ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

লবণ সিন্ডিকেটে কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের নাকানিচুবানি
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪, ২:১২ এএম  (ভিজিট : ৩৩৮)
চামড়া শিল্পের কাঁচামালের অন্যতম জোগানদার নাটোর। চামড়া শিল্পের অন্যতম বৃহত্তম কাঁচামালের জোগানদাতা হিসেবে নাটোর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রেখে চলেছে দীর্ঘদিন ধরে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কুরবানির পশুর কাঁচা চামড়া আসে নাটোরের চকবৈদ্যনাথের কাঁচা চামড়ার আড়তে। 

দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ৩০-৩৫ জেলার লাখ লাখ পিস চামড়া আসে এই আড়তে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ চামড়ার আড়ত থেকে ট্যানারি মালিকদের মোট চাহিদার ৫০ ভাগ চামড়া সরবরাহ করা হয় রাজধানী শহর ঢাকায়। চকবৈদ্যনাথের কাঁচা চামড়ার আড়তে লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাতের পর প্রায় চার মাস এ মোকামেই সংরক্ষিত থাকে কাঁচা চামড়া। দীর্ঘ এ সময় চামড়া সংরক্ষণে প্রয়োজন হয় পর্যাপ্ত পরিমাণ লবণের। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই সংরক্ষণ উপাদানটি ঘিরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে লবণ সিন্ডিকেট। এই লবণ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন চামড়ার আড়তদার, মৌসুমি ব্যবসায়ী ও কুরবানি ঈদের দিন কাঁচা চামড়া সংগ্রহকারীরা।

আসন্ন কুরবানি ঈদে লবণের এই সিন্ডিকেট ভাঙতে ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্যোগ নেই প্রশাসনের। চাহিদার তুলনায় লবণের সরবরাহ বেশি থাকার তথ্য জানিয়ে দাম না বাড়ার আশ্বাস দিয়েছে নাটোর জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া চামড়া সংগ্রহে সক্ষম মাদরাসা ও এতিমখানা কর্তৃপক্ষকে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন ও বিসিক।

এ বিষয়ে নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুঁইঞা বলেন, লবণ ব্যবসায়ী ও চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়েছে। চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত লবণ থাকায় আমরা আশা করছি দাম বৃদ্ধিজনিত কোনো সংকট সৃষ্টি হবে না। এ ছাড়া এবারই প্রথম চামড়া সংগ্রহে সক্ষম মাদরাসা ও এতিমখানায় জেলা প্রশাসন ও বিসিকের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে লবণ সরবরাহ করা হবে।

নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও ঐতিহ্যবাহী চামড়ার আড়তে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ফড়িয়া ব্যবসায়ীসহ ট্যানারি মালিকরা যাতে নিরাপদে এবং নির্বিঘ্নে কেনাবেচা করতে পারেন সে জন্য পুলিশ তৎপর থাকবে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নাটোর বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক দিলরুবা দীপ্তি বলেন, বর্তমানে নাটোর জেলায় লবণের চাহিদা ৭৫ টনের বিপরীতে মজুদ আছে ১০০ টন। এক সপ্তাহ আগে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) লবণের দাম ছিল ৮৮০-৯০০ টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ লবণ ৮৩০-৮৪০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের দুই সপ্তাহ আগে লবণের দাম কমাটা একদিক দিয়ে যেমন স্বস্তিদায়ক আরেকদিক থেকে উদ্বেগেরও। কেননা ঈদের দুয়েক দিন আগেও হঠাৎ করে লবণের দাম বৃদ্ধির রেকর্ড রয়েছে। কী পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করা হবে তা ব্যবসায়ীরা নির্ধারণ করেন শিল্প মন্ত্রণালয় চামড়ার দাম বেঁধে দেওয়ার পর। তাই লবণ কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মূলত ঈদের দুয়েক দিন আগেই। ফলে ঈদের দুই সপ্তাহ আগে লবণের দামের হ্রাস-বৃদ্ধি তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না।

চামড়ার আড়তদার হাজি লুৎফর রহমান বলেন, যেহেতু এখন কুরবানি ঈদ মৌসুম তীব্র গরমের মধ্যে শুরু হয় সেহেতু চামড়া সংরক্ষণে প্রচুর লবণের প্রয়োজন হয়। বলা হচ্ছে, এবার লবণের সরবরাহ বেশি। কিন্তু লবণের দাম কাক্সিক্ষত হারে কমছে না। ফলে ব্যবসায়ীরা শুরুতেই বড় ধাক্কা খাচ্ছেন। লবণের সিন্ডিকেট ভেঙে দিলে ব্যবসায়ীরা কিছুটা উপকৃত হবে। চামড়া ব্যবসায়ী হালিম সিদ্দিকী বলেন, সরকার নির্ধারিত চামড়া ও লবণের দামে সামঞ্জস্য থাকা দরকার। সেই সঙ্গে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে হবে। সিন্ডিকেট মূলত টার্গেট করে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। কী পরিমাণ চামড়া তারা সংগ্রহ করবে তার হিসাব না করেই বিপুল পরিমাণ লবণ মজুদ করে। তখন লবণের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। মৌসুমি ব্যবসায়ী না, আড়তদার ও অনান্য ব্যবসায়ীরা চামড়া সংরক্ষণ করে। তাই সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া।

চামড়া ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল ইসলাম হিরু বলেন, নাটোর শহরের চকবৈদ্যনাথ এলাকায় দেড় শতাধিক আড়ত রয়েছে। গত ঈদুল আজহায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম ৪৫-৫০ টাকা ফুট বেঁধে দেয় ট্যানারি মালিকরা। ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেওয়া দামে গত বছর ঈদুল আজহায় এই বাজারে প্রায় ৪ লাখ গরুর চামড়া বিক্রি হয়। এবার ৫ টাকা দাম বৃদ্ধি করে ৫৫ টাকায় চামড়া কেনার ঘোষণায় চামড়ার সরবরাহ আরও বাড়বে।

জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি এসএম মকছেদ আলী বলেন, বর্তমান বাজারমূল্যে একটি খাসির চামড়া প্রক্রিয়াজাতের জন্য অন্তত এক কেজি লবণ ব্যবহার করতে হয়। এতে অন্যান্য প্রক্রিয়া খরচ শেষে একটি চামড়ার দাম হওয়া উচিত ৪০-৪৫ টাকা। অথচ খাসির চামড়ার দাম ২০-২৫ টাকার বেশি নয়। চামড়া শিল্পের গুরুত্ব আলাদাভাবে বিবেচনা করে শুধু চামড়ার জন্য ভর্তুকি মূল্যে লবণ সরবরাহ করা উচিত।

জেলায় লবণের সরবরাহকারী একতা ট্রেডার্সের মালিক দীলিপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, বর্তমানে জেলায় চাহিদার তুলনায় কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতের লবণের সরবরাহ বেশি আছে। ফলে কোনোরকম ঘাটতি হবে না, দামও বাড়বে না। এ ছাড়া বর্তমানে লবণের দাম নিম্নমুখী।
`
গত বছরের চেয়ে চলতি বছর লবণযুক্ত গরুর চামড়ায় প্রতি ফুটে ৫ টাকা বৃদ্ধিতে উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম চামড়ার বাজার নাটোরের ব্যবসায়ীরা খুশি। তবে চায়না নির্ভরতা কমিয়ে অন্যান্য দেশে চামড়ার বাজার তৈরি করতে পারলে চামড়ার দাম আরও বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close