*৪১টি রুটে লঞ্চ চলছে *আছে বিশেষ লঞ্চের ব্যবস্থা *কেবিন ভাড়া বেশি রাখার অভিযোগ যাত্রীদের
কর্মজীবী মানুষদের শেষ কর্মদিবস ছিল বৃহস্পতিবার। কর্মব্যস্ততা দূরে ঠেলে দিয়ে শুক্রবার প্রথম ছুটির দিনে কর্মজীবী মানুষেরা ছুটেছেন আপন ঠিকানায় প্রিয়জনদের সাথে ঈদের ছুটি কাটাতে। সদরঘাটের চিত্রও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। ঘরে ফেরা মানুষদের পদচারণায় ব্যস্ত সদরঘাট। ঈদ কেন্দ্রিক ভিড় বাড়লেও এ সেই চিরচেনা সদরঘাট নয়। যেখানে কেবিনের টিকেটের জন্য দরকষাকষি, ডেকের একটি টিকিটের জন্য ঠেলাঠেলি আর নেই। এটি যাত্রীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যের হলেও লঞ্চ মালিকদের জন্য হতাশার।
শুক্রবার (১৪ জুন) সদরঘাট ঘুরে দেখা যায়, লঞ্চঘাট জুড়ে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের ভিড়। পল্টুনগুলোতে নৌপথে বাড়ি ফেরা যাত্রীদের উপস্থিতি গত কয়েকদিনের থেকে কিছুটা বেশি। বৃহস্পতিবার থেকেই ঘাটে ঘরমুখো মানুষদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু পূর্বের সময়গুলোর তুলনায় একেবারে কম। সকালে চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, হাতিয়া, পটুয়াখালীগামী পল্টুনে দেখা যায় স্বাভাবিকের চেয়ে ভিড় একটু বেশি। এদিন দুপুরে যাত্রীর ভিড় সকালের তুলনায় কিছুটা কম ছিল। তবে বিকালে আবার যাত্রীর ভিড় বাড়ে। এদিন সবথেকে ভিড় ছিল ইলিশা রুটে। বিকেলে যাত্রীদের মোটামুটি একটি অংশ বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলাগামী লঞ্চগুলোতে ভিড় করেছেন। এদিন পটুয়াখালী, বগা এসব রুটেও যাত্রীর স্বাভাবিক চিত্র দেখা যায়। তবে এদের মধ্যে তুলনামূলক ভাবে যাত্রী কম ছিলো বরিশাল রুটে। ভোলা রুটে লঞ্চ যাত্রীদের যথেষ্ট ভিড় ছিল।
লঞ্চের নিচ তলায় টেবিল চেয়ারে বসে টিকিট বিক্রি করছিলেন মানিক-১ লঞ্চের তন্ময় ইসলাম। তার সাথে কথা হলে সময়ের আলোকে তিনি বলেন, মোটামুটি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই ঘাটে চাপ একটু বেড়েছে। তবে আমরা যাত্রীদের যে পরিমাণ ভিড় আশা করেছিলাম তা এখনো হয়নি। গত ঈদের তুলনায় ভিড় কম। আগে এক সময় ডেক যেমন কানায় কানায় ভরে যেত সেটা এখন হচ্ছে না।
এমভি আফিয়া-৪ লঞ্চের সুপারভাইজার হৃদয় সময়ের আলোকে বলেন, দুপুরে যাত্রীদের ভিড় একটু কম ছিল। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে হতেই যাত্রীদের একটা ভালো উপস্থিতি দেখা যায়। আগের দিনের সেই ভিড়তো এখন আর নেই। যা হয় এ নিয়েই লঞ্চ চালাতে হবে। আশা করছি শনিবারে এই ভিড় আরও বাড়বে।
ঢাকা থেকে চাঁদপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে রফ রফ-৭ লঞ্চে উঠেন গার্মেন্টসকর্মী সায়েম আলি। সময়ের আলোকে তিনি বলেন, আমার বয়স যখন ২৪ বছর তখন আমি ঢাকা শহরে আসি নদীপথে লঞ্চে করে। আমি প্রায় ১০ বছর ঢাকাতে আছি। ঢাকা থেকে বাড়ি যেতে আবার বাড়ি থেকে ঢাকা আসতে এ লঞ্চই আমার পছন্দ। কারণ আমার জেলা নদীবেষ্টিত একটি এলাকা। লঞ্চ যাতায়াতেই সবথেকে সুবিধা। আগে টিকিট পেতে ঠেলাঠেলি করতাম এখন আর ওই কষ্ট নেই।
সদরঘাট থেকে বরিশালগামী যাত্রী ইসরাফিল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর বাসে বরিশাল যাওয়া খুব সহজ হয়ে গিয়েছে কিন্তু লঞ্চ যাতায়াতে পছন্দের কারণ হলো যাতায়াতক্ষেত্রে বাসের থেকে লঞ্চ বেশি আরামদায়ক। আমার সাথে দুই মেয়ে ও স্ত্রী আছে, একটি কেবিন নিয়েছি সবাই একসাথে বাড়িতে যাবো। কেবিনের টিকিটের জন্য লাইন দেওয়া লাগেনি তবে একটু বাড়তি টাকা দিতে হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন লঞ্চ হতে আরও কয়েকজন যাত্রীর সাথে কথা বললে তারা লঞ্চের ডেকের ভাড়া নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও কেবিনের ভাড়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এবিষয়ে আসমাউল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ডেকের ভাড়া স্বাভাবিক সময়ের মতোই রাখা হচ্ছে তবে কিছু কিছু লঞ্চের কেবিন ভাড়া একটু বেশি রাখা হচ্ছে।
এবিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক (ঢাকা নদীবন্দর, সদরঘাট) মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন সময়ের আলোকে বলেন, বর্তমানে লঞ্চ সংখ্যা কমে গিয়েছে। এখন ৪১টি রুটে লঞ্চ চলছে। ঈদ কেন্দ্রিক চাপ আছে তবে খুব বেশি নয়। শনিবার থেকে আশাকরি যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে। বিভিন্ন রুটে বিশেষ লঞ্চ চলছে। সার্বিক নিরাপত্তার জন্য মেট্রোপলিটন পুলিশ, নৌ-পুলিশ, আনসার ও ফায়ার সার্ভিস দল উপস্থিত আছে।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা নদী বন্দর নৌযান চলাচল ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক মোঃ মামুন-অর-রশিদ সময়ের আলোকে বলেন, ঈদ কেন্দ্রিক ভিড় একদম কম। গত কোরবানির ঈদে যে যাত্রী ছিল সে তুলনায় এ কোরবানির ঈদে যাত্রী অনেক কম। দিন যত যাচ্ছে ঘাটে যাত্রী কমছে। গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত একটি ওভারব্রিজ ও মেট্রোরেল চালু হলে যাত্রী বাড়বে। সদরঘাট ও লঞ্চ ব্যবসাকে বাঁচাতে হলে এটি প্রয়োজন।
সময়ের আলো/জেডআই