ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

পুঠিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিই যেনো একটি রোগী!
মেলে না সেবা, অ্যাম্বুলেন্স না চললেও তেলের বাকি ৭ লাখ
প্রকাশ: শনিবার, ৮ জুন, ২০২৪, ৭:৫৮ পিএম আপডেট: ০৮.০৬.২০২৪ ৮:০১ পিএম  (ভিজিট : ৬৩১)
রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নানা অনিয়মে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। ঠিক মতো মেলে না ঔষধ ও জরুরি সেবা। হাসপাতালের কর্তব্যরত ব্যক্তিরা রোগীদের প্রতি ব্যাপক উদাসীন। চিকিৎসার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ডাক্তাররা দালাল চক্র ও ঔষধ কোম্পানির লোকের সাথে সময় কাটান। এর কারণে অতিষ্ঠ রোগীর স্বজনরা। আর সব কিছুতেই লিখিত অভিযোগ ছাড়া তদন্ত বা ব্যবস্থা নেন না হাসপাতালটির কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে হওয়ায় ও যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো থাকায় প্রতিনিয়ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে দুর্ঘটনাসহ ঔষধসহ নানান রকম রোগী সেবা নিতে আসেন। হাসপাতালটিতে দুর্ঘটনায় আহত রোগীরা অ্যাম্বুলেন্সের জরুরি সেবা না পাওয়ারও উঠেছে অভিযোগ। 

পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি রোগীদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও, সেই এম্বুলেন্সে রোগী বহন করা হয় না। পাশাপাশি ওই হাসপাতালটিতে খাবারের মান খুবই নিম্ন খুবই নিম্নমানের বলে একাধিক রোগী ও রোগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন।

উপজেলাটিতে মোট ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র রয়েছে ৫টি। শিবপুর, ভালুকগাছি, পচামাড়িয়া (শিলমাড়িয়া), গোপালপাড়া, দাসমাড়িয়া এসব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র গুলোর অবস্থা আরও বেশি করুণ। সেখানে রোগীরা ঠিকমতো প্রাথমিক চিকিৎসা ও ঔষধ পায় না। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র গুলো যেন এক প্রকার বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন সেখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র গুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নেই। সেখানে সেবা নিতে না গিয়ে উল্টো বাহিরে সেবা গ্রহণ করছেন টাকার বিনিময়ে। এসব স্বাস্থ্য উপকেন্দ্র গুলোর সবগুলোর অবস্থা নাজুক। সরকারি অর্থ যেন জলে ফেলার মত। কর্মরত ডাক্তার নার্সদের বললে তারা নানান বাহানা দিয়ে বলেন আজ এখানে মিটিং কাল ওখানে কাজ ছিল বলে কাটিয়ে দেয়।

পাশাপাশি কাটাখালী এলাকার একটি তেল পাম্পে প্রায় ৭ লাখ টাকার মত তেলের বাকি আছে বলেও জানা গেছে। মে মাসে হওয়া ঘূর্ণিঝড় রিমালের কবলে পড়ে দুই ব্যক্তি গুরুত্বর আহত হয়ে চিকিৎসা নিতে গেলে হাসপাতাল থেকে যে অ্যাম্বুলেন্সটি রয়েছে সেটির তেল নাই বলে গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে ওই রোগী বাহিরে থেকে একটি মাইক্রো ভাড়া করে রাজশাহীতে চিকিৎসার জন্য যান। উপজেলার ওই গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নিজেই যেন একটি রোগী। সেবা গ্রহীতারা অযত্ন-অবহেলা আর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশেই নেন সেবা। মূলত সেখানে অতি দরিদ্র মানুষেরা সেবা নিতে এসে পড়েন চরম বিড়ম্বনা আর অসহায়ত্বের মধ্যে। সেখানে কর্মরত ব্যক্তিদের স্বভাব একপ্রকার মাস্তানদের মত। প্রতিমাসে ঠিকমত বেতন ভাতা পেলেও সেবার দিকে যেন লক্ষ্য নাই কারো।

হাসপাতালটির শিশু ওয়ার্ডের অবস্থা আরও করুন। ডায়রিয়া বা অন্য কোন সমস্যা নিয়ে শিশু ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হলে লোডশেডিং এর সময় থাকেনা কোনো ফ্যান ঘোরার ব্যবস্থা। গরমে থাকতে না পেরে পালিয়ে যান অনেক রোগী ও তার স্বজনরা। এতে করে রোগীরা আরও সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। জেনারেটর থাকলেও তা দিয়ে ফ্যান চলতে দেখা যায় না। এছাড়াও হাসপাতালটিতে অনেক রকমের ওষুধের বরাদ্দ থাকে প্রতিদিন, অথচ ২ থেকে ৫ রকমের ঔষধ হাসপাতাল থেকে নিতে ঘাম ঝরে যায় সেবা গ্রহীতাদের। মাঝে মাঝে দেখা যায় হাসপাতালটিতে ভর্তি বা ওষুধ নিতে যে সিরিয়ালের টোকেন দেয়া হয় সেখানেও টোকেন দিয়ে আদায় করা হয় অতিরিক্ত অর্থ। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে বাঁধে ঝামেলা আর দেওয়া হয় হুমকি ধামকি। এছাড়াও সাংবাদিকদের জন্য তৈরি করে দেওয়া আছে নিয়ম-নীতি। সেখানে ঢুকতে গেলে বা কোন তথ্য চাইতে গেলে আগে থেকেই দিয়ে রাখতে হবে নানান রকম কাগজপত্র। তারপর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে সাংবাদিকরা। এসবের কারণ হিসেবে সাধারণ মানুষরা মনে করছেন, সাংবাদিকরা হাসপাতালটিতে অগাধ চলাফেরা করলে অনিয়মগুলো যেন প্রকাশ হয়ে যায়।

এবছরের ঘূর্ণিঝড় রিমালের কবলে পড়ে গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে আহত হয়ে সেবা নিতে যায় পুঠিয়া উপজেলা দুর্নীতি বিরোধী কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার মাস্টার। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে সেখানে তাকে বলা হয় অ্যাম্বুলেন্সের তেল নেই, তাই অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। বলে তাড়িয়ে দেয়। পরে তখন থেকে এখন পর্যন্ত ওই রোগী রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পাশাপাশি ওই ব্যক্তি বলেন, আমি হাসপাতালে গিয়ে সেবা না পেয়ে ফেরত এসেছি। এই ধরনের হাসপাতাল থাকার চেয়ে, না থাকাই ভালো।

ওই বিষয়ে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক আ. হান্নান বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে আমি বাকী করে একটি ব্যাটারি কিনেছি। আগের দিনে ৫ থেকে ৭টা রোগী বহন করতাম আর এখন পুরো সপ্তাহ জুড়ে খুব কষ্ট করে দুই থেকে তিনজন রোগী বহন করি। এম্বুলেন্সের ব্যাটারি ও তেল না থাকায় রোগী বহন করা অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস বন্ধ ছিল। 

এ ব্যাপারে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হাসান শাওন বলেন, ব্যাটারিটা বড় সমস্যা নয়, সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তেল। এম্বুলেন্সের তেল বরাদ্দ না থাকলে আমরা অ্যাম্বুলেন্স চালাতে পারি না। মাঝেমধ্যে মেডিকেলে জরুরি অপারেশন হয় বিদ্যুতের উপর নির্ভর করে যদি বিদ্যুৎ চলে যায় তাহলে সে রোগের জীবন নাশের সম্ভাবনা থাকে। যার ফলে অন্যান্য তেল না থাকলে আমরা শিশু ওয়ার্ডের সেভাবে বিদ্যুৎ না থাকলে জেনারেটর দিয়ে লাইট ও ফ্যান চালাতে পারি না। কারণ তেলের বাজেট খুবই সীমিত। মেডিকেলে দালাল আছে তবে সেগুলো স্থানীয় মানুষেরা সহায়তা করলে সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব হবে। আমরা বলে দিয়েছি কোথাও অনিয়ম হলে আমাদেরকে জানাতে। জাতীয় পরিচয় পত্রটি (এনআইডি) না দিলে সেবা দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। চেষ্টা করছি মেডিকেলের জন্য ভালো কিছু করার। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ডা. আবু সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক (সিভিল সার্জন রাজশাহী) বলেন, অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। এই ধরনের কোন ঘটনা ঘটে থাকলে আমি যথাযথ আইনানুগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে তেলের কিছু টাকা বাকী থাকতে পারে। কিছুদিন পরে এটা ঠিক হয়ে যাবে।

সময়ের আলো/আরআই 


আরও সংবাদ   বিষয়:  অনিয়মে জর্জরিত হাসপাতাল   পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স  




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close