ই-পেপার সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

সোমবার ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪

সম্মানী বন্ধের জেরে হঠাৎ বন্ধ বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা!
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০২৪, ৩:৩৬ এএম  (ভিজিট : ৩২৪)
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চালু থাকা বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গত ৩ জুন থেকে চিকিৎসকরা বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে একদিকে দুর্ভোগে পড়েছেন জেলার সুবিধাবঞ্চিত ও অসহায় রোগীরা, অন্যদিকে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

এ বিষয়ে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, একটু প্রশাসনিক জটিলতা চলছে। বৈকালিক সেবায় নিযুক্ত চিকিৎসকদের সম্মানী বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে আলোচনা চলছে। আগে বৈকালিক সেবার সব বিভাগ খোলা থাকত। কিন্তু এখন বিষয়টি রিশিডিউলিং করা হচ্ছে। এখন থেকে প্রতিটি বিভাগ হয়তো চালু থাকবে না। কাস্টমাইজড করে কিছু বিভাগ কমিয়ে আবার চালু করা হবে। শিগগির বৈকালিক সেবা চালু হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন কুমার ঢালী বলেন, কিছু জটিলতার কারণে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ আছে। আমরা সীমিত পরিসরে সেবাটা আবার চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু করেন হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রয়াত ডা. মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান। বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা নির্ধারিত ফিয়ের বিনিময়ে অসহায় রোগীদের সেবাদান শুরু করেন। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রোগীদের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলা থেকেও অনেক রোগী এই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতেন। বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় মেডিকেল কর্মকর্তার সরকারি ফি ২০০ টাকা, জুনিয়র কনসালটেন্ট ও আবাসিক সার্জনের ফি ৩০০ টাকা এবং সিনিয়র কনসালটেন্টের ফি ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এই সেবা চালু করায় সাধারণ রোগীরা অনেক উপকৃত হলেও বছর না ঘুরতেই হঠাৎ চলতি জুন মাসের ৩ তারিখ থেকে এই স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে জেলার দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীদের বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে।

হাসপাতালের হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালু থাকাকালীন প্যাথলজি বিভাগের বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষা থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে সরকারি কোষাগারে অনেক টাকা জমা দিতে পেরেছে। গত বছরের জুন মাসে শুধু পরীক্ষা-নীরিক্ষা থেকে প্রাপ্ত ২১ হাজার ৫৩৫ টাকা, জুলাই মাসে ৮৬ হাজার ৭০ টাকা, আগস্ট মাসে ১ লাখ ১২ হাজার ৯৬০ টাকা, সেপ্টেম্বর মাসে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৪৫ টাকা, অক্টোবর মাসে ১ লাখ ৪ হাজার ৯৩০ টাকা, নভেম্বর মাসে ১ লাখ ৮ হাজার ৪০০ টাকা ও ডিসেম্বর মাসে ৯০ হাজার ৮১৫ টাকা রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৯১ হাজার ৩৫৫ টাকা, ফেব্রুয়ারি মাসে ৮৬ হাজার ৯৩০ টাকা, মার্চ মাসে ৬৪ হাজার ৭৮০ টাকা এবং এপ্রিল মাসে ৫৪ হাজার ৩৫০ টাকা রাজস্ব জমা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের জুনে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা চালুর প্রথম মাসে ২৫১ জন, দ্বিতীয় মাসে ১ হাজার ২২৬ জন, আগস্ট মাসে ১ হাজার ৪৫৭ জন, সেপ্টেম্বর মাসে ১ হাজার ৫২৩ জন, অক্টোবর মাসে ১ হাজার ২১১ জন, নভেম্বর মাসে ১ হাজার ১৪০ জন ও ডিসেম্বর মাসে ৮৯২ জন রোগী দেখেছেন চিকিৎসকরা। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৯০৫ জন, ফেব্রুয়ারি মাসে ১ হাজার ১১৮ জন, মার্চ মাসে ৬৩১ জন ও এপ্রিল মাসে ৮৫৭ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। সব মিলিয়ে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকরা ১১ হাজার ৩৬০ জন রোগী দেখেছেন। এ থেকে আয় হয়েছে ৩৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ টাকা। রোগী দেখার টাকা থেকে নিজেদের প্রাপ্ত সম্মানী ভাগাভাগি করে নিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাসপাতালের স্বাস্থ্য বিভাগের এক সভায় বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় রোগী দেখা থেকে প্রাপ্ত টাকা চিকিৎসকদের না দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক। সেই থেকে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় নিযুক্ত চিকিৎসকদের সম্মানী বন্ধ রয়েছে। এরপর থেকেই হাসপাতালে বিকালে রোগী দেখায় আগ্রহ হারাতে শুরু করেন চিকিৎসকরা। চলতি বছরের ৩ জুন থেকে কোনোরকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবায় রোগী দেখা বন্ধ করেন চিকিৎসকরা। তবে প্যাথলজি বিভাগ চালু রয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৩ জুন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগ দেন মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান। তিনি যোগদানের পর হাসপাতালে যথাসময়ে চিকিৎসকদের উপস্থিত হওয়াসহ সব বিভাগেই স্বাস্থ্যসেবায় বিরাট পরিবর্তন আসে। তার সময়েই হাসপাতাল থেকে সরকারি কোষাগারে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব জমা হয়েছে। তার একান্ত প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে একমাত্র হাসপাতাল হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্যাথলজি বিভাগ চালু হয়। ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বিভাগের সব হাসপাতালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার মান বিবেচনায় প্রথম হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতাল। চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে কর্মস্থলে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close