ই-পেপার রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
ই-পেপার

রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

নির্বাচনি খরচ জুগিয়েছে এলাকাবাসী
চা বাগান থেকে প্রথম মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খাইরুন
প্রকাশ: বুধবার, ১২ জুন, ২০২৪, ২:৪৮ এএম  (ভিজিট : ৫৯৮)
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার ‘চা-কন্যা’ খাইরুন আক্তার। রেকর্ডসংখ্যক ভোটে চা বাগানের প্রথম উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। কলসি প্রতীক নিয়ে প্রায় ৬৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন খাইরুন। তার জনপ্রিয়তায় প্রতিদ্বন্দ্বী সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। অথচ নির্বাচন করার ইচ্ছে বা টাকা কোনোটাই ছিল না খাইরুনের। চা বাগানের শ্রমিকদের দেওয়া অনুদানে দাঁড়িয়েছিলেন ভোটের ময়দানে, করেছেন বাজিমাত। 

চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর চা বাগানে এক ভাই তিন বোনের মধ্যে খাইরুন সবার ছোট। অন্য সব বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু খাইরুন আটকে আছেন বাগানের শ্রমিকদের মায়ার বেড়াজালে। চা বাগানে ছোট থেকে বড় সবাই তাকে ‘প্রতিবাদী দিদি’ বলে ডাকে। আর এ পরিচিতিকে কাজে লাগিয়েই এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন খাইরুন। 

২০১২ সালে খাইরুনের বাবার ক্যানসার ধরা পড়ে। নিজেদের গরু-ছাগল বিক্রি করে তার চিকিৎসা করানো হয়, কিন্তু বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বাবার অসুখের জন্য এসএসসির টেস্ট পরীক্ষাটাও দেওয়া হয়নি তার। সংসারের চাপে চা শ্রমিক হিসেবে বাগানের কাজে যোগ দিতে হয়। দুই বোন, এক ভাই ও মাকে নিয়ে অতিকষ্টে সংসার চালানোর পর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সব মহলে পরিচিতি পান বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান খাইরুন।

নির্বাচিত হওয়ার পর খাইরুনের বাড়িতে আলাপকালে তিনি জানান, মনোনয়নের ৫ দিন আগে আমি পঞ্চায়েত কমিটিকে বলি, আমাদের চা বাগান থেকে কেউ একজন উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। না হলে দেখা যাবে- যুগের পর যুগ চা বাগানের শ্রমিকরা শুধু ভোট দিয়েই যাবে, নিজেদের মধ্য থেকে কোনো প্রতিনিধি তৈরি করতে পারবে না। কিন্তু পঞ্চায়েত যে আমাকে বেছে নেবে তা আমি কখনো কল্পনাও করিনি। আমি সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে জানাই, আমার টাকা নাই। পরিবার-পরিজন নিয়ে আমি টানাপড়েনের মধ্যে আছি। তখন পঞ্চায়েত নেতারা জানান, তোমার টাকা নাই তো কী হয়েছে, আমরা এতগুলো শ্রমিক আছি, আমাদের ১৭০ টাকা মজুরি থেকে প্রতিদিন তোমার নামে ১০-২০ টাকা করে রেখে দেব। নির্বাচনের সব খরচ আমরা বহন করব।

যেমন কথা তেমন কাজ। মনোনয়নের জন্য আমার হাতে ৭৫ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হলো। সেখান থেকে শুরু হয় আমার নির্বাচনি যাত্রা। এরপর আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। মনোনয়নের মাত্র ৫ দিন আগে মাঠে প্রচারে নেমে পড়লাম। যে এলাকায় যাই সেখানেই লোকজন আমাকে টাকা, পোস্টার, ব্যানার দিয়ে সহযোগিতা করেছে। আমাদের বাগান এলাকায় মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার, কিন্তু আমি ভোট পেয়েছি ৭৬ হাজারের ওপরে। পুরো নির্বাচনে আমার মা মল্লিকা বেগম আমাকে হাঁস, মুরগি ও গাছ বিক্রি করে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। বাকি খরচ আমার ভোটারদের টাকায়। কেউবা আমাকে গাড়ি দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, কেউ মাইক দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, আবার কেউ দিয়েছেন নগদ টাকা। যে যেমন করে পারে সেভাবে আমার পাশে থেকে উৎসাহ দিয়েছেন।

প্রচারের কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, ৫ জন প্রার্থীর মধ্যে আমি সবার ছোট, তাই প্রচারকালে আমি কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের কথা বলিনি। কারণ অন্য সব প্রার্থীই বয়সে বড়। তাদের সম্মান করাটা আমার দায়িত্ব। তা ছাড়া আমি ভোটারদের বলেছি, আমি যদি নির্বাচিত হতে পারি তাহলে আপনাদের ন্যায্য হিস্যা আমি বুঝিয়ে দেব। আপনাদের একটি টাকাও আমি আত্মসাৎ করব না। এজন্য মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে এত ভোট দিয়েছে।

খাইরুন আরও বলেন, আমার সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ। আমি জানি না আসলে উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের কী কাজ? জনগণের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ করতে পারব। তবে আমি একটি বিষয় বলতে চাই, মানুষের প্রত্যাশা যদি পূরণ করতে না পারি তাহলে আমি ভবিষ্যতে আর কোনো দিন প্রার্থী হব না। নিজের বিজয়ে চুনারুঘাট উপজেলার সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে খাইরুন বলেন, আমি এতদিন দেখে এসেছি, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান একটি পদ নিয়ে সভা-সেমিনারে বসে থাকন, এর বাইরে আমি কোনো কাজ করতে দেখি না। তাই এবার আমার প্রথম কাজ হবে, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের কী কাজ সেটা খুঁজে বের করা। এখানে নারীর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বাস্তবায়ন করাই আমার কাজ। আমি মনে করি-মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের কোনো কাজই যদি না থাকে তাহলে এত বড় পদ দিয়ে কেন বসিয়ে রেখেছেন? নির্বাচিত হওয়ার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান যেভাবে পরিশ্রম করেছেন আমরাও তো সেভাবে পরিশ্রম করেছি। তাহলে আমাদের কাজ থাকবে না কেন?

সময়ের আলো/আরএস/ 




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ। নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।
ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close