আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে দা, ছুরি, বঁটি, চাপাতি, নারিকেল কোরানিসহ অন্যান্য দেশীয় জাতের লোহার জিনিসপত্র তৈরিতে স্থানীয় কামারেরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময়ে কর্মকারদের দম ফেলার ফুসরত নেই। তারা ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে রাত দিন এক করে এসব হাতিয়ার তৈরিতে নির্ঘুম রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।
জানা যায়, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে দা, বঁটি, চাপাতি ও ছুড়ির চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ফলে, কামারদের কাজের ব্যস্ততা এতোই বেড়ে যায় যে, তাদের যেন দম ফেলানোর সময়ই থাকেনা তাদের।
এ সময় কথা হয় কোরবানির পশুর মাংস কাটার জন্য দা বডি শান দিতে আসা ক্রেতা ময়মনসিংহ জেলার পাগলা থানা খুরশিদ মহল এলাকার ক্রেতা আব্দুল জব্বার, জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার সুখিয়া ইউনিয়নের ছয়শির গ্রামের আব্দুল মতিন, উপজেলার পিতলগঞ্জ চৌদার গ্রামের ইমরান হোসেনসহ অনেকের সাথে। তারা জানান, সারা বছর এগুলো কোন কাজ না করায় নষ্ট হয়ে থাকে। শান দিয়ে পুরাতনগুলো দিয়েই মাংস কাটার কাজ চালিয়ে দিবেন। শান দিতে ৫০ টাকায় নেন কর্মকার।
স্থানীয় কর্মকার আশরাফ মিয়া, সুমন মিয়া, জিল্লুর রহমান, জলিল মিয়া, রফিকুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, বছরের অন্য সময়ের চেয়ে কোরবানি ঈদে তাদের আয় রোজগার অনেক বেশি হয়। এবার প্রতিটি ধারালো দা বিক্রয় হচ্ছে ৪০০-৬০০ টাকা, কোরবানির ছুরি ৫০০-৯০০ টাকা, পশুর হাড় কাটার জন্য চাপাতি ৬০০-১০০০ টাকা, চামড়া ছাড়ানোর চাকু ২৫০-৩০০ টাকা, নারিকেল কোরানি ৩০০-৪০০ টাকা, মাংস কাটার বটি ৪৫০-৮০০ টাকা। তাছাড়া অন্যান্য কৃষি উপকরণ ধানকাটার কাঁচি, লাঙ্গলের ফলাসহ অন্যান্য তৈজসপত্রও ভালো দামে বিক্রয় হয়ে থাকে।
সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহকালে দেখা যায়, উপজেলার জিনারী ইউনিয়নের কামারপাড়া, হাজিপুর বাজার, নতুন বাজার, পোস্ট অফিস মোড়, রামপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের হাট বাজারে এখন পুরোদমে পশু জবাইয়ের ছুরি, চামড়া ছাড়ানোর চাকু, নারিকেল কোরানি, মাংস কাটার চাপাতিসহ বিভিন্ন লোহার তৈরি জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছেন কামারেরা। দেখে মনে হয় যেন দম ফেলার সময় নেই তাদের।
সূত্রমতে, হোসেনপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রায় দুই শতাধিক কর্মকার সরাসরি এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাদের নিখুঁত কাজের সুনামের জন্য পাশের ময়মনসিংহের গফরগাঁও, নান্দাইল এবং পাকুন্দিয়া এলাকার লোকজনও ছুটে আসেন হোসেনপুরে। কেননা তাদের পেশাগত আচরণও মুগ্ধ করে সবাইকে। শত পরিশ্রমের মাঝেও হাসি মুখে কথা বলে ক্রেতাদের মন জয় করার কারণে অনেকেই খুশি মনে তাদের কিছু বাড়তি টাকা দিতেও দ্বিধাবোধ করেন না।
উপজেলার আড়াইবাড়ীয়া গ্রামের কর্মকার মো. জিল্লুর রহমান জানান, এমনিতে সারা বছর কাজকর্ম অনেক কম থাকে। এর মধ্যে কয়দিন পর পর লোহার দাম বেড়ে যায়। এতে তারা বেকায়দায় পড়েন। ভালো চালান থাকলে আগে থেকে লোহা কিনে রাখতে পারলে ভালো লাভ পাওয়া যেতো বলেও জানান তারা। তাছাড়া পশু জবাই থেকে শুরু করে মাংস তৈরির কাজে প্রয়োজনীয় ওইসব হাতিয়ারের চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। তাই ঈদের পূর্বেই কোরবানির পশু জবাই কাজের হাতিয়ার সংগ্রহে কামারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেন স্থানীয় কসাই, কৃষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ।
এ সময় দ্বীপেশ্বর পোস্ট অফিসের মোড়ে কর্মকার প্রদীপ চন্দ্র, হাজিপুর কামার পাড়ার বাসিন্দা বরূন, রামপুর বাজারের সুজিতসহ অনেকেই জানান, ঈদে দা, চাপাতি ও ছুড়ির ব্যাপক চাহিদা থাকায় আমাদের কাজের ব্যস্ততা অনেক বেশি। তবে বাজারে আমদানিকৃত হাতিয়ার আসায় আমাদের তৈরি হাতিয়ারের চাহিদা বহুগুণে কমে গেছে। ফলে পূর্বপুরুষদের এই পেশা ধরে রাখা দুষ্কর হবে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
সময়ের আলো/আরআই