ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শিগগিরই চালু হচ্ছে না
প্রকাশ: শুক্রবার, ২১ জুন, ২০২৪, ১:৫০ এএম  (ভিজিট : ৫৯০)
চট্টগ্রামে ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলতি জুনে শেষ হচ্ছে না। সবশেষ প্রকল্প মেয়াদ ছিল আগামী ৩০ জুন। প্রকল্প মেয়াদ ফের বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৫ সালের ৩০ জুন। এতে প্রকল্প কাজ শেষ হওয়ার সময় আবারও বাড়ল। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) চলতি জুনেই প্রকল্প কাজ শেষ করার কথা জোর দিয়ে বলেছিল। আরেক দফা প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানোর পর এখন বলছে ভিন্ন কথা। তারা বলছে, প্রকল্পের কাজ এখনও অনেক বাকি আছে। যানবাহন চলাচলে এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দিতে আরও সময় লাগবে।

শুরুতে তিন বছরের মধ্যে প্রকল্প শেষ করার কথা ছিল। প্রকল্প কাজ ঠিকঠাকভাবে চললে ২০২০ সালেই চালু হতো এক্সপ্রেসওয়ে। কিন্তু বারবার প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানোর কারণে ইতিমধ্যে সাড়ে সাত বছর পার হয়েছে। সবশেষ নির্ধারণ করা সময় আগামী ৩০ জুনেও শেষ হচ্ছে না প্রকল্প কাজ। নির্ধারিত সময়ে চালু না করে আবার বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। এক্সপ্রেসওয়ের ১৪ র‌্যাম্পের (যানবাহন ওঠানামার পথ) মধ্যে নির্মাণ শেষ হয়েছে মাত্র দুটি। সাতটির কাজ চলছে। অনেক র‌্যাম্পের কাজ শুরুই করা যায়নি। শেষ করা যায়নি এক্সপ্রেসওয়ের লাইট লাগানোসহ নানা ধরনের পূর্ত কাজ।

এ ব্যাপারে সিডিএর চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইউনুস বৃহস্পতিবার সময়ের আলোকে বলেন, এই প্রকল্পসহ সব প্রকল্পের বিষয় যাচাই করা হচ্ছে। এরপর সিডিএর সব প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিত করা হবে। আশা করি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ সব প্রকল্প সম্পর্কে গণমাধ্যমকর্মীরা একটা ধারণা পাবে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কখন খুলবে এ প্রশ্ন এড়িয়ে তিনি বলেন, ‘আমি পুরো প্রকল্পের বিষয়ে ধারণা দিতে কাজের অগ্রগতি জানাতে সব সাংবাদিককে ডেকে এনে অবহিত করব। এরপর প্রকল্পে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে।’

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চলতি জুনে নির্ধারিত সময়ে চালু হচ্ছে কি না এ প্রশ্নে সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস সময়ের আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি জানাবেন সিডিএর চেয়ারম্যান। প্রকল্প কাজ এবং এক্সপ্রেসওয়ে কবে চালু হবে তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এই প্রকল্পের সব প্রাক কাজ শেষ করে ঠিকাদার বুঝিয়ে দিতে অনেক সময় লেগে গেছে। তাই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।’ 

কতবার প্রকল্প মেয়াদ বাড়ল এই প্রশ্নে তিনি বলেন, সবশেষ দফা প্রকল্প মেয়াদ আগামী বছরের অর্থাৎ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সেই হিসাবে প্রকল্প মেয়াদ তৃতীয়বারের মতো বাড়ল। বর্তমানে প্রকল্প কাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ-র‌্যাম্প নির্মাণকাজ চলছে। ১৪ র‌্যাম্পের মধ্যে ২টির নির্মাণ শেষ করা হয়েছে। সাতটি র‌্যাম্প নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। বাকি র‌্যাম্প নির্মাণকাজও সহসা শুরু করা হবে।

প্রকল্প কাজের মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান। তিনি বৃহস্পতিবার সময়ের আলোকে বলেন, ‘কিছু কাজ বাকি থাকায় প্রকল্পের মেয়াদ আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত আরও এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে। তবে এখন যানবাহন চলাচলের উপযোগী হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। কিছু ভৌত অবকাঠামোর কাজ বাকি থাকায় প্রকল্প কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এসব কাজ শেষ হলে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।’

সিডিএ সূত্র জানায়, এক্সপ্রেসওয়ের নকশায় ১৪ র‌্যাম্পের মধ্যে অধিকাংশের কাজ শেষ হয়নি। মাত্র ২টি র‌্যাম্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। নগরীর টাইগার পাস এলাকার একটি র‌্যাম্পের নির্মাণ নিয়ে দেখা দিয়েছে বিপত্তি। এটির নকশা চূড়ান্ত করা হলেও শতবর্ষী গাছ কাটা নিয়ে বিরোধে সেখানে নির্মাণকাজ শুরু করা হচ্ছে না। নতুন করে নকশা করে টাইগার পাস এলাকার র‌্যাম্প নির্মাণ করা হবে। বিরোধিতার কারণে র‌্যাম্পের নকশায় পরিবর্তন আনা হবে। 

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে নামকরণ করা হয় এলিভেটেডেট এক্সপ্রেসওয়ের। গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রথানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এটির উদ্বোধন করেন। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেতে যানজট একটি বড় বাধা হিসাবে আছে দীর্ঘদিন ধরে। বিশেষ করে নগরীর ইপিজেড থানা এলাকায় যানবাহন এবং জন চলাচলের চাপ বেশি থাকায় সেখানে নিত্য যানজট লেগেই থাকে। বিমানবন্দরগামী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীরা যানজটে আটকে প্রায়ই ফ্লাইট মিস করে ফেলেন। তাই দীর্ঘদিন আগে থেকেই নগরীর মূল কেন্দ্রস্থল থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দাবি ছিল। যাতে যানজট এড়িয়ে দ্রুত বিমানবন্দর যাওয়া যায়। পাশাপাশি এই পথে যানজটমুক্ত দ্রুত যানবাহন চলাচল সুবিধা দেওয়া হলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও উৎসাহিত হবেন। এই একটি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে বাড়বে চট্টগ্রাম নগরীর সার্বিক গতিশীলতা। নগরীর অভ্যন্তরে বড় পরিবর্তন আনবে এই এক্সপ্রেসওয়ে। শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এই এক্সপ্রেসওয়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে এই পথ পাড়ি দেওয়া যাবে মাত্র ২০ মিনিটে। পুরো রুটটি যানজটপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। এক্সপ্রেসওয়ের কারণে কমে যাবে শহরের গুরুত্বপূর্ণ একটি রুটের যানজটও।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রকল্প মেয়াদ বৃদ্ধির সময় নিয়ে আছে নানা বিতর্ক। কতবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে তা নিয়ে সিডিএ কর্মকর্তারা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। প্রকল্প ব্যয় আরেক দফা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। প্রকল্প গ্রহণের সময় তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি। প্রথমবার ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। সে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ফের ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। তবে চলতি জুনেও শেষ করা যাচ্ছে না এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ। এবার আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। দফায় দফায় মেয়াদ বাড়িয়েও প্রকল্পটি শেষ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ জনগণ।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close