ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সংকটে সুবিধা নিতে বুড়িমারীতে ভর করেছে অবৈধ ব্যবসায়ীরা
প্রকাশ: সোমবার, ১০ জুন, ২০২৪, ৩:৩৮ এএম  (ভিজিট : ৩০৪)
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর এটি। এ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পণ্যের গাড়িতে সম্প্রতি একের পর এক অবৈধভাবে আনা হচ্ছে নিষিদ্ধ ঘোষিত কোটি কোটি টাকার পণ্য। ভারত ও বাংলাদেশের অন্তত ১০টি নিরাপত্তা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে ভারতীয় এসব পণ্য এনে রাতারাতি কোটিপতি হয়েছেন অনেকে। অবৈধ এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে ভারত ও বাংলাদেশের অসাধু কয়েকজন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, আমদানিকারক এবং রফতানিকারকের বিরুদ্ধে। তাদের দৌরাত্ম্যে নানামুখী সংকটে পড়েছে বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন। 

অবৈধ ব্যবসায়ীদের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন বৈধ পন্থায় আমদানি ও রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুজ্জামান সায়েদ বলেন, একটি চক্র পাথর আমদানির নামে ভারত থেকে শাড়ি ও থ্রিপিস, সুগন্ধি কেমিক্যাল, কসমেটিকস, চিকিৎসাসামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য অবৈধভাবে নিয়ে আসছে। এতে এই স্থলবন্দরের প্রকৃত ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

এ ব্যাপারে জানার জন্য যোগাযোগ করা হলে বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের (কাস্টমস) সহকারী কমিশনার (এসি) নাজমুল হাসান বলেন, আমাদের কাস্টমসে দায়িত্বরত সবাই কয়েক ধাপে পণ্য আমদানি ও রফতানির গাড়িগুলো চেক করে থাকে। কোনো গাড়িকে সন্দেহ হলে খালি করে যাচাই করা হয়। এভাবে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি গাড়ি পুরো খালি করে দেখা হয়। কোনো আমদানিকারক বা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অবৈধভাবে কোনো মালামাল আনলে ও ধরা পড়লে কাস্টমস আইনে তাদের লাইসেন্স বাতিল করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গাড়িসহ পণ্য স্ক্যান করার জন্য স্ক্যানার বসাতে রংপুর কমিশনারের মাধ্যমে এনবিআর বরাবর চিঠি ও প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এ প্রযুক্তি এখানে বসানো হলে অবৈধভাবে পণ্য আনার সাহস পাবে না কেউ। কাজের গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা বাড়বে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটান থেকে পাথর আমদানি করা হয় সর্বাধিক। খাদ্যশস্য ও বিভিন্ন প্রকার বীজও আমদানি করা হয়ে থাকে। প্রতিদিন প্রায় ৪০০-৫০০ গাড়িতে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি ও রফতানি করা হয়। ঋণপত্র (এলসি) অনুযায়ী এসব গাড়িতে আনা পণ্যের সঠিকতা যাচাই করা হয় অনুমানের ওপর ভিত্তি করে। গুরুত্বপূর্ণ এ শুল্ক স্টেশনে নেই কোনো স্ক্যানার। তাই পণ্য স্ক্যান করা যায় না। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা পাথর ও অন্যান্য পণ্যের আড়ালে ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস, কসমেটিকস, গহনা ও চিকিৎসাসামগ্রী পাচার করছে।

ভারতের কলকাতার রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান অভিক অ্যান্ড সন্সের কাছে ১৮ টন চায়না ক্লে পাউডার আনতে গত ১২ মার্চ ১৮৮১২৪০১০০০১ নম্বর অনুযায়ী এলসি দেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ঢাকার মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ। পণ্যগুলো ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে গত ৬ মে ভারতীয় ট্রাকে বুড়িমারীতে আমদানি করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, চ্যাংড়াবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের সহায়তায় ক্লে পাউডারের ভেতর ভারতীয় গহনা, চিকিৎসাসামগ্রী এবং অন্যান্য পণ্য পাচার করা হয়েছে। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিনেও পণ্য না পেয়ে পাটগ্রাম থানা ও গাজীপুরের টঙ্গী থানায় মামলা করেন। 

মামলার সূত্র ধরে গাজীপুর ডিবি পুলিশের একটি দল আসামি বুড়িমারী ইউনিয়নের তুহিনুজ্জামান বাবু ও মনোয়ার হোসেনকে আটক করে এবং হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের দোয়ানী মোড় এলাকার একটি বাড়ি থেকে ঘটনার ২০ দিন পর ক্লে পাউডার উদ্ধার করে। এ সময় উদ্ধারকৃত পাউডারের ভেতরে অবৈধভাবে আনা ১০ কার্টন সিটি গোল্ডের বিভিন্ন ধরনের গহনা, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, ৩০ কার্টন ক্যানুলা ও অন্যান্য পণ্য পাওয়া যায়। এসব পণ্যের মূল্য প্রায় কোটি টাকা।

একইভাবে গত বছরের ২৭ মার্চ এবং চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি পাথরবোঝাই ট্রাকে অবৈধভাবে আনা হয় কয়েক কোটি টাকার ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস ও কসমেটিকস সামগ্রী। অভিযোগ উঠেছে, পণ্য পাচারে চ্যাংড়াবান্ধা ও বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ছাড়াও স্থল শুল্ক স্টেশনের কতিপয় অর্থলোভী কাস্টমস কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে।

একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিদিন বেশ কয়েকটি গাড়িতে পণ্য আমদানি ও রফতানি করা হয়। সব গাড়ি খালি করে দেখা সম্ভব হয় না। ৬ মে আমদানি করা চায়না ক্লে পাউডারের ভারতীয় গাড়ি আমদানিকারকের প্রতিনিধি, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের উপস্থিতিতে যাচাই করা হয়। পণ্য সঠিক পেয়ে আমদানিকারকের প্রতিনিধি তুহিনুজ্জামান বাবুকে পণ্য বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ওইদিনই আমদানিকারকের ঢাকার ঠিকানায় বাংলাদেশি গাড়িযোগে পণ্য পাঠিয়ে দেন তুহিনুজ্জামান বাবু। ২০ দিন পর উদ্ধারকৃত পণ্যের সঙ্গে অবৈধ পণ্য পাওয়ার বিষয়টি ষড়যন্ত্র হতে পারে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক আমদানি ও রফতানিকারক দাবি করেন, ভারত-বাংলাদেশের একটি কুচক্রী মহল ও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসায়িকভাবে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। এতে শত শত আমদানি ও রফতানিকারকরা শঙ্কিত।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close