ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

পিতামাতার দোয়ায় সন্তানের ভাগ্য বদলায়
প্রকাশ: সোমবার, ২৪ জুন, ২০২৪, ৪:০৮ এএম  (ভিজিট : ৪২৮)
মানুষ পৃথিবীতে আগমন করে পিতামাতার মাধ্যমে। তাদের হাত ধরেই পৃথিবীর আলো-বাতাসে বেড়ে ওঠে মানুষ। পৃথিবীতে মানুষের রক্তের যত বন্ধন আছে, সবার মধ্যে পিতামাতার অবস্থান সবার শীর্ষে। কারণ তারাই সন্তানের সর্বাধিক নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল। পিতামাতা হাজারো ত্যাগ-তিতিক্ষা আর কুরবানি ও কষ্ট-ক্লেশের মধ্য দিয়ে তিলে তিলে সন্তানকে লালন-পালন করে এবং গঠনে-গড়নে বড় করে তোলে। তাই স্বাভাবিকভাবেই পিতামাতার সঙ্গে সদাচরণ ও উত্তম ব্যবহারের ফলে জীবন চলার নানা অধ্যায় ও পর্যায়ে প্রভূত বরকত ও রহমত নেমে আসে। পিতামাতা সম্পর্কীয় আলোচনা এই প্রবন্ধে তুলে ধরা হলো।

পিতামাতার কৃতজ্ঞতা আদায় : পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি মানুষকে তার পিতামাতা সম্পর্কে নির্দেশ দিয়েছি, কেননা তার মা কষ্টের পর কষ্ট সয়ে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। তুমি শুকর আদায় করো আমার এবং তোমার পিতা-মাতার। আমারই কাছে তোমাদের ফিরে আসতে হবে’ (সুরা লুকমান : ১৪)। বোঝা গেল, মানুষ যেন তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের পিতামাতা শুকরিয়া আদায় করে। কেননা যদিও তাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তায়ালা কিন্তু বাহ্যিক কারণ হিসেবে তাদের দুনিয়ায় আগমনের পেছনে পিতামাতার ভূমিকাই প্রধান। পিতামাতার মধ্যেও আবার বিশেষভাবে মায়ের কষ্ট মেহনতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। মা কতই না কষ্টের সঙ্গে তাকে নিজের গর্ভে ধারণ করে রাখে। তারপর একটানা দুই বছর তাকে দুধ পান করায়।

পিতামাতার সঙ্গে উত্তম আচরণ : মানুষের কর্তব্য সবার সঙ্গেই উত্তম আচরণ করা। আর পিতামাতার সঙ্গে তো অবশ্যই উত্তম আচরণ করতে হবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো, পিতামাতার কোনো একজন কিংবা উভয়ে যদি তোমার কাছে বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ্’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিয়ো না; বরং তাদের সঙ্গে সম্মানজনক কথা বলো।’ (সুরা বনী ইসরাইল : ২৩)

পিতামাতার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি : পিতামাতার বৈধ অনুসরণ অনুকরণের মধ্য দিয়ে তাদের সন্তুষ্টি অর্জনে মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি নিহিত। আর তাদের অবাধ্য ও বিরোধিতা করে অসন্তুষ্টি অর্জনে মহান আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টি নিহিত। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মাতাপিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভ হয়। আর তাদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টি রয়েছে।’ (তিরমিজি : ১৮৯৯)

পিতামাতার হক : পৃথিবীতে মানুষকে দুই প্রকার হক আদায় করতে হয়-আল্লাহর হক ও বান্দার হক। আর বান্দার হকের মধ্যে সবার আগে পিতামাতার হক। হজরত আবু হুরায় (রা.) সূত্রে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করল, মানুষের মধ্যে আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার সর্বাপেক্ষা হকদার কে? তিনি বললেন, ‘তোমার মা, সে আবার জিজ্ঞাসা করল, অতঃপর কে? রাসুল (সা.) বললেন, তোমার মা, এরপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, অতঃপর কে? রাসুল (সা.) বললেন তোমার মা তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, এরপর কে? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমার পিতা’ (মুসলিম : ৬৩৯৪)। এখানে রাসুল (সা.) পিতামাতার মধ্যেও সর্বাগ্রে রেখেছেন মায়ের হক।

পিতামাতার অবাধ্যতা কবিরা গুনাহ : রাসুলুল্লাহ (সা.) এক দিন সাহাবাদেরকে লক্ষ করে বললেন, আমি কি তোমাদের সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহগুলো সম্পর্কে অবগত করব না? এ কথাটি তিনি বারবার বললেন, তখন সব সাহাবায়ে কেরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা এবং পিতামাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।’ (বুখারি : ২৬৫৪)

পিতামাতার দোয়া অর্জন : দোয়াকে এমনিতেই ইবাদতের মগজ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। যেখানে নিজে দোয়া করলেই আল্লাহ তালা কবুল করেন, সেখানে সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া সন্দেহাতীতভাবে কবুল হবে। তাই এমন দোয়া পাওয়ার কাজ করা। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণির দোয়া সন্দেহাতীতভাবে কবুল হয়-মজলুমের দোয়া, মুসাফিরের দোয়া এবং সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া।’ (আবু দাউদ : ১৫৩৮)

মৃত্যুরও দোয়া করা : পিতামাতার জন্য সন্তানের ওপর অনেকগুলো করণীয় আছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, পিতামাতার মৃত্যুর পর সন্তানের তাদের জন্য দোয়া করা। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষের মৃত্যুর পর তার সব আমল (সওয়াব) বন্ধ হয়ে যায়, অবশ্য তিনটি আমল (সওয়াব) বন্ধ হয় না-সাদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলমের সওয়াব ও নেক সন্তান পিতামাতার জন্য যে দোয়া করে।’ (মুসলিম : ৪৩১০)

সন্তানের জান্নাত বা জাহান্নাম : সন্তান যদি পিতামাতার খেদমত করে তাদের সন্তুষ্ট করতে পারে এর বিনিময়ে তার জান্নাত লাভ হয়। বিপরীতে যদি তাদের নানাভাবে কষ্ট দেয়, কিংবা তাদের অবাধ্য হয়, তা হলে এর ফলে জাহান্নামে যেতে হবে। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু উমামা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, এক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, সন্তানের ওপর পিতামাতার কী হক? রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, পিতামাতা হয়তো তোমার জন্য জান্নাত, কিংবা জাহান্নাম’ (ইবনে মাজা : ৩৬৬২)। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পিতামাতার যথাযথ খেদমত করে পরকালীন জীবনে জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করে চিরস্থায়ী ও চিরসুখের জান্নাত লাভ করার তওফিক দান করুন।

মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলূম মাদরাসা, মধুপুর, টাঙ্গাইল

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close