ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ইয়াবায় আসক্ত কাউসার ঘুমাননি পাঁচ দিন
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১১ জুন, ২০২৪, ১:১২ এএম  (ভিজিট : ৭২০)
রাজধানীর বারিধারায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে সহকর্মী মনিরুল ইসলামকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যার আগে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন কনস্টেবল কাউসার আহমেদ। পাশাপাশি তিনি নিয়মিত ইয়াবা সেবন করতেন। কাউসার মনিরুলকে হত্যার আগে টানা পাঁচ দিন ঘুমাননি। ঘণ্টায় ঘণ্টায় ধূমপান করতেন তিনি। ঘটনার দিন ডিউটি রোস্টারে তার নাম দেখতে পান। তবে যে কারণে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন এবং মনিরুলের প্রতি তার কী আক্রোশ ছিল তা প্রকাশ করেননি। সোমবার সাত দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। 

গতকাল ছিল রিমান্ডের প্রথম দিন। হত্যার কারণ জানতে চাইলে কাউসার ঊর্ধ্বতনদের বলেন, তর্কাতর্কির জেরেই মনিরুলকে গুলি করে হত্যা করেন। তবে কী নিয়ে তর্কাতর্কিতে জড়িয়েছেন সেটি বলেননি। গতকাল তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে।  

অন্যদিকে স্পর্শকাতর এলাকা কূটনৈতিক পাড়ায় ইয়াবায় আসক্ত ও মানসিকভারসাম্যহীন একজন কনস্টেবলকে সশস্ত্র অবস্থায় দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলছেন, কাউসারের সমস্য দীর্ঘদিনের। সব জেনেও তাকে এই স্পর্শকাতর এলাকায় কীভাবে যুক্ত করা হয়েছে তা নিয়ে খোদ পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের মধ্যে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। 

পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সময়ের আলোকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে আরও ভয়াবহু ঘটনা ঘটাতে পারতেন কাউসার। তার প্রোফাইলে অবশ্যই সবকিছু উল্লেখ করা আছে। তবু কেন তাকে এমন স্পর্শকাতর এলাকায় দেওয়া হলো?

ডিএমপি সূত্র জানায়, কাউসার আহমেদ আগ থেকে ‘মানসিক রোগী’ ছিলেন। এ কারণে তাকে তিন দফা পাবনায় মানসিক হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করানো হয়েছিল ডিএমপির পক্ষ থেকে। কাউসার আলীর পরিবারও তাকে মানসিক রোগী বলছেন। এমন একজন ‘মানসিক রোগী’কে স্পর্শকাতর এলাকায় রাখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মানসিক রোগী বা শারীরিকভাবে অসুস্থ অথবা মানসিকভাবে চাপে থাকলে পুলিশের যেকোনো সদস্য বা কর্মকর্তাকে পরিপূর্ণ সুস্থতার জন্য ছুটিতে পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। তা হলে ‘অসুস্থ’ পুলিশ সদস্যকে কেন ডিপ্লোম্যাটিক জোনের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর এমন স্থানে ডিউটি দেওয়া হলো তা খতিয়ে দেখছে সংশ্লিষ্টরা।

ডিএমপি সূত্র জানায়, স্পর্শকাতর এলাকায় যেসব পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য দায়িত্ব পালন করেন তাদের দেখেশুনে পদায়ন করা হয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্ত সামর্থ্যবান পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের পদায়ন করা হয়। এখানে ডিউটি রোস্টার সিস্টেমে ভাগ করে দেওয়া হয়।
গুলশান থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, কনস্টেবল মনিরুলকে গুলি করে হত্যা মামলায় রিমান্ডে এনে কাউসারকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তবে এখন পর্যন্ত কাউসার কী কারণে মনিরুলকে গুলি করে হত্যা করেছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দেয়নি। আশা করছি শিগগিরই হত্যাকাণ্ডের কারণ বেরিয়ে আসবে।

এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের নিজেদের কোনো গাফিলতি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। চাঞ্চল্যকর মনিরুল হত্যার ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) রিফাত রহমান শামীম ছাড়াও কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি ডিভিশনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) এলিন চৌধুরী এবং ডিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার আসফাক হোসেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি কথাকাটাকাটি, এরপর গুলি, তার কাছে এসএমজি ছিল। এসএমজি দিয়ে ফায়ার ওপেন করেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। ঘটনা শুনে আসলেই আমরা সবাই বিচলিত হয়েছিলাম-এক কনস্টেবল আরেক কনস্টেবলকে কেন হত্যা করবে।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি কমিটি হয়েছে, মামলা হয়েছে। তিনি এখন রিমান্ডে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আমার মনে হয়, তদন্তের পরই সঠিক ঘটনা পাওয়া যাবে। এখন যেটাই বলব অনুমানভিত্তিক কথা বলব কিংবা কারও কথা শুনে কথা বলব। তদন্ত শেষেই সম্পূর্ণ জিনিসটা আমরা আপনাদের বলতে পারব।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, এখন পর্যন্ত যা শুনেছি হয়তো তার পারিবারিক কোনো অসুবিধা থাকতে পারে বা অন্য কোনোকিছু থাকতে পারে। কাজেই এখনই সুনির্দিষ্টভাবে কোনোকিছু আমরা বলতে পারছি না। আমরাও উদ্বিগ্ন এ কারণে যে, একজন পুলিশের কাছে অস্ত্র ছিল, কী এমন কারণ ঘটেছিল তাকে ফায়ার ওপেন করতে হয়েছে। আমরা অবশ্যই এ বিষয়ে তদন্ত করব। কেউ ইচ্ছাকৃত এ ঘটনা করে থাকে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে করে থাকে, কিংবা কেন ঘটেছে-এগুলো সবই আমরা দেখব।

মনিরুলের মা মূর্ছা যাচ্ছেন : 
সহকর্মীর গুলিতে নিহত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুল হকের (২৭) গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বিষ্ণুপুরে চলছে শোকের মাতম। বিষ্ণুপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত শামসুল হকের ছয় সন্তানের মধ্যে মনিরুল ছিলেন সবার ছোট।  মনিরুলের বৃদ্ধ মা দিলারা হক ছেলের শোকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। তার স্ত্রী তানিয়া আক্তার তন্বী দুই বছরের শিশু সন্তান তাকিকে জড়িয়ে ধরে বিলাপ করছেন। কাঁদছেন মনিরুলের বড় ভাই আমিনুল হক মিঠু। মনিরুলের দুই বছর বয়সি ছেলে তাকি কিছুই বুঝতে পারছে না। প্রতিবেশী ও স্বজনরা এসে বাড়িতে ভিড় করেছেন মনিরুলের শোকাহত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে। সবার চোখেই ছিল শোকাশ্রু। কারও মুখেই যেন কোনো ভাষা নেই। গ্রামবাসী ও স্বজনরা মনিরুল হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীর দ্রুত বিচার দাবি করছেন।

অন্যদিকে সোমবার সকালে স্থানীয় ঈদগা মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মনিরুলের দাফন সম্পন্ন হয়।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৪ সালে নেত্রকোনার আঞ্জুমান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন মনিরুল। পরে ময়মনসিংহে একটি বেসরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়ে চতুর্থ সেমিস্টার পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এর মধ্যে ২০১৬ সালের শেষের দিকে পুলিশের চাকরিতে যোগ দেন। চাকরিতে থাকা অবস্থায় তিন বছর আগে জেলার পূর্বধলা উপজেলায় বিয়ে করেন মনিরুল। তার স্ত্রীর নাম তানিয়া আক্তার তন্বী। মনিরুলের বড় ভাই মাহবুব আলম টিটু পুলিশের একজন সদস্য। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close