ই-পেপার সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪
সোমবার ৭ অক্টোবর ২০২৪

ম্যাজিক ম্লান
এবার মোদির জোট সরকার!
প্রকাশ: বুধবার, ৫ জুন, ২০২৪, ১:৪৩ এএম আপডেট: ০৫.০৬.২০২৪ ৭:৪৯ এএম  (ভিজিট : ৩৫৭)
ভারতের এবারের লোকসভা ভোটের দৌড়ে ছিল মূলত দুটি গোষ্ঠী বা জোট। একদিকে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ। অন্যদিকে কংগ্রেস, তৃণমূল, বামসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির যৌথমঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স)।

গতকাল বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে পাওয়া সবশেষ ফল বলছে, শেষ পর্যন্ত বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোটকে হারাতে না পারলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দলের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের সম্ভাবনায় ইতি টেনেছে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া। বুথফেরত জরিপকে ভুল প্রমাণ করে অসামান্য ফল করেছে বিরোধীরা। তারা কথিত মোদি ম্যাজিককে ম্লান করে দিতে সমর্থ হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, মোদির মুসলিম বিদ্বেষী বিভাজনের রাজনীতি এবার হোঁচট খেয়েছে। কৃষক আন্দোলনও ভূমিকা রেখেছে তাদের আসন কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে। আর বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি এ ক্ষেত্রে ছিল নির্ধারকের ভূমিকায়। 

ভোটের ফল প্রকাশের এক পর্যায়ে মোদি বলেছেন, তৃতীয়বারের মতো এনডিএতে আস্থা রেখেছে জনগণ। আর কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ভোটাররা জানিয়ে দিয়েছেন তারা আর মোদিকে চান না। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সেখানে জোট সরকার গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। 

সবশেষ পাওয়া ফল : গতকাল ভারতের স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টায় সে দেশের নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সব শেষ তথ্য বলছে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট মোট ২৮৬টি আসন নিশ্চিত করতে চলেছে। এর মধ্যে তারা জয়ী হয়েছে ২০৯টিতে। আর এগিয়ে ছিল ৭৭টিতে। আর বিরোধী ইন্ডিয়া জোট নিশ্চিত করেছে ২০১টি আসন। এর মধ্যে ১৩৫টিতে জয়ী হয়েছে তারা। আর এগিয়ে ছিল ৬৬টিতে। দ্য হিন্দু তৃণমূল কংগ্রেসকে ইন্ডিয়া জোটের বাইরে রেখে হিসাব কষেছে। তাদের নিশ্চিত করা আসন ২৯। সেটি যোগ করলে ইন্ডিয়া জোটের আসন দাঁড়ায় ২৩০টি। এই দুই জোটের বাইরে অন্যদের নিশ্চিত করা আসনের সংখ্যা ৫৬। 

জোট গঠনে তৎপরতা : ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এখন জোট সরকার গঠনে তৎপরতা চলছে। বিরোধীরা চেষ্টা করছে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট থেকে লোকজন টানার। বিপরীতে ক্ষমতাসীনরাও জোট সংহত রাখার চেষ্টায় রয়েছেন। আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, ভোটের ফল এবং প্রবণতা বলছে বিজেপি এককভাবে আসনসংখ্যা ২৪০-এর আশপাশে হতে চলেছে। ৫৪৫ আসনের (দুটি মনোনীত আসনসহ) লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ২৭৩টি। অর্থাৎ কেন্দ্রে সরকার গড়ার জন্য টিম মোদিকে নির্ভর করতে হবে এনডিএর দুই শরিক চন্দ্রবাবু নায়ডুর তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি) এবং নীতীশ কুমারের জেডিইউর ওপর। এরই মধ্যে সূত্রের বরাতে আনন্দবাজার পত্রিকা ও হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, এনসিপি (এস) প্রধান শরদ পওয়ার ‘ইন্ডিয়া’য় কলেবর বাড়াতে সক্রিয় হয়েছেন। এনডিএর বেশ কয়েকজন শরিক নেতার সঙ্গেও তার মঙ্গলবার ‘যোগাযোগ’ হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে মমতাও আশাপ্রকাশ করেছেন, আরও কিছু দল অদূর ভবিষ্যতে ‘ইন্ডিয়া’য় শামিল হবে।

এবার ‘ইন্ডিয়া’র শরিক দলগুলোর মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই সম্পূর্ণ বা আংশিক আসন সমঝোতা হয়েছিল। বাংলায় তৃণমূল, কেরালায় বাম, পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি (আপ), জম্মু ও কাশ্মিরে পিডিপির মতো কেউ আবার কংগ্রেসের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। ভোটের পর জোটের প্রতিশ্রুতিতে নিজেদের রাজ্যে আলাদা করে লড়েছেন। ২০২৩ সালের ২৩ জুন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জেডিইউ প্রধান নীতীশ কুমারের ডাকে পটনার বিরোধী জোটের বৈঠকে ১৫টি দল ছিল। জুলাইয়ে বেঙ্গালুরুতে সেই তালিকা বেড়ে হয় ২৬। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে নীতীশ সদলবলে ফিরে গিয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএতে। মার্চে বিজেপির সহযোগী হয়েছিলেন চন্দ্রবাবু।

সময়ের আলোর কলকাতা প্রতিনিধি মুকুল বসু সূত্রের বরাতে জানিয়েছেন, শারদ পাওয়ারের তরফে ফোন করা হয়েছে নীতীশ কুমার ও টিডিপি প্রধান চন্দ্রবাবুকে। নবীন পট্টনায়ককেও ফোন করা হয়েছে বলে খবর মিলেছে। যদিও পরে শারদ পাওয়ার জানান, তিনি ফোন করেননি। কারও সঙ্গে কথা হয়নি তার। এর মধ্যে জেডিইউ নেতা কেসি ত্যাগীর বক্তব্য সামনে এসেছে। তিনি জানিয়েছেন, বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর সঙ্গেই থাকবেন। এনডিএতেই থাকবেন নীতীশ কুমার। প্রাথমিক ট্রেন্ড অনুযায়ী, বিহারে এবার জেডিইউ পেয়েছে ১৪ আসন। সুতরাং বিজেপির সরকার গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবার নীতীশ কুমার।

মোদি-রাহুলের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য : ভারতের লোকসভা নির্বাচনে টানা তৃতীয়বার জয়ী হওয়ার দাবি করে জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার রাতে লোকসভা নির্বাচনে টানা তৃতীয়বার জয়ী হওয়ার দাবি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ‘মানুষ তৃতীয়বারের মতো এনডিএর প্রতি আস্থা রেখেছেন। এটা ভারতের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক কীর্তি। আমি জনতাকে নতমস্তকে এই ভালোবাসার জন্য প্রণাম করছি। আমরা নিশ্চিত করছি গত এক দশক ধরে যে কাজ করে এসেছি তা চালিয়ে নিয়ে যাব। সব কর্মকর্তাকে স্যালুট করছি তাদের কঠিন পরিশ্রমের জন্য। আপনারা যে প্রচেষ্টা চালিয়েছেন তার জন্য কোনো শব্দই যথেষ্ট নয়।’

এদিকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে দিল্লিতে কংগ্রেসের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচন কেবল একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে লড়াই ছিল না, নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছিলেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীকেও কারাগারে পুরেছে। জনগণ ব্যবসায়ী গৌতম আদানির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ককে এক করে দেখেছে মন্তব্য করে রাহুল গান্ধী বলেন, এটা দুর্নীতির সরাসরি সম্পর্ক। ভোটাররা মোদিকে বলে দিয়েছেন, তারা আর তাকে চান না।

বিভাজনের রাজনীতি প্রত্যাখ্যান : ‘ভারতে সম্ভবত একটি এনডিএ সরকার হতে যাচ্ছে, যেখানে বিজেপির নিজস্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকছে না। এতে বাস্তবতা পাবে জোট রাজনীতি,’ আলজাজিরাকে বলেছেন লোকনীতি নেটওয়ার্কের জাতীয় সমন্বয়কারী সন্দীপ শাস্ত্রী। 

বিশ্লেষকরা আলজাজিরাকে বলেছেন, নির্বাচনের রায় বিজেপির কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সমালোচনা করেছেন মোদির মেরুকরণের রাজনীতির। বিজেপি ধোঁয়া তুলেছিল দেশের সম্পদ কংগ্রেস মুসলিমদের হাতে তুলে দেবে। অথচ উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং বেকারত্ব ছিল জনগণের মূল উদ্বেগ। সে কারণেই তারা বিভাজনের রাজনীতিকে যতটা পেরেছেন প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভারতের কৃষি সংকটের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকা তিনটি রাজ্য হরিয়ানা, রাজস্থান এবং পাঞ্জাবেও ভালো করেনি বিজেপি। 

এদিকে দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনের পরে, এটা মনে হচ্ছে যে মোদিকে গত এক দশকের যে কোনো সময় থেকে আরও শক্তিশালী এবং আরও জোরালো বিরোধীদের মুখোমুখি হতে হবে। নির্বাচনি ফল আরও ইঙ্গিত দেয় যে, কথিত ‘মোদি ঢেউ’ উচ্চ বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতির মতো সমস্যাগুলোর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যাই হোক, দলটির লক্ষ্য ছিল দুই-তৃতীয়াংশ সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এটি পেলেই তারা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান সংশোধন করার উদ্যোগ নিত। দ্য গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আপাতত সেই সংবিধান রক্ষা পেল।

এদিকে ইকোনমিক টাইমসের এক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, উচ্চ বেকারত্ব এবং মুদ্রাস্ফীতি বিজেপির আসন কমার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। তাদের মতে মঙ্গল সূত্র নিয়ে, মুসলিম রিজার্ভেশন নিয়ে, রাহুল ভালো করলে পাকিস্তান খুশি হবে জাতীয় বিভাজনমূলক বক্তব্য মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে।

সময়ের আলো/আরএস/ 




https://www.shomoyeralo.com/ad/1698385080Google-News-Update.jpg

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সৈয়দ শাহনেওয়াজ করিম, আমিন মোহাম্মদ মিডিয়া কমিউনিকেশন লিমিটেড এর পক্ষে প্রকাশক গাজী আহমেদ উল্লাহ
নাসির ট্রেড সেন্টার, ৮৯, বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়ক (সোনারগাঁও রোড), বাংলামোটর, ঢাকা।

ফোন : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৬৮-৭৪, ফ্যাক্স : +৮৮-০২-৯৬৩২৩৭৫ | ই-মেইল : shomoyeralo@gmail.com
close