ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সরকারি হাট গিলে পাকা স্থাপনা
প্রকাশ: রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪, ২:১১ এএম  (ভিজিট : ৩৮৪)
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার আলিহাট ইউনিয়নের সাদুড়িয়া বাজারে সরকারি হাটের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে পাকা দোকানঘর নির্মাণ করেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। হাট ও বাজার কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন মাস দেড়েক আগে অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত মেলেনি প্রতিকার।

হাটের স্থান সংকুলান না হওয়ায় বাধ্য হয়েই হিলি-বগুড়া মহাসড়কের দুই পাশে সপ্তাহে দুদিন (শুক্রবার ও মঙ্গলবার) হাট বসাতে হচ্ছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে হাট কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী। অভিযুক্তরা বলছেন, তাদের ক্রয়কৃত জমিতেই তৈরি করেছেন দোকানঘর। অন্যদিকে প্রশাসন বলছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরেজমিন হাকিমপুর উপজেলা থেকে ছয় কিমি পূর্বে সাদুড়িয়া বাজারে গিয়ে হাট কমিটির সভাপতি, এলাকাবাসী ও দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে হাকিমপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিত রায় বলেন, হাটের জায়গায় দোকানঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইতিপূর্বে আমি সহকারী কমিশনারকে নিয়ে সরেজমিন তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছিলাম। ইতিমধ্যে আমি জেলা প্রশাসক শাকিল আহম্মদের দিকনির্দেশনা মোতাবেক সরেজমিন তদন্ত করেছি। তিনি আরও বলেন, যত দ্রুত সম্ভব জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সবাই ন্যায়বিচার পাবে।

হাট ইজারাদার নাঈমুর ইসলাম লাল মিয়া বলেন, আমি ২০২৩ সালে হাটটি ইজারা নিই। হাট বুঝে নেওয়ার পরে দেখি হাটের জায়গা সংকীর্ণ। পরে জানতে পারি ইতিপূর্বে সাদুড়িয়া গ্রামের শ্রী রুহীনিকান্ত সরকারের ছেলে পরিতোষ, গৌর, নিতাই, অসীম চন্দ্র ও বিপুল চন্দ্র সরকারি এই হাটের জায়গা দখল করে পাকা দোকানঘর নির্মাণ করছেন। এ কারণে হাটের জায়গা সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। এ কারণে এখন রাস্তার পাশে হাট বসছে। হাটের জায়গায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য হাট কমিটির সভাপতির সঙ্গে আলাপ করে তার মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনারের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়। সম্প্রতি ইউএনও ও এসি ল্যান্ড বাজারে এসে ঘটনাস্থল সরেজমিন তদন্ত করেছেন এবং অবৈধভাবে সরকারি জায়গায় তৈরি ঘরের ছবি এবং ভিডিও করে নিয়ে গেছেন। আশা করি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী গৌর চন্দ্র বলেন, তারা চার ভাই তাদের রেকর্ড করা সম্পত্তিতে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। কে বা কারা হাট কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন ও হাটের ইজারাদার লাল মিয়াকে উসকানি দেওয়ায় তারা হাট ওপরে নিয়ে গেছে। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে এরকম কোনো কাগজ কোনো অফিস থেকে পাইনি। তবে আমরা আমাদের জায়গা ফিরে পেতে আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। প্রতিপক্ষরা আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।

সাদুড়িয়া গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা রোস্তম আলীসহ কয়েকজন বলেন, এই বাজারে সপ্তাহিক হাট বসানোর জন্য আমাদের গ্রামের হায়তন আলী প্রথমে তিন শতক জায়গা হাটের নামে রেজিস্ট্রি করে দেন। এরপর প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে এই বাজারে সপ্তাহে দুদিন হাট বসে। ২০০৪ সালে হাটে দোকানিদের বসার জন্য সরকারিভাবে শেড তৈরি হয়। পরবর্তী সময়ে হাটের জায়গা কম হওয়ায় সরকারিভাবে ১৩ শতক জায়গা হাটের নামে রেকর্ড করা হয়। এই জায়গা সরকার অধিগ্রহণ করেছে। কিন্তু পল্লী চিকিৎসক গৌড় চন্দ্র, পরিতোষ চন্দ্র, নিতাই চন্দ্র ও অসীম চন্দ্র চার ভাই ও বিপুল চন্দ্র হাটের জায়গা দখল করে পাকা দোকানঘর তৈরি করায় হাটের জায়গা সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। বাধ্য হয়ে মহাসড়কের দুই পাশে সপ্তাহে দুদিন হাট বসাতে হচ্ছে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে বলে আমরা শঙ্কা করছি। যত দ্রুত সম্ভব হাটের জায়গায় নির্মিত অবৈধ দোকানঘর ভেঙে দিয়ে পূর্বের জায়গায় হাট বসাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।

হাট ও বাজার কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, হাটের সরকারি জায়গা কিছু অসাধু লোকজন অবৈধভাবে দখল করে পাকা দোকানঘর তৈরি করায় হাটের জায়গা কমে গেছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় হিলি-বগুড়া মহাসড়কের পাশে হাট বসছে। এর মধ্যেই সম্প্রতি এই সড়কের দুই পাশের সম্প্রসারণ কাজ শুরু হওয়ায় হাটের জায়গা আরও সংকীর্ণ হয়ে গেছে। এতে যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এর দায়ভার কে নেবে? তাই হাটের জায়গা উদ্ধারের জন্য গত ২৩ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার বরাবর অভিযোগ দাখিল করি। তারপরও কোনো সুরাহা হয়নি। সম্প্রতি সহকারী কমিশনার নিজে লোকজন নিয়ে এসে হাটের জায়গা মেপে খুঁটি গেড়ে দেন। এ ছাড়া অবৈধভাবে নির্মিত দোকান ঘরগুলোর শাটার খুলে ফেলা হয়। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে এসব ঘর ভেঙে দিয়ে হাটের জায়গা বের করা হবে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close