ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ঈদুল আজহায় বিক্রির খরা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪, ৮:১৪ পিএম  (ভিজিট : ৩৭২)
দেশে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে পণ্যের মূল্য বাড়ছে। দ্রব্যমূল্যের এ ঊর্ধ্বগতিতে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের টেকা দায়। পণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে সে হারে আয় বাড়ছে না। ফলে বাজার ব্যবস্থার সাথে তাল মেলাতে পারছে না অনেকেই। অর্থনীতির মন্দা অবস্থার প্রভাব পড়েছে এবারের ঈদের কেনাকাটায়। পোশাক কেনার উপর মানুষের ব্যয় কমেছে। তবে এর মধ্যেও যেসকল ক্রেতা কাপড় কিনতে আসছেন তাদের অধিকাংশের অভিযোগ কাপড় সহ সকল পণ্যের দাম এবার বেশি। মূলত করোনা মহামারির পর থেকেই পোশাক খাতে এ অবস্থা।

মঙ্গলবার (১১ জুন) পুরান ঢাকার গ্রেট ওয়াল মার্কেট, নগর সিদ্দিকী প্লাজা ও সদরঘাটের পোশাকের মার্কেট ঘুরে ক্রেতাদের তেমন ভিড় লক্ষ্য করা যায়নি। তবে যেসব ক্রেতারা পোশাক কিনতে এসেছেন পছন্দমতো কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলেন তারা। কিছু কিছু দোকানে বিক্রেতাদের ব্যস্ততা লক্ষ্য করা গেলেও বেশিরভাগ দোকানেই ছিল ক্রেতার খরা। এদিন পোশাক মার্কেটে ক্রেতা কম থাকলেও যারা এসেছেন তাদের চাহিদা অনুযায়ী পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রী-পিচ, লেহেঙ্গা, জুতা, গহনা, কসমেটিকস সহ বাচ্চাদের পোশাক কিনেছেন তারা। তবে বাচ্চাদের ও মেয়েদের পোশাকের দোকানে তুলনামূলক কিছুটা ভিড় ছিল।

সদরঘাটে গ্রেট ওয়াল মার্কেটের লেভেল-২ এর দোকান গুলোতে দেখা যায় বাচ্চাদের জন্য আরামদায়ক দৃষ্টিনন্দন পোশাক সাজানো রয়েছে। গরমের কারণে বাচ্চাদের জন্য পাতলা কাপড় পছন্দ করছেন বাবা-মা। বড়দের জন্য টি-শার্ট ৬০০ থেকে ২ হাজার টাকা, গ্যাবাডিন, জিন্স প্যান্ট ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাঞ্জাবির দোকান গুলোতে ভিড় কম। পাঞ্জাবির কাপড় ও রঙ অনুয়ায়ী ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ঈদ সন্নিকটে পাঞ্জাবির বিক্রি কিছুটা বাড়বে বলে জানান বিক্রেতারা।


মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, মেয়েদের পোশাকের মধ্যে গাউন ও থ্রি-পিচের আধিক্য। চাহিদাও আছে। কাপড়ের মান ও ক্রেতাদের চাহিদা ভেদে দাম কম বেশি আছে বলে জানান বিক্রেতারা। দোকানে আছে নতুন মডেলের জামা পুষ্পা ৬ হাজার টাকা, লেডি কন সাড়ে ৫ হাজার টাকা, ঘারারা ৪ হাজার, নাগা ২ হাজার ৫০০, নায়রা ২ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা।

এছাড়া বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে আরও দেখা যায়, থ্রী-পিচের মধ্যে এলাচি ৭০০ টাকা, কিচমিচ ৮০০টাকা, রক্তজবা ৫৫০ টাকা, মালহান ১২শো টাকা, আনস্টিচ ইন্ডিয়ান, নায়রা কাট, সাদা বাহার ১৫শো টাকা, আগা নূর ১৮শো টাকা, পাখি ২ হাজার ও ইন্ডিয়ান ক্যাটালগ আড়াই হাজার থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবং শাড়ির মধ্যে আছে জামদানি, তাঁত ও সূতি। কাপড় ও রঙ ভেদে ৮০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে শার্টের কাপড়ের প্রতি পিস ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। পাঞ্জাবির জন্য কাপড় পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা (প্রতি গজ) দামে।


পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ গ্রেট ওয়াল মার্কেটে আসেন সজিব আহসান। ঈদের ৩দিন আগে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর যাবেন। তিনি বলেন, পরিবারের সকলের জন্য কেনাকাটা করতে পারিনি। এবার কাপড়ের দাম বেশি। গত ঈদে সবার জন্য কেনাকাটা করেছি। এবার সবার জন্য কিনতে পারছি না। দুই মেয়ে ও বাবা-মায়ের জন্য পোশাক কিনেছি। কাপড়ের দাম গত ঈদের মতোই অনেক বেশি।

মিথিলা মনি ফ্যাশন থেকে পোশাক বিক্রেতা কামাল হোসেন বলেন, এবার বেচাকেনা ভালো না। রোজার ঈদে বেচাকেনা কিছুটা ভালো ছিল। এরকম চলতে থাকলে বড় লোকসান গুনতে হতে পারে। তবে আশা করছি শেষ মুহূর্তে বেচাকেনা কিছুটা বাড়বে। হয়তো অনেকে এখনো বেতন পায়নি।

একই আশা ব্যক্ত করেন নগর সিদ্দিকী প্লাজার জেন্টস মার্কের হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, এখনো পর্যন্ত ক্রেতাদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাইনি। শেষদিকে বিক্রি বাড়ার আশায় আছি।

ঈদ কেনাকাটায় পুরান ঢাকার ইসলামপুর, পাটুয়াটুলি, জাহাঙ্গীর টাওয়ার, সদরঘাট, ইসলাম টাওয়ার, বকুলি ইসলামপুর কমপ্লেক্স, লক্ষ্মীবাজার, কলতাবাজার, ওয়ারী, কাঠেরপুল, ধূপখোলার মার্কেটগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় ও বিক্রি কিছুটা কম।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজার ঈদের তুলনায় কোরবানির ঈদে পোশাক মার্কেটে চাহিদা কম থাকে। অনেকে গ্রামের বাড়িতেও যায় না। আবার এখন অর্থনীতির অবস্থা ভালো না। অধিকাংশ মানুষ পোশাক কিনে অর্থ ব্যয় করতে আগ্রহী না। তবে ঈদ সামনে যেকটা দিন আছে অন্তত কিছু ভিড় হবে আশাকরি।

মার্কেটগুলোর কসমেটিক্সের দোকানগুলোতেও বিক্রি কম দেখা গেছে। এবিষয়ে গ্রেট ওয়াল মার্কেটের নিউ ঋতু কসমেটিক্সের স্বত্তাধিকারী মো. রহমত শেখ বলেন, আমাদের এখানে দেশি-বিদেশি কসমেটিক্স, লেডি ব্যাগ, পার্স ব্যাগ ইত্যাদি ধরনের পণ্য সামগ্রী বিক্রয় করা হয়। এখন একেকটা জিনিসে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পরিমাণে দাম বেড়েছে। দাম বেশি হলে বিক্রিও কম হবে এটা স্বাভাবিক। দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো না। দু’বছর পরে এ ব্যবসার কি হবে কে জানে!

একই চিত্র দেখা যায় জুতার মার্কেটেও। সদরঘাটে এ্যাপেক্স, বাটা, সম্রাট সহ হাজী মোহাম্মদ রওশন আলী মার্কেট ঘুরে দেখা যায় ক্রেতা কম। জুতার দোকানে এসে ক্রেতাদের মধ্যে কেউ দাম নির্ধারণ করেছেন, কেউ আবার দাম শুনেই ফিরে যাচ্ছেন। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ জুতার দাম তুলনামূলকভাবে বেশি চাওয়া হচ্ছে।

এবিষয়ে গ্রেট ওয়াল মার্কেটের কয়েকজন বিক্রেতার সাথে কথা হলে তারা বলেন, দু’বছর আগে যে দামে আমরা জুতা বেচতাম সেই দামে এখন কিনতেও পারছি না। জুতা প্রতি ২০০ থেকে ৫০০ টাকা বেড়েছে। আমরাও নিরুপায়। যেভাবে কিনছি সেভাবেই বিক্রি করছি।

সময়ের আলো/জেডআই




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close