ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বৃষ্টিতে রাজধানীর সড়ক-অলিগলিতে জলাবদ্ধতা, চরম ভোগান্তিতে ক্ষোভ
টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা, কমবে তাপমাত্রা
প্রকাশ: বুধবার, ২৬ জুন, ২০২৪, ৮:৫১ পিএম  (ভিজিট : ৫১০)
মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে সারাদেশে কমবেশি বৃষ্টি হচ্ছে। বুধবার (২৬ জুন) সকাল থেকে ঢাকার আকাশে ছিল কিছুটা মেঘ, কিছুটা রোদ। এক পর্যায়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি দিয়ে শুরু হয়। পরে বেলা গড়াতেই এর তীব্রতা বাড়ে। একনাগাড়ে ঘণ্টা দুয়েকের ওপরে হওয়া বৃষ্টিতেই ডুবে যায় রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি। এতে সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। একইসঙ্গে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বৃষ্টির মধ্যেই হাঁটু সমান পানি মাড়িয়ে গন্তব্যে যেতে হয়েছে নগরাসীদের। বৃষ্টি হওয়ায় গরম থেকে স্বস্তি মিললেও পানিতে ডুবে থাকা রাস্তা পার হতে গিয়ে অনেককেই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। শহরের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অনিয়ম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগীরা।

বৃষ্টিতে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অধিদফতরে আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, বুধবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ঢাকায় ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। পাশাপাশি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রাম ও সিলেটে।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী ২৮ জুন থেকে টানা ছয় দিন ঢাকাসহ দেশের পাঁচ বিভাগে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি আজ বৃহস্পতিবার থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হবে। তবে বৃষ্টি হলেও ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়; রাজশাহী, ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং খুলনা বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। তাপমাত্রার পূর্বাভাসে বলা হয়, সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তবে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।

বুধবার বৃষ্টিতে রাজধানীর নয়াপল্টন, শান্তিনগর, মালিবাগ, সায়েদাবাদ, শনিরআখড়া, পুরান ঢাকার সদরঘাট, সূত্রাপুর, বংশাল, নাজিমুদ্দিন রোড, আগারগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর গেট নতুন রাস্তা, ধানমন্ডি, খামারবাড়ি থেকে ফার্মগেট, তেজগাঁও ট্রাক স্ট্যান্ড, মোহাম্মদপুর ও বসিলার কিছু অংশ, মেরুল বাড্ডা, ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকা, মিরপুর ১৩, হাতিরঝিলের কিছু অংশ, গুলশান লেকপাড় এলাকার সংযোগ সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি পানিতে ডুবে যেতে দেখা গেছে।

বৃষ্টি থামার পর সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ও যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীর মানুষ। রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকা থেকে রিকশায় নয়াবাজার ব্যবসার কাজে আসেন রুহুল আমিন। তিনি বলেন, নয়াপল্টন এলাকায় বৃষ্টিতে প্রায় হাঁটু সমান পানি হয়েছে। জুতা হাতে নিয়ে প্যান্ট হাঁটুর ওপরে তুলে হাঁটতে হয়েছে। স্বাভাবিক সময় তো ওই এলাকা থেকে হেঁটে মোড়ে এসে বাসে উঠতাম। কিন্তু নোংরা পানির কারণে রিকশা নিতে হয়েছে। অন্যান্য সময় যে রিকশা ভাড়া ৮০ টাকা নিতো সেটা দে'ড়শ টাকা দিতে হয়েছে।

পুরান ঢাকার ছিদ্দিক বাজারে জুতা ব্যবসায়ী ফরিদ হোসেন বলেন, নয়াপল্টন এলাকা পেরিয়ে যখন গুলিস্তান আসলাম তখন এদিকে তেমন পানি ছিল না। তবে বংশাল এলাকা আসতেই আবার সেই পানি। রিকশাচালক রিকশা চালাতে পারছিলেন না পানির কারণে। আরেকদিকে তীব্র জ্যাম। এদিকে বংশাল সড়কে আগে ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য খোঁড়াখুঁড়ি হয়েছিল, সেটা এখনও শেষ হয়নি। জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তা ডুবে যাওয়ায় উঁচু নিচুতে একবার রিকশা থেকে পড়ে গিয়েছি। ঘণ্টাখানেকের এই বৃষ্টি সবাইকে একেবারে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছে।

এদিকে পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকার অলিগলি ডুবে যাওয়ায় ড্রেনের ময়লা আবর্জনা সব ভেসে উঠেছে গলিতে ভেসে উঠতে দেখা গেছে।

অন্যদিকে, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত পানি এড়াতে অনেকেই পায়ে হাঁটা বাদ দিয়ে রিকশায় গন্তব্য যাচ্ছেন। সেই সুযোগে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন রিকশাচালকরা। রিকশাচালকের দাবি, দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে না। রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় রিকশা চালাতে বেশি কষ্ট হয়। তাই বলে কয়ে ১০/২০ টাকা বাড়তি নেয়। দুপুরে হাতিরঝিল সংলগ্ন মধুবাগ এলাকার সড়কে এক হাঁটুর বেশি পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা বিকল হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে। অটোরিকশা চালক কালু মিয়া বলেন, কয়েকবার চেষ্টার পর সিএনজি চালু হয়নি। তাই পাশের ওয়ার্কশপে মেকানিকের জন্য খবর পাঠিয়েছেন তিনি।

মিরপুরের ১৪ নম্বর থেকে ১০ নম্বর যাওয়ার সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে গেছে। বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনের সড়কের ফুটপাত ডুবে গেছে পানিতে। ওই সড়কে যানবাহন চলাচল কমে গেছে। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ও আশপাশের সড়কেও পানি জমেছে। কোনো কোনো সড়ক কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। রোকেয়া সরণির কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া এলাকায়ও সড়কে পানি জমেছে। বৃষ্টিতে বনানীর আর্মি স্টেডিয়াম ও নৌবাহিনী সদর দপ্তরের সামনের সড়ক এবং ধানমন্ডির একাধিক সড়কে পানি জমেছে। সড়কে থাকা নিষ্কাশন নালার মুখ বন্ধ হয়ে অনেক জায়গায় পানি যেতে দেরি হচ্ছে। জলাবদ্ধতার কারণে বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা দিয়েছে।

এছাড়াও বৃষ্টির কারণে ঈদের ছুটির পর স্কুলকলেজ খোলার প্রথম দিনই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েন।

স্বল্প সময়ের বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। যেসব এলাকায় জলাবদ্ধতার কথা বলা হয়েছে সেসব এলাকায় জলাবদ্ধতা নয়, জলজট ছিল। ম্যানহোলের ঢাকনা ও ড্রেনে পলিথিন, প্লাস্টিক আটকে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় বাধা সৃষ্টি করেছিল। সিটি করপোরেশনের কর্মীরা এরইমধ্যে সেগুলো পরিষ্কার করেছেন। খোঁজ নিয়ে দেখেন সেখানে আর পানি নেই।

তিনি আরও বলেন, কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা যে সৃষ্টি হয়নি তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কারণ ওসব এলাকায় উন্নয়নকাজ চলমান আছে।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close