও বিও হিসাবের যাবতীয় তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ। পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের ব্যাংক হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি ও লেনদেন বিবরণী জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একটি ব্যাংক এ চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিএফআইইউ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। একটি চিঠি দিয়ে ব্যাংক ও এমএফএসগুলোকে গত মঙ্গলবার এ নির্দেশনা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মতিউর রহমান এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট। তার ছেলের ছাগল-কাণ্ডের পর তাকে এনবিআর থেকে সরিয়ে দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। তিনি সোনালী ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। তবে সেখান থেকেও তাকে অপসারণ করা হয়েছে।
দুই স্ত্রীর ঘরে মতিউর রহমানের পাঁচ সন্তান। এর মধ্যে প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের সঙ্গে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। তারা হলেন আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও ফারজানা রহমান ইপ্সিতা। আর দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার লাভলীর ঘরে এক মেয়ে ও দুই ছেলে। তারা হলেন ইফতিমা রহমান মাধুবী, মুশফিকুর রহমান ইফাত ও ইরফানুর রহমান ইরফান।
সময়ের আলো/জেডআই