ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ?
প্রকাশ: শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪, ১:৫০ এএম  (ভিজিট : ৪১৮)
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে চলমান সাম্প্রতিক সংঘাতের কারণে বাংলাদেশে নতুন করে আবারও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের শরণার্থী, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনের শীর্ষ নির্বাহী এবং বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান রয়টার্সের কাছে স্বীকার করেছেন, গত নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া জান্তা বাহিনী ও সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘাতের কারণে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। বিভিন্ন উপায়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তারা টেকনাফে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এক সাক্ষাৎকারে সরকারের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান রয়টার্সকে বলেন, ‘কয়েকজন রোহিঙ্গা ইতিমধ্যে বিভিন্নভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং শিবিরের রোহিঙ্গাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। আমি নিশ্চিত এ খবর সত্য।’

মিয়ানমারে ২০১৭ সালের  আগস্টে রাখাইনের কয়েকটি সেনা ছাউনি এবং পুলিশ স্টেশনে একযোগে বোমা হামলা ঘটায় রোহিঙ্গাভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। এই হামলার জবাবে রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।

আরসার হামলাকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের কারণ বলা হলেও জাতিসংঘের এক  প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে এবং তাদের ফেরার সব পথ বন্ধ করতে আরসার হামলার আগে থেকেই রোহিঙ্গাবিদ্বেষী প্রচারণার মধ্য দিয়ে পরিকল্পিত সেনা-অভিযান শুরু হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমের সেই সময়কার অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, রাখাইনে সেনাবাহিনীর তাণ্ডব শুরু হয়েছিল ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা চেকপোস্টে হামলার অন্তত ৩ সপ্তাহ আগে থেকে। আর তারও আগে শুরু হয়েছিল গ্রামে গ্রামে সেনা প্রচারণা। পরবর্তীতে অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনেও রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের সামরিক প্রচারণাকে সেখানকার সংকটের জন্য দায়ী করা হয়েছে। রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সম্ভাব্য গণহত্যা তদন্তে নিয়োজিত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিদ্বেষী প্রচারণায় ফেসবুক ভয়াবহ ভূমিকা রাখে। 

ভয়াবহ সেই অভিযানে সেনা সদস্যদের হাতে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের শিকার হয়ে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দলে দলে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা। দেশে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে। বর্তমানে এই রোহিঙ্গাদের টেকনাফের কুতুপালং ইউনিয়নের শরণার্থী শিবিরে রাখা হয়েছে। ঢাকার পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আর কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিতে পারবে না বাংলাদেশ। চীনের মধ্যস্থতায় আশ্রিত এই রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরুর কথাও জানানো হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়ার বাস্তব সুফল বাংলাদেশ আদৌ পাবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। এরইমধ্যে রাখাইনে তীব্র সংঘাত শুরু হয়েছে আরাকান আর্মি এবং জান্তা বাহিনীর মধ্যে। সেই সংঘাতে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা আরাকান আর্মি রাখাইনের একের পর এক শহর-গ্রামের দখল নিচ্ছে। 

গত সপ্তাহে রাখাইনের দুই সীমান্তবর্তী শহর বুথিডং এবং মংডুর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি। এই দুই শহরে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা থাকে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, দুই পক্ষের যুদ্ধের জেরে মংডু ও বুথিডংয়ে আটকা পড়েছে ৭০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা।
মিজানুর রহমান রয়টার্সকে বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ইউএনএইচসিআর আমাদেরকে চিঠি দিয়েছে। সেখানে তারা বলেছে, রাখাইনের পরিস্থিতির উত্তরোত্তর অবনতি ঘটছে। সেখানে আরও রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুতির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে এবং তারা অসহায়। তাদের সুরক্ষা প্রয়োজন।’ ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউএনএইচসিআরের চিঠির কোনো জবাব এখনও দেয়নি শরণার্থী, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশন। 

এ ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান জানতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কেউই ফোন ধরেননি। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, নতুন কোনো রোহিঙ্গাকে আর আশ্রয় দেওয়া হবে না বলে যে নীতি নিয়েছিল বাংলাদেশ, তাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close