ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

সাদা ফসফরাস ব্যবহারের নতুন তথ্য
নিষিদ্ধ মার্কিন অস্ত্রে ইসরাইলি যুদ্ধাপরাধ অব্যাহত
প্রকাশ: রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪, ৫:১২ এএম  (ভিজিট : ৫২৬)
লেবাননে সাদা ফসফরাস ব্যবহারের নতুন তথ্য সামনে এনেছে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। ওই সংস্থা বলছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে দক্ষিণ লেবানন সীমান্তে বিস্তৃত আবাসিক এলাকাসহ কমপক্ষে ১৭টি পৌরসভায় নিষিদ্ধ-ঘোষিত সাদা ফসফরাস ব্যবহার করেছে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। এর আগেও ২০২৩ সালের অক্টোবরে একই মানাবাধিকার সংগঠন গাজা উপত্যকা ও লেবাননে সাদা ফসফরাস ব্যবহারের তথ্য প্রকাশ্যে এনেছিল।

পরে যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অনুসন্ধানে জানা গিয়েছিল, ব্যবহৃত সাদা ফসফরাস অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি। তারা এ নিয়ে ইসরাইলের বিরদ্ধে যুদ্ধাপরাধ-তদন্তের আহ্বান জানিয়েছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, জনাকীর্ণ স্থানে এই রাসায়নিকের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ইসরাইল আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন তথা যুদ্ধাপরাধ করেছে। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নতুন প্রতিবেদন বলছে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী যে শহরগুলোতে সাদা ফসফরাস অস্ত্র ব্যবহার করছে-যেখান থেকে কয়েক মাস লড়াইয়ের কারণে হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এইচআরডব্লিউ একে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন আখ্যা দিয়েছে। সংস্থাটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেসব স্থানে এই অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তার মধ্যে অন্তত পাঁচটি পৌরসভা জনবহুল আবাসিক এলাকা।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অক্টোবর থেকে সাদা ফসফরাসে আহত ১৭৩ জনকে তালিকাভুক্ত করেছে। এই তালিকায় এমন দুজন আছেন, যারা বোস্তান নামের গ্রামে ১৫ অক্টোবর সাদা ফসফরাস অস্ত্রে ইসরাইলি আক্রমণের শিকার হয়েছিল। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা নিয়ে তাদের হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছিল। 
দক্ষিণ লেবাননের গ্রাম কাফর কিলায় সাদা ফসফরাস ব্যবহার করে ইসারইলি হামলার প্রত্যক্ষ সাক্ষী একজন ফটোগ্রাফার। তিনি এইচআরডব্লিউকে বলেছেন, ‘গাড়ি চালানোর সময় জানালা খুলে রেখেছিলাম। হঠাৎই সাদা ধোঁয়ায় আমার গাড়ি ভরে গিয়েছিল। অনুভব করলাম আমার পেট গুলিয়ে আসছে। গলা, ফুসফুস এবং পেটে ভয়ানক অনুভূত হয়েছিল। সেই রাতে আমার ডায়রিয়া হয়। তারপরে আমি প্রায় পাঁচদিন বা তারও বেশি সময় ধরে কিছুই খেতে পারিনি।’ ওই আলোকচিত্রী ঘুমাতে পেরেছিলেন আরও দুদিন পর। 

বিকল্প ধারার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ট্রুথ আউটের এক প্রতিবেদন বলছে, হোয়াইট ফসফরাস একটি অত্যন্ত দগ্ধকারক রাসায়নিক। মানুষ সরাসরি সংস্পর্শে না এলেও এর গুরুতর আঘাতের শিকার হতে পারে। সাদা ফসফরাস শ্বাসকষ্ট এবং স্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি, হাড় ভেঙে যাওয়া এবং চরম ব্যথার কারণ হতে পারে। 
যেহেতু সাদা ফসফরাস ১৬০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রায় জ্বলতে পারে, এটি মানুষের মানুষের সংস্পর্শে এসে পোশাক, মাংস কিংবা হাড়ের মাধ্যমে জ্বলে উঠলে এটি ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে। 

ট্রুথ আউট জানাচ্ছে, এই রাসায়নিক পদার্থটি ভবন, যানবাহন এবং কৃষি জমির ক্ষতি করে। ঘরে আগুন জ্বালায় এবং জমিকে দূষিত করে। কৃষি জমিতে এর প্রভাব এতটাই মারাত্মক যে কিছু বিশেষজ্ঞ সাদা ফসফরাসের ব্যবহারকে পরিবেশগত সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কারণ এর স্থায়ীভাবে উর্বর জমি ধ্বংস করার ক্ষমতা রয়েছে।

বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নির্বিচারি প্রভাবের কারণে আবাসিক এলাকায় সাদা ফসফরাস ব্যবহারকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বিবেচনা করা হয়। গত বছরের অক্টোবরেই হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছিল, ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান হামলায় সাদা ফসফরাস ব্যবহার করছে ইসরাইল। লেবাননে হামলায়ও তারা সাদা ফসফরাস ব্যবহার করেছে। তবে সে সময় ইসরাইলের সেনাবাহিনী বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে দাবি করে, তারা গাজায় সাদা ফসফরাসযুক্ত অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে অবগত নয়। তবে লেবাননে এই অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনী কোনো মন্তব্য করেনি। এরপর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল; অক্টোবরে দক্ষিণ লেবাননে ফসফরাস ব্যবহার করে ইসরাইল সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ করেছে। পরে ওয়াশিংটন পোস্টের অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই হামলায় ব্যবহৃত ফসফরাস শেলগুলো যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি।

আলোকচিত্রী রামিজ দাল্লা ডেমোক্র্যাসি নাউকে বলেন, আমাদের গ্রামসহ দক্ষিণ থেকে কেউ কিছু কিনতে আসছে তারা। তারা ভীত যে, যে কোনো সময় সাদা ফসফরাসের আক্রমণ হতে পারে। 

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে লেবানন এবং গাজা উভয় ক্ষেত্রেই ইসরাইলি বাহিনীর দ্বারা সাদা ফসফরাসের ব্যবহার নথিভুক্ত করেছে অধিকার গোষ্ঠীগুলো। ইসরাইল কয়েক দশক ধরে বেসামরিক এবং কৃষি জমিতে সাদা ফসফরাস ব্যবহার করেছে। সম্প্রতি গাজায় কৃষিজমি ধ্বংস করার এবং গণহত্যার স্বার্থে ভূমিকে দূষিত এবং অনুর্বর করার জন্য একটি সমন্বিত প্রচেষ্টা বাড়িয়েছে জায়নবাদীরা।

বোস্তানের মেয়র হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, সংঘাত শুরুর আগে সেখানে ৯০০ মানুষ ছিল। সবাই পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। থেকে গেছে কেবল ৪ জন। মানবাধিকার গোষ্ঠীর বিশ্লেষিত তথ্য বলছে, ফসফরাস আক্রমণ অনেককে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল। অন্যান্য শহর, যেমন কাফর কিলার মানুষ, একইভাবে সাদা ফসফরাস আক্রমণের পরে ব্যাপকভাবে দেশত্যাগের শিকার হয়েছে। 

সাদা ফসফরাস প্রায়ই যুদ্ধে একটি ধোঁয়া পর্দা তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। যাইহোক, এমন ধোঁয়ার পর্দা তৈরির অন্য উপায়ও রয়েছে যা সাদা ফসফরাসের মতো বিপজ্জনক নয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ লেবাননের গবেষক রামজি কাইস এক বিবৃতিতে বলেছেন, জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে ইসরাইলের সাদা ফসফরাস যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার নির্বিচারে বেসামরিকদের ক্ষতি করেছে এবং অনেককে তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করেছে। ইসরাইল বাহিনীর অবিলম্বে জনবহুল এলাকায় সাদা ফসফরাস অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করা উচিত, বিশেষ করে যখন কম ক্ষতিকারক বিকল্প সহজলভ্য।

ইসরাইলকে তার সাদা ফসফরাস ব্যবহার সীমিত করার আহ্বান এসেছে যখন ইসরাইল লেবানন এবং হিজবুল্লাহ বাহিনীর ওপর আক্রমণ বাড়ানোর জন্য প্রস্তুত বলে মনে হচ্ছে। ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এই সপ্তাহে যুদ্ধ এবং হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়েছেন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক রামজি কাইস বিকল্প ধারার সংবাদমাধ্যম ডেমোক্র্যাসি নাউকে বলছেন, জনাকীর্ণ স্থানে সাদা ফসফরাসে ব্যবহার আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এতে ‘হাড় পর্যন্ত পুড়ে যেতে পারে এবং সারাজীবন কষ্ট পেতে হতে পারে। এর ব্যাপক ব্যবহার বেসামরিক নাগরিকদের মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে এবং বাস্তুচ্যুতিতেও ভূমিকা রাখছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 





https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close