ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস
গাছ কমছে, তাপদাহে পুড়ছে দেশ
প্রকাশ: বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪, ৬:৫৬ এএম আপডেট: ০৫.০৬.২০২৪ ৭:৫২ এএম  (ভিজিট : ৩৩৬)
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। এর মধ্যে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে, সেটি গাছ। কাজে-অকাজে যখন-তখন গাছ কাটার ফলে পরিবেশ দিন দিন তপ্ত হয়ে উঠছে। দুই দশকে দেশে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমেছে ৬ লাখ একর। এই বিশাল এলাকার গাছগাছালি ধ্বংস না হলে অন্তত ৭৫ মেগাটন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ ঠেকানো যেত। একটি দেশের পরিবেশ-প্রকৃতি ঠিক রাখতে অন্তত ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার হলেও দেশের মোট আয়তনের ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ এলাকায় বনভূমি রয়েছে বলে জানিয়েছেন খোদ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী। 

পরিবেশবিদরা বলছেন, লম্বা সময় ধরে গাছ কাটা ও বন উজাড়ের ফল এখন ভোগ করতে শুরু করেছে দেশের মানুষ। তীব্র গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠছে। ঢাকা শহরের তাপমাত্রা অসহনীয় রকমভাবে বাড়ছে। এর অন্যতম কারণও গাছগাছালি না থাকা। এ পটভূমিতে প্রতি বছরের মতো আজ বুধবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘করবো ভূমি পুনরুদ্ধার, রুখবো মরুময়তা; অর্জন করতে হবে মোদের খরা সহনশীলতা’। দিবসে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার দিবসটি উপলক্ষে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে ৫ জুন থেকে ১১ জুন পর্যন্ত পরিবেশ মেলা চলবে। বৃক্ষমেলা চলবে ৫ জুলাই থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন ২০২৩ ও ২০২৪, জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২৩, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ২০২২ ও ২০২৩ এবং সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের মাঝে লভ্যাংশের চেক বিতরণ করা হবে। সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ইটভাটায় টপ সয়েলের ব্যবহার কমাতে সরকারি নির্মাণকাজে ইটের পরিবর্তে ব্লক ব্যবহারের রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। জবরদখলকৃত বনভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ বছর বর্ষা মৌসুমে সারা দেশে ৮ কোটি ৩৩ লাখ ২৭ হাজার চারা রোপণ করা হবে। 

এ বছর সবচেয়ে বেশি লম্বা সময় ধরে তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ-যার শুরু ৩১ মার্চ। এর মধ্যে গত ৩০ এপ্রিল দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় এবং মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

এপ্রিল মাসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন্সিং অ্যান্ড জিআইএসের এক গবেষণা সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ঢাকার ২০ শতাংশ স্থানে গাছপালা থাকা দরকার হলেও আছে মাত্র ২ শতাংশে। তুলনামূলক এক চিত্রে দেখা গেছে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ শতাংশ এলাকায় গাছপালা ও ২২ শতাংশে জলাভূমি আছে। এ কারণে একই সময় ঢাকার চেয়ে সেখানকার তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম থাকে। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রমনা পার্ক এলাকার তুলনায় ঢাকার বাণিজ্যিক এলাকায় তাপমাত্রা থাকে ২ ডিগ্রি বেশি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আওতাধীন এলাকায় ২০১৭ সালে গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৪ সালে সেটি হয়েছে ৩৭ দশমিক ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। 

অন্যদিকে ২০১৭ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় গড় তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০২৪ সালে এসে বেড়ে হয়েছে ৩৬ দশমিক ৫৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, এর আগে ২০১৪ সালে ৫-৩০ এপ্রিল টানা ২৬ দিন, ২০১৬ সালে ছিল ৬-৩০ এপ্রিল ২৫ দিন। ২০২৩ সালে ১৩ এপ্রিল থেকে ৫ মে ২৩ দিন তাপপ্রবাহ ছিল।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট পরিচালিত প্ল্যাটফর্ম গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সময়ে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা সবচেয়ে বেশি কমেছে চট্টগ্রামে; ৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৭০ একর, যা মোট কমে যাওয়া বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার ৯৪ শতাংশ; এরপর যথাক্রমে আছে সিলেট, সেখানে কমেছে ২০ হাজার ৬৭৪ একর, ১৩ হাজার ৯৮০ একর, রংপুরে কমেছে ১ হাজার ১৯০ একর, রাজশাহীতে ৭৯৮ একর, খুলনায় ৫০১ একর, বরিশালে কমেছে প্রায় ২৪৫ একর। গত ২০ বছরে চট্টগ্রাম অঞ্চল যে পরিমাণ বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা হারিয়েছে, তার ৭৬ শতাংশই বান্দরবান ও রাঙামাটিতে। এই সময়ে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা সবচেয়ে বেশি উজাড় হয়েছে বান্দরবানে ২ লাখ ৯ হাজার ৭৯২ একর। এ ছাড়া রাঙামাটিতে প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬১০ একর, খাগড়াছড়িতে ৬০ হাজার ৫৪১ একর, চট্টগ্রামে ২৩ হাজার ১০৪ একর ও কক্সবাজারে ২২ হাজার ৭৮৩ একর বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা ধ্বংস হয়েছে।

বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা বা বনভূমি কমে যাওয়ার পেছনে যেমন অপরিকল্পিত নগরায়ণ দায়ী, তেমনই দায় আছে জল, বায়ু ও মাটিদূষণ এবং নদী ভাঙনসহ নানা প্রাকৃতিক কারণ। যে হারে গাছ কমছে, সে হারে গাছ লাগানো হয় না। এটিও বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। আবার লাগানো হলেও পর্যাপ্ত পরিচর্যার অভাবে অনেক গাছই মরে যায়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনিরুজ্জামান বলেন, যেকোনো দেশের মোট ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকতে হয়। বাংলাদেশে তা নেই। এর মধ্যে প্রতি বছরই বন উজাড় হচ্ছে। বনের জমিতে কোনোভাবেই স্থাপনা গড়ে তোলা যাবে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছপালার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সামাজিক বনায়নে আরও উৎসাহের পাশাপাশি বনভূমি রক্ষায় সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close