ই-পেপার রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪
রোববার ৬ অক্টোবর ২০২৪

অন্তরঙ্গ ব্যালকনি
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪, ৫:৪৪ এএম  (ভিজিট : ৪৬০)
এক. 
রাস্তায় রিকশার জন্য অপেক্ষায় থাকা পথিকের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। ছেলেটি কিছু বুঝে ওঠার আগেই রিকশা এলে উঠে চলে যায়। সেই থেকে আসা যাওয়ার পথে সেই ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে থাকে মুচকি হাসির সেই মেয়েটিকে দেখবে বলে। একই পাড়ায় বাসা হলেও অনেকদিন পর্যন্ত দেখা হয় না।

ছেলেটি সেই বিল্ডিংয়ে টু-লেট লেখা সাইনবোর্ড দেখে খুব উৎসাহ নিয়ে ফোন করে। মেয়েটি সালাম বিনিময় করে জানতে চায় ফোন দেওয়ার কারণ? ছেলেটি বুকে সাহস সঞ্চয় করে বলে টু-লেট লেখা দেখে ফোন দিলাম। মেয়েটি মিষ্টি মধুর স্বরে বলে, আর কিছুই কি দেখেননি? ছেলেটি বলে, হুম দেখেছিলাম! মেয়েটি বলে, কী দেখেছিলেন? ছেলেটি আমতা আমতা করে বলে, ‘ব্যালকনি!’ মেয়েটি বলে, ‘তারপর?’

ছেলেটি বলে, ‘ব্যালকনিটা হাসছিল!’
‘ব্যালকনি আবার হাসতে জানে নাকি!’
‘হুম জানে! আমি দেখেছি!’
‘তো কতদিন দেখলেন সেই হাসি?’
‘না, একদিনই!’

‘শুধু একদিন দেখেই এত খুশি!’
‘সব সময় দেখব বলেই এত খুশি!’
‘আপনি এখন কোথায় আছেন?’
‘এখন অফিসের পথে।’
‘কীসে আছেন আপনি?’
‘আমি?’

‘হুম, কথা তো আপনার সঙ্গেই হচ্ছে! নাকি জিন-ভূতের সঙ্গে?’
‘হলেও হতে পারে!’
‘তাহলে আপনি জিন!’ বলে মেয়েটি খিলখিল করে হাসতে থাকে।
‘আচ্ছা ঠিক আছে, রাতে কথা বলব।’
‘রাতে আবার কেন?’
‘না! মানে এমনি!’
‘এমনি কী?’ একটু দীর্ঘ করে জিজ্ঞেস করে মেয়েটি।
‘বাসা ভাড়া!’
‘হুম, বাসা ভাড়া! ভালোবাসা!’

তারপর ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ছেলেটি ফোন করার চেষ্টা করেও সংযোগ পায় না। অপারেটিং সিস্টেম থেকে কেউ একজন সুমিষ্ট কণ্ঠে বলে- ‘ইন সাফিসিয়েন্ট ব্যালেন্স’।
ছেলেটি আবেগে ভাসতে থাকে। কখন অফিস শেষ করে বাসায় ফিরবে এই চিন্তায় ঘোরে স্বপ্নে বিভোর হয় তার মন। পাখির মতো শূন্যে ওড়ে মন। এমন সুন্দর শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলা মেয়েটি তার মনে বিচরণ করতে থাকে!

দুই.
ইতস্তত মনে ছেলেটি ফোন করে সেই মেয়েটিকে, যার নাম্বারটা বিল্ডিংয়ের টু-লেট সাইনবোর্ডে লেখা ছিল।
একটি পুরুষ ভারী গলায় বলে ওঠেন-
‘হ্যালো, কে?’
‘জি, আমি সাহেল!’
‘কোন সাহেল?’
‘জি, আসলে আমি বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্যই ফোন দিয়েছি।’
‘ও আচ্ছা! এটা তো ফ্যামিলি বাসা!’
‘জি, আমি জানি!’
‘এটা সিঙ্গেল ইউনিটের বাসা।’
‘জি, অসুবিধা নেই। ভাড়া কত পড়বে?’ 
‘গ্যাস, কারেন্ট আর সার্ভিস চার্জ ছাড়া দশ হাজার টাকা।’
‘আচ্ছা, আমি কবে থেকে উঠতে পারব?’
‘এক তারিখ থেকে উঠতে পারেন।’
‘আচ্ছা, আমি এক তারিখেই উঠব।’
বলে ছেলেটি ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।

শুক্রবার বন্ধের দিন দেখে বাসায় সব মালামাল নিয়ে ওঠে সাহেল। সময় করে বারবার ব্যালকনিতে যায়। আর দৃষ্টি রাখে সেই নাম-না-জানা মেয়েটির দিকে। না! কোথাও দেখা যাচ্ছে না। প্রতিবার ব্যালকনিতে যায় আর হতাশ হয়ে ফিরে আসে। সাহেলের এই অস্বাভাবিকতা তার স্ত্রী রুমার নজর এড়ায় না। কিন্তু রুমাও কিছু বলে না।

রাতে ঘুমাতে গেলে বিছানায় এপাশ-ওপাশ করে কাটে। ঘুম থেকে উঠেই সেই ব্যালকনিতে। হঠাৎ দেখে তার চোখ বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যায়। এ কি অপ্সরা! এত সুন্দর তার গায়ের রং, যেন কাঁচা শসা! যেমন রূপ তেমন হাসি! আহা কী অপূর্ব!

তার পেছনে রুমাও দাঁড়িয়ে আছে, সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই! রুমা তাও কিছু বলে না। সাহেল বোঝার আগেই রুমে ঘরে ফিরে আসে। রুমা দেখে সাহেলের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক।

তিন.
অফিস থেকে ফিরে সাহেল ফ্রেশ হয়ে নেয়। রুমা চা দিয়ে রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এই সুযোগে সাহেল সেই নাম্বারে ফোন দেয়। আবার সেই পুরুষকণ্ঠ। সাহেল রং নাম্বার বলে রেখে দেয়। ওপাশ থেকে সেই নাম্বার ফোন করে। সাহেল রিসিভ করতে ভয় পায়। আবার ফোন করে সাহেল। ফোন রিসিভ করার পর বোঝার চেষ্টা করে নারীকণ্ঠ না পুরুষকণ্ঠ! যথারীতি ফোনের ওপ্রান্তের কণ্ঠটা অদ্ভুত সেই নারীর। সাহেল পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চায়। মেয়েটি কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করে। সাহেল চিন্তায় পড়ে যায় কেন এমন হচ্ছে?

‘দেখুন, আমি বিবাহিত!’
‘তাতে কী?’
‘তাতে অনেক কিছু!’
‘অনেক কিছু মানে আমি বুঝিনি!’
‘আপনাকে বোঝানোর দায়িত্ব আমিও নিইনি।’
মেয়েটি এই কথা বলেই ফোনটি কেটে দেয়।

সাহেল কিছুটা অপ্রস্তুত হয়। নিজেকে সামলে নিয়ে চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে পুরোপুরি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে কিন্তু পারে না। তার ঘোর কাটে না। সে কিছু বুঝে ওঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এ সময় তার স্ত্রী রুমা তার কাঁধে হাত রাখে।

রুমা কিছুটা দুষ্টুমির ভঙ্গিতে বলে, ‘ঠিক হয়ে যাবে।’ সাহেল বিস্ময়ভরা দৃষ্টিতে স্ত্রী রুমার দিকে আরও গভীর দৃষ্টিতে তাকায়। রুমার চোখে ছলছল করে জল। সাহেল কেমন যেন একটা ঘোরে পড়ে।
‘বলো কী হয়েছে?’ বলে রুমা।
‘কী ঠিক হয়ে যাবে?’

এমন সময় কলিংবেল বেজে ওঠে। রুমা কলিংবেলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেয়। আর বলে, আয় বীথি। 

সেকি, এ যে আমার দেখা সেই অপ্সরা! আমার স্ত্রীও দেখছি নাম জানে! আয়, আমার হাজবেন্ডের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। আরে সাহেল ভাইকে পরিচয় করাতে হবে? বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে দুজন। রুমা আর বীথি মিলে এই পরিকল্পনা করে। 

সাহেল শহরে মেসে থেকে বুয়ার হাতের রান্না খেয়ে ক্লান্ত। শরীরেও রোগ বাঁধিয়েছে! ‘হুম, রোগ বাঁধিয়েছে’ বলে টিপন্নী কাটে বীথি।

‘কী, কেমন দিলাম সাহেল ভাই?’
‘কই কী দিলেন? দেওয়ার আগেই তো হাওয়া।’
‘আচ্ছা, তোরা কথা বল।’ বলেই রুমা কিচেনে যায়।
‘আপনি ফোন ধরেননি কেন?’
‘কেন? ধরলে কী হতো শুনি?’
‘কী আর হতো? বাসা ভাড়া হতো!’
‘আর?’
‘ভালোবাসা!’
‘আর ভালোবাসতে হবে না। এবার নিজের বউকে ভালো বাসেন। যান মিয়া!’ 
একনাগাড়ে বীথি কথাগুলো সাহেলকে বলেই কিচেনে রুমার কাছে চলে যায়।

সময়ের আলো/জিকে




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close