ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

হাদিসের ভাষায় অভিশাপের বিষয়
প্রকাশ: শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪, ২:৫১ এএম  (ভিজিট : ৩৫৮)
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বিশাল অংশজুড়ে যেসব নানা মন্দ বিষয় সম্পর্কে মানুষকে অত্যন্ত জোরালোভাবে সতর্ক করা হয়েছে, সেসবের মধ্যে অন্যতম একটি হলো, ‘অভিশাপ’। কিছু কাজ করলে মানুষের ওপর অভিশাপ বর্ষিত হয়, আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে বঞ্চিত হয়। পবিত্র হাদিসে উল্লেখকৃত এমন কয়েকটি অভিশাপের বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :

হিল্লা বিয়ে : তিন তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়া কোনো পারিবারিক বন্ধনকে আবার জোড়া দেওয়ার ইসলামের দৃষ্টিতে সঠিক পদ্ধতি হলো, ইদ্দত শেষে তালাকপ্রাপ্তা সেই নারীর অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে বিয়ে হওয়া। অতঃপর সেই স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যদি পূর্ণ শারীরিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং তারপর যদি তালাক সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়, তা হলে আবারও যথারীতি ইদ্দত পালনের পর ওই নারীর সঙ্গে তার পূর্বের স্বামীর বিয়ে বৈধ। এটাই ইসলামের সমাধান ও বিধান। এর বিপরীতে কেউ যদি ন্যূনতম সময়ের মধ্যে বিয়ে করিয়ে নিতে চায় বা করিয়ে নেয়, তা হলে সেটাকেই বলা হয় ‘হিল্লা বিয়ে’। আরবি ‘হীলা’ শব্দের অর্থ কৌশল। কৌশলী এ বিয়েটাই আমাদের সমাজে ‘হিল্লা বিয়ে’ নামে পরিচিত। ‘হীলা বিয়ে’ বা ‘হিল্লা বিয়ে’ ইসলামের বিধিবদ্ধ কোনো অনুশাসন নয়। এটা এ বিয়ের নাম থেকেই পরিষ্কার হয়ে যায়। ইসলামে কৌশলমুক্ত ও কৌশলযুক্ত বিয়ে বলতে কিছু নেই। এ ধরনের কৌশলী বিয়ে যিনি করেন এবং করাতে উদ্যোগী হন, তাদের ব্যাপারে সহিহ হাদিসে আল্লাহ তায়ালার অভিশাপ বর্ষণের কথাও ঘোষিত হয়েছে। সে হিসেবে হিল্লা বিয়ে করা হচ্ছে কবিরা গুনাহ। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (তিন তালাকপ্রাপ্তা কোনো নারীকে) তালাক দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিয়ে করে, সে এবং যে স্বামী তালাক দেওয়ার পর পুনরায় গ্রহণের ইচ্ছায় তাকে অন্যের কাছে বিয়ে দিয়ে তার জন্য হালাল করে নেয়, তারা উভয়ে অভিশপ্ত’ (আবু দাউদ : ৯৯৮)।

পথেঘাটে মলমূত্র ত্যাগ : দৈনন্দিন জীবনে নানাবিধ প্রয়োজনে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার মাধ্যম হলো রাস্তা। মানুষ চলাচলের রাস্তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রাখার জন্য ইসলাম জোর নির্দেশ দিয়েছে। তা ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মানুষের স্বভাবজাত একটি বিষয়। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘ঈমানের শাখা সত্তরটিরও বেশি, অথবা ষাটের কিছু বেশি। ঈমানের সর্বোচ্চ শাখা হলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই) এ কথা স্বীকার করা। আর সর্বনিম্ন শাখা হলো রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেওয়া’ (মুসলিম : ৬০)। এভাবে অনেক হাদিসে রাস্তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রাখার জন্য নির্দেশ ও ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। এর বিপরীতে যারা মানুষ চলাচলের রাস্তায় মলমূত্র ত্যাগ করে অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা করে রাখে, তাদের ব্যাপারে রাসুল (সা.) কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ওইসব লোকদের ওপর আল্লাহ তায়ালার লানত। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অভিশপ্ত দুইটি কাজ থেকে বেঁচে থাকো। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, অভিশপ্ত কাজ দুইটি কী আল্লাহর রাসুল! রাসুল (সা.) বললেন, মানুষের চলাচলের পথে অথবা ছায়াবিশিষ্ট স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করা।’ (আবু দাউদ : ২৫)

মুমিনদের কষ্ট দেওয়া : মানুষ স্রষ্টার সৃষ্টির সেরা জীব। এরা একে অপরের সঙ্গে ভালোবাসা, সম্মান, শ্রদ্ধা, স্নেহ ও ভ্রাতৃত্ববোধের আচরণ-উচ্চারণ করবে এটাই স্বাভাবিক ও যুক্তিযুক্ত বিষয়। এর বিপরীতে যারা মুমিনদের কষ্ট দেবে তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালার অভিশাপ। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা মুমিন নর-নারীদের বিনা অপরাধে কষ্ট দেয়, তারা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে’ (সুরা আহযাব : ৫৮)। এ ব্যাপারে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের ক্ষতি করে অথবা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে সে অভিশপ্ত।’ (তিরমিজি : ১৯৪১)

পায়ুপথে সঙ্গম করা : ইসলামের সৌন্দর্যের অনন্য একটি দিক হলো স্বামী-স্ত্রীর পরম আনন্দঘন মুহূর্ত তথা মেলামেশাকে ইবাদতের মর্যাদায় উন্নীত করা হয়েছে। তবে তা অবশ্যই বৈধপন্থায় অর্থাৎ সম্মুখপথে হতে হবে। এ ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তুমি তোমার স্ত্রীর সঙ্গে যেকোনো সময় মেলামেশা করতে পার। তবে তা হতে হবে যোনিপথে’ (মুসনাদে আহমদ : ২৪১৪)। যোনিপথ তথা স্ত্রীর সম্মুখপথে যেভাবে খুশি সেভাবেই সহবাস করা যাবে। আর এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেত্রস্বরূপ। সুতরাং নিজেদের শস্যক্ষেত্রে যেখান থেকে ইচ্ছা যাও এবং নিজের জন্য (উৎকৃষ্টকর্ম) সম্মুখে প্রেরণ করো এবং আল্লাহকে ভয় করে চল...’ (সুরা বাকারা : ২২৩)।

এর বিপরীতে যারা পেছনের রাস্তায় তথা যে অংশকে এ কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়নি; স্বভাব-প্রকৃতির বিপরীতে যারা বিকৃত যৌনাচার করে তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালার অভিশাপ। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর পেছনের রাস্তায় সহবাস করে সে অভিশপ্ত।’ (তিরমিজি : ২১৬২)
আসুন, দৈনন্দিন জীবনের চর্চিত এই অভিশাপের বিষয়গুলো বর্জন করে চিরস্থায়ী পরকালীন জীবনের সুখ-শান্তির ব্যাপারে সচেতন ও সচেষ্ট হই। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলূম, মধুপুর, টাঙ্গাইল

সময়ের আলো/আরএস/ 
  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close