ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

কেউ কথা রাখেনি, রাজশাহীতে শতবর্ষী গাছ কেটে সাবাড়
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪, ৩:৪৪ পিএম  (ভিজিট : ৬৪০)
রাজশাহীতে একের পর এক গাছ কাটা চলছে। পরিবেশবাদী সংগঠকরা আন্দোলন করেও সফল হচ্ছে না। গাছ কাটার প্রতিবাদে লাগাতার তারা আন্দোলন করে যাচ্ছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের যায়গায় গাছ না কাটার কথা দিয়েও সেখানে গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কেটে ফেলে হয়েছে রাজশাহী সিভিল সার্জনের বাংলোর দুটি গাছ। গাছগুলোও শতবর্ষী। 

রাজশাহী মহানগরীর সোনাদিঘি এলাকায় নিজস্ব জায়গায় প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা খরচ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা পরিষদ। এ স্থানটিতে আগে ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সার্ভে ইনস্টিটিউট। অনেক আগে থেকেই এখানে ২০ থেকে ২২টি গাছ আছে। এর মধ্যে কয়েকটি শতবর্ষী। পরিবেশবাদীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণকে স্বাগত জানালেও তারা গাছ কাটার বিপক্ষে।

দরপত্রের মাধ্যমে বিক্রি করা পাঁচটি গাছের মধ্যে এক দিনেই তিনটি কেটে ফেলা হয়েছে। অন্য দুটির মধ্যে একটি কড়াইগাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলার পর শেকড় কাটা শুরু হয়েছিল। এই গাছটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। পাকা জাম ধরে থাকা আরেকটি গাছ কাটতে গোড়া থেকে মাটি সরানো হচ্ছিল। পরিবেশবাদীদের বাধায় এ দুটি গাছ বেঁচে গেছে।

যে তিনটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে, এর মধ্যে একটি কদম ও দুটি সেগুন। একটি সেগুনগাছের নিচের দিকের কোটরে পাখির বাসা ছিল। কয়েক দিন আগেও সেখানে চারটি ডিম দেখা গেছে। গাছগুলো কাটার পর বাসাটিতে ডিমগুলো দেখা যায়নি। কোটরের ভেতরে শুধু পাখির বাসার খড়কুটো দেখা গেছে। কেটে ফেলা তিনটি গাছ থেকে কয়েকটি পাখির বাসা পড়ে ছিল এখানে-ওখানে। 

রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবাল পরিবেশবাদীদের দেওয়া কথা রাখেননি। গাছ কেটেই তিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেছেন। বৃহস্পতিবারও গাছ কাটা হয়। রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদ গত ২২ মে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের নির্ধারিত স্থানে সমাবেশ করেন। এরপর গত ২৫ মে সংগঠনের সদস্যরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবালের সঙ্গেও দেখা করেন। গাছ না কাটার দাবিতে স্মারকলিপি দেন। সংগঠনের সদস্যদের দাবি, সেদিন চেয়ারম্যান গাছ রেখেই নকশা বদলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে কথা তিনি রাখেননি।

গত ৬ জুন জেলা পরিষদ পাঁচটি বড় গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্রের মাধ্যমে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকায় গাছগুলো মেসার্স মেঘনা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান কিনে নেয়। ১১ জুন প্রতিষ্ঠানটিকে গাছ কাটার কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তাতে সাত দিনের মধ্যে গাছ কেটে নিতে বলা হয়। 

রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব নাজমুল হোসেন রাজু বলেন, এই গাছগুলোর কোনো কোনোটির বয়স ১০০ বছরের বেশি। অনেক ইতিহাস জড়িয়ে আছে এসব গাছ ঘিরে। এগুলো কাটা হবে না বলে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সে কথা রাখলেন না। এটা দুঃখজনক। আমরা আর একটি গাছও কাটতে দেব না। কেউ গাছ কাটতে এলে আমরা রুখে দাঁড়াব।

জেলা পরিষদ পাঁচটি গাছ বিক্রি করেছে মাত্র ১ লাখ ৭১ হাজার টাকায়। পরিবেশবাদীরা অভিযোগ তুলেছেন, গাছের মূল্য নির্ধারণেও আছে শুভঙ্করের ফাঁকি। পাঁচটি গাছের মধ্যে শতবর্ষী একটি কড়াই গাছের দামই ২ লাখ টাকা হবে। এত কম টাকায় এসব গাছ বিক্রির কেন এমন তোড়জোড়, তা তদন্ত করে দেখার দাবি জানিয়েছেন তারা।

প্রতিশ্রুতি ভেঙে গাছ কাটার বিষয়ে কথা বলতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবালকে শুক্রবার (১৪ জুন) সকাল থেকে বেশ কয়েকবার ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা হাসানও একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই জেলা পরিষদের কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।  

এদিকে সিভিল সার্জনের বাংলো সংস্কার করতে গিয়ে সেখানকার একাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এসব গাছ কাটার আগে নিলাম হয়নি। এমনকি নেওয়া হয়নি বন বিভাগের অনুমতিও। সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে আইন অমান্য করে বাংলোর ভেতরে নতুন করে একটি পুকুরও খনন করা হয়েছে। তবে সিভিল সার্জন বলেছেন, পুকুর নয় সেখানে একটি ডোবা তৈরি করা হয়েছে। কারণ ওই জায়গাটা নিচু হওয়ায় বৃষ্টি হলেই পানি জমে যেত।

রাজশাহীর সিভিল সার্জনের বাংলোয় প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ করে চলছে উন্নয়নকাজ। এসব সংস্কারকাজ করতে গিয়ে দুটি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে নিলাম ছাড়াই। রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১ এসব কাজ করছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সিভিল সার্জনের বাংলোর ভেতরে ওয়াকওয়ে, প্রধান ফটক, গ্যারেজ, ড্রেন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ এবং মাটি ভরাটের কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলোর উত্তর দিকের সীমানা প্রাচীরের পাশে একটি পুকুর খনন করা হয়েছে নতুন করে। যদিও আইন অনুযায়ী, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর ভরাট কিংবা নতুন করে খনন নিষিদ্ধ। সেখানে কাজ করা শ্রমিকরা জানান, নতুন করে খনন করা পুকুরটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৫ মিটার। আর প্রস্থ প্রায় ৪০ মিটার। পুকুরের পশ্চিম দিকে দুটি বড় আকারের ‘জিলাপি’ গাছ কেটেছেন শ্রমিকরা। গাছ কাটার পর টুকরোগুলো স্থানীয় একটি স’মিলে পাঠানো হয়।

রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-১-এর উপ সহকারী প্রকৌশলী লিটন আহমেদ বলেন, ‘কয়েকজন ঠিকাদার সংস্কারকাজ করছেন। ওয়াকওয়ের জন্য গাছ কাটা হচ্ছে। গাছ কাটার জন্য বন বিভাগের অনুমতি নেওয়া হয়নি। এই গাছের কাঠ দিয়ে কোনো ফার্নিচার হবে না। লাকড়ি হিসেবেই বিক্রি করতে হবে। গাছ দুটি কাটতে যে শ্রমিকরা কাজ করছে তাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হবে গাছ বিক্রির টাকা দিয়ে।’

পুকুর খননের বিষয়ে লিটন আহমেদ বলেন, সব বাংলোয় একটা করে ছোট পুকুর থাকে। শুধু এখানেই ছিল না। তাই ছোট এ পুকুরটা করে দেওয়া হচ্ছে।

সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘এটা খুব বড় বাংলো না। এখানে পুকুর করার মতো জায়গা নেই। যেটা করা হচ্ছে সেটা ঠিক পুকুর হচ্ছে না। ছোট একটা ডোবা ধরনের হচ্ছে। ভূমির ধরন পরিবর্তন করা হচ্ছে না। আর এটা করার কারণ হচ্ছে ওইদিকটা নিচু। বৃষ্টি হলেই পানি জমে যেত।’

গাছ কাটার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘একটা জিলাপি গাছ ছিল, সেটা মরে গিয়েছিল। অনেক দিন আগে থেকেই পাতা ঝরা অবস্থায় পড়ে ছিল, সেটা কাটা হয়েছে। যে গাছটা কাটা হয়েছে সেটার জন্য বন বিভাগের অনুমতি বা নিলামের প্রয়োজন ছিল না। আমি তো আর বেশি দিন রাজশাহীতে থাকব না। কিন্তু আমার মনে হয়েছে যিনিই থাকবেন একটু সুন্দর পরিবেশে থাকবেন। রাজশাহী শহর এত সুন্দর এখানে বাংলোর পরিবেশও যাতে সুন্দর হয় এজন্যই এটা সংস্কার করা হচ্ছে।’

সময়ের আলো/আরআই


আরও সংবাদ   বিষয়:  গাছ কাটা   গাছ কাটার মহোৎসব   রাজশাহী সিভিল সার্জন  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close